উৎসবের মরসুমে বাড়িতে ধূপ-ধুনো? কোভিড আবহে ফল হতে পারে মারাত্মক

দীপাবলিতে বাজির ধোঁয়াই বিষ, নানা ফোরামে বার বার এ কথা বলে বাজি নিষিদ্ধ করার আর্জি জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। বায়ুদূষণ তো বটেই, করোনা পরিস্থিতিতে ফুসফুসের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক হতে পারে এই ধোঁয়া- এমনটাও বলছেন তাঁরা। এ তো গেল বাইরের দূষণ। কিন্তু ঘরের? পুজোর মরসুমে ঘরে ধূপ-ধুনোর চলটা যে আরও একটু বেশি। ধূপ-ধুনোর সেই ধোঁয়াও কিন্তু বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে কোভিড আবহে।

কোভিড-১৯ সংক্রমণের এক মারাত্মক উপসর্গ শ্বাসকষ্ট। এ কারণে কত অল্পবয়সি মানুষ অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন, তার ঠিক নেই। তবে এ কথাও ঠিক শুধু অতিমারি সৃষ্টিকারী ভাইরাস ছাড়াও নানা কারণে রেসপিরেটরি এমার্জেন্সি হতে পারে।

পুজোর সময়ে বিশেষত আরতি জাতীয় কাজে ধূপের ব্যবহার, ধুনুচি নাচ ইত্যাদি অপরিহার্য হয়ে ওঠে। কিন্তু এই ধোঁয়াও বাজির ধোঁয়ার মতোই ক্ষতিকারক। শুধু তাই নয়, করোনা থেকে সেরে ওঠা রোগী, বয়স্ক মানুষ, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিরা বা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এ জাতীয় ধোঁয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে।

করোনা থেকে সেরে উঠেছেন, এ রকম বেশির ভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই ফুসফুসে প্রভাব পড়েছে। তাই যে কোনও রকম ধোঁয়া থেকে তাঁদের দূরে থাকতে হবে বলে জানালেন জনস্বাস্থ্য চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী। ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) বা ফুসফুসের রোগ, হাঁপানির সমস্যা রয়েছে, এমন ব্যক্তিদেরও ধূপ-ধুনোর ধোঁয়া থেকে দূরে থাকতে বলছেন সুবর্ণ। তাঁর কথায়,’’ ইন্ডোর পলিউশনের অন্যতম অংশ হল ধূপ-ধুনোর ধোঁয়া। করোনা আবহে বা সাধারণ সময়েও এ জাতীয় ধোঁয়া থেকে দূরে থাকতেই হবে।’’

  • যাঁদের ক্রনিক ফুসফুসের অসুখ আছে, তাঁদের অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোমের (এআরডিএস)-এর ঝুঁকি খুব বেশি। ডেঙ্গি বা ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া হলেও ফুসফুসের সূক্ষ্ম রক্তজালিকা থেকে তরল নিঃসৃত হয়ে ফুসফুসের বাতাসভর্তি ছোট্ট থলি অ্যালভিওলাইতে গিয়ে জমে যায়। ফলে শ্বাসপ্রশ্বাসের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। এমন কোনও রোগী বাড়িতে থাকলে কোনও ভাবেই ধূপ-ধুনো জ্বালানো যাবে না। সুগন্ধী নানা মোমবাতিও উৎসবের আবহে বিক্রি হচ্ছে। সেগুলিও ব্যবহার না করাই ভাল।
  • চেস্ট ফিজিশিয়ান সৌম্য দাসের মত, ‘‘এ দেশ উন্নয়নশীল দেশ। এখানে সিওপিডি-র মতো রোগের ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই বায়ুদূষণ এবং ইন্ডোর পলিউশন বা ঘরের ভিতরের দূষণ দায়ী। তাই করোনা আবহে, বিশেষ করে বাড়িতে যে কোনও ধোঁয়াই বিষের চেয়েও বেশি ক্ষতিকারক বললে ভুল হবে না। তাই এ জাতীয় যে কোনও ধোঁয়াই ফুসফুসের জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক হতে পারে।’’
  • সৌম্য জানান, এ জাতীয় ধোঁয়া শুধুমাত্র করোনা রোগী বা করোনা থেকে সেরে ওঠা রোগীর জন্যই নয়, যে কারও ফুসফুসের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। বাজি পোড়ানো তো যাবেই না। একইসঙ্গে ধূপ-ধুনো জ্বালিয়ে ক্ষতি যাতে না হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.