সরকারি অফিসে হাজিরা কমিয়ে ৫০ শতাংশ, সংক্রমণ রোধে কড়া হচ্ছে প্রশাসনও

গত অক্টোবরে করোনা রুখতে বঙ্গে যে-ধরনের ব্যবস্থা চালু ছিল, কার্যত সেটাই ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। তার অঙ্গ হিসেবে প্রথমেই সরকারি দফতরে হাজিরা কমিয়ে ৫০% করা হয়েছে। যে-সব জেলায় ভোট শেষ, সংক্রমণ রোধে সেখানে কড়া হতে বলা হয়েছে প্রশাসনকে। কলকাতা হাইকোর্টও জানিয়ে দিয়েছে, সামান্য উপসর্গ থাকলে সরাসরি সওয়ালে হাজির থাকতে পারবেন না কৌঁসুলিরা।

সংক্রমণ উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। অথচ মাস্ক পরার নিয়মও মানছেন না অনেকে। ১ এপ্রিল রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ যা ছিল, মাত্র আট দিনে তা দ্বিগুণ হয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সেন্ট্রাল মনিটরিং সিস্টেম চালু হচ্ছে। তাতে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সব করোনা রোগীর ভর্তি ও ছুটির সময়, রেফার, শারীরিক অবস্থার তথ্য রোজ আপলোড করা হবে। স্বাস্থ্য দফতর একটি নির্দেশিকায় সব মেডিক্যাল কলেজ এবং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের জানিয়েছে, কোভিড অ্যাম্বুল্যান্সে শুধু করোনা রোগী বহন করা হবে, প্রতিষেধক বা চিকিৎসা সরঞ্জাম নয়।

বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে কোভিড শয্যার সংখ্যা, অক্সিজেন ও অ্যাম্বুল্যান্সের সুবিধা-সহ সব কিছু আগের মতো রাখতে বলা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় জীবাণুনাশের ব্যবস্থা ফের চালু হবে। স্বাস্থ্য শিবির জানাচ্ছে, এ বার সেফ হোমের তেমন প্রয়োজন হবে না। ৪৫ বছরের বেশি বয়সিদের প্রতিষেধক দেওয়া শুরু হয়েছে। ফলে তাঁদের কোভিড হলেও তীব্রতা অনেক কম থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। স্কুল-কলেজ, সিনেমা হল, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার চিন্তাভাবনা এখনও শুরু হয়নি। স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, কেন্দ্র এ-সব বিষয়ে বিধি নির্দিষ্ট করে দিলে রাজ্য তা মানবে।


হাইকোর্ট জানিয়েছে, কোনও আইনজীবীর জ্বর-কাশির মতো উপসর্গ থাকলে তিনি সশরীরে হাজির হয়ে সওয়াল করতে পারবেন না। হলফনামায় সইসাবুদের কাজ না-থাকলে বা বিচারপতি তলব না-করলে মামলাকারীরাও আদালত-চত্বরে ঢুকতে পারবেন না। রেজিস্ট্রার জেনারেল প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের জারি করা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, নতুন নির্দেশ আগামী সোমবার থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বহাল থাকবে।

সব জেলায় আরটিপিসিআর পরীক্ষা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। বর্ধমানে প্রতিদিন ৮০০-র বদলে ১৪০০ পরীক্ষার পরিকল্পনা আছে। বর্ধমান মেডিক্যালে কোভিড শয্যা বেড়ে ২৫ হচ্ছে। ফের ১৫০টি সেফ হোম চালু হচ্ছে ওই জেলায়।

হাওড়ার বালিটিকুরি ও সত্যবালা আইডি কোভিড হাসপাতালে শয্যা বাড়ছে। হুগলিতে সংক্রমণ বেশি শ্রীরামপুর ও চন্দননগর মহকুমায়। মুর্শিদাবাদের স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বার সংক্রমণ বৃদ্ধির হার অনেক বেশি।

ভোটের পরে পুরুলিয়ায় করোনা পজ়িটিভের রেট ২.৬৫-তে পৌঁছেছে। সপ্তাহে দু’দিন প্রতিটি পঞ্চায়েতে প্রতিষেধক দেওয়ার শিবির হচ্ছে। সোমবার, প্রথম দিনের শিবিরে ২২ হাজার মানুষ প্রতিষেধক দেওয়া হয়। নির্বাচনের পরে বাঁকুড়ায় আক্রান্তের হার দাঁড়িয়েছে ১.১৯%। জেলার একমাত্র কোভিড হাসপাতাল ওন্দা সুপার স্পেশালিটিতেও রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বাঁকুড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শ্যামল সরেন বলেন, ‘‘মানুষের মধ্যে করোনা-সচেতনার অভাব আমাদের উদ্বেগে রেখেছে।’’ দুই ২৪ পরগনায় সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। আক্রান্তের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে উত্তর ২৪ পরগনা। মার্চের শুরুতে ওই জেলায় দৈনিক সংক্রমণ নেমে এসেছিল পঞ্চাশের আশেপাশে। এখন সেটা পাঁচশোর বেশি।

সব চেয়ে খারাপ পরিস্থিতি মালদহের। সেখানকার মেডিক্যাল কলেজের ভিআরডিএলে লালারসের নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণের হার প্রায় ৮%। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি এবং উত্তর দিনাজপুরেও সংক্রমণ বাড়ছে।

করোনা রুখতে রাজ্যে প্রতিষেধক দেওয়ার হার বাড়ানোর উপরেও জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। মঙ্গলবার পর্যন্ত বঙ্গে মোট ৬৯ লক্ষ ৭৫ হাজার জনকে প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে।

চিকিৎসকদের একাংশের প্রশ্ন, ‘‘মাস্ক খুলে, দূরত্ব-বিধি শিকেয় তুলে ভোটযুদ্ধের উন্মাদনা রাজ্যকে ফের তালাবন্ধের পথে নিয়ে যাবে না তো?’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.