হার্ড ইমিউনিটি (Herd immunity) তৈরি হলেও সমস্ত ঋতুতে ঘুরে ফিরে আসবে করোনা (Corona Virus)। এমনই উদ্বেগের কথা শোনাচ্ছেন লেবাননের বিজ্ঞানীরা। ভ্যাকসিন বাজারে আশা পর্যন্ত আপাতত মারণ করোনার গ্রাস থেকে রক্ষা পেতে ভরসা সেই হার্ড ইমিউনিটি। ফ্রন্টেয়ার্স ইন পাবলিক হেলথ পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হলেই সংক্রমণে মাত্রা কমবে। তবে সারা বছরই ভাইরাল ফিভারের মতো করোনা হবে।
দেশের ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষ যদি কোনও রোগে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন, তবে দেশের বাকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রাকৃতিক ভাবেই সেই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ভাবা হয়েছিল এই ‘হার্ড ইমিউনিটি’ বা গোষ্ঠী প্রতিরোধ তত্ত্ব হয়ত করোনা অতিমারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কার্যকর হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুরে আমেরিকান ইউনিভারসিটি অফ বেইরুটের বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনা এখন চলে যাবে, তেমনটা ভাবলে ভুল হবে। বছর ঘুরলেও হার্ড ইমিউনিটি তৈরি করা কঠিন, এটাও সত্যি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “গোষ্ঠী সংক্রমণ রোধ করতে, অর্থাৎ গোষ্ঠী সুরক্ষা অর্জন করতে গেলে যত শতাংশ মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকতে হবে, তাকে ‘হার্ড ইমিউনিটি থ্রেসহোল্ড’ (এইচআইটি) বলে। বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে এই মান ৪০%-৯৫%। কোভিডের ক্ষেত্রে তা প্রায় ৭০%।” তাঁরা আরও জানাচ্ছেন, “ভারতের মতো দেশের কথা ভাবলে বলা ভাল, ভারতের জনসংখ্যার ক্ষেত্রে ৭০% মানে প্রায় ৯৭.৫ কোটি মানুষ। করোনার টিকা এখনও আসেনি। এই অবস্থায় ভ্যাকসিন ছাড়া হার্ড ইমিউনিটি চাইলে, এ দেশে ৯৭.৫ কোটি মানুষকে করোনায় ভুগে সুস্থ হতে হবে! সে তো ভয়ংকর প্রস্তাব!’’
৬০ হাজারের বেশি মানুষকে নিয়ে সম্প্রতি একটি সমীক্ষা করেছিল দ্য ল্যানসেটে। স্পেনের উপকূলীয় এলাকাগুলিতে অ্যান্টিবডি তৈরির হার এখনও তিন শতাংশের নিচে। অথচ হার্ড ইমিউনিটির তত্ত্ব অনুযায়ী, যে সব এলাকায় সংক্রমণের মাত্রা বেশি হবে সে সব জায়গায় মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরির হারও বেশি হবে। স্পেনের উপকূল এলাকাগুলিতে তা হলে হার্ড ইমিউনিটির তত্ত্ব খাটছে না কেন? গবেষকদের ব্যাখ্যা, স্পেনে কোভিড-১৯-এর প্রভাব মারাত্মক হলেও নির্দিষ্ট এলাকায় অনেক বেশি মানুষ একসঙ্গে সংক্রমিত হননি। ফলে হার্ড ইমিউনিটিও তৈরি হয়নি। আসলে হার্ড ইমিউনিটি বা গোষ্ঠী প্রতিরোধ তৈরি করতে হলে বহু মানুষের মৃত্যুকে মেনে নিতে হবে।