মারণ করোনার ছোবলে বিধ্বস্ত গোটাদেশ। অনেকদিন আগেই বছরপূর্তি হয়েছে করোনার। তবুও অদৃশ্য এই শত্রুর দাপট থেকে মুক্তি অধরা। আর এই অবস্থায় ফের দেশজুড়ে তান্ডব চালাচ্ছে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ। অব্যাহত মৃত্যু মিছিল। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা। আর এই অবস্থায় প্রকট হয়েছে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অক্সিজেন ও অন্যান্য মেডিকেল সরঞ্জামের অভাব।
মানুষের প্রাণ বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন, ওষুধ সরবরাহ করে ভারতের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন দেশ৷ এবার প্রায় ১৫০০ টি অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে দেশের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান চেম্বারস অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি।
জানা গিয়েছে, ১৯২৭ সালে মহাত্মা গান্ধীর অনুপ্রেরণায় তৈরি ভারতীয় এই বৃহত্তম বেসরকারি বাণিজ্যিক সংস্থাটি দেশের এই কঠিন পরিস্থিতিতে অক্সিজেন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মেডিকেল সরঞ্জাম পৌঁছে দিতে তাঁদের জার্মান ভিত্তিক অংশীদার সমিতি বিভিএমডব্লুিউ জার্মান অ্যাসোসিয়েশন ফর স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম- সাইজ এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে হাত মিলিয়ে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় একযোগে কাজ করতে উদ্যোগী হয়েছে।
জানা গিয়েছে, দেশের করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই একযোগে অক্সিজেন, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র এবং মেডিকেল সরঞ্জাম পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দর থেকে এই সমস্ত ত্রাণ পরিবহন করা হচ্ছে। শীঘ্রই সেগুলি করোনা রোগীদের চিকিৎসায় সহায়তার জন্য সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পৌঁছে যাবে।
এই বিষয়ে বিভিএমডব্লুর প্রতিনিধি ড্যানিয়েল রাজা বলেন, “ভারতে বর্তমান করোনা সংকট এবং জাতীয় চিকিৎসার সরঞ্জামের বিশাল বৈশ্বিক চাহিদা বিবেচনা করে এই সমস্ত ত্রাণ সামগ্রী পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
শুধু তাই নয়, ২০১৬ সালে এফআইসিসিআই এবং বিভিএমডব্লু-য়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের পর থেকে ভারত ও জার্মানির মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ককে জোরদার করার জন্য বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদেশী সংস্থাগুলির সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন এবং বিদেশী বাজারে পা রাখার জন্য আগ্রহী ভারতীয় সংস্থাগুলির জন্য বিভিন্ন দেশে এফআইসিসিআই এর উপস্থিতি এবং কাজ গুরুত্বপূর্ণ।
উল্লেখ্য, কোনওভাবেই রাশ টানা যাচ্ছে না সংক্রমণে। মঙ্গলবারের রিপোর্ট অনুযায়ী করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমলেও বুধবারের রিপোর্টে কিন্তু সংক্রমণ অনেকটাই বাড়ল। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ লক্ষ ৬০ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩ হাজার। এই নিয়ে মৃতের সংখ্যা ২ লক্ষের সীমা অতিক্রম করল।
স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লক্ষ ৬০ হাজার ৯৬০ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ২৯৩ জনের। এই নিয়ে এখনও পর্যন্ত দেশে ১ কোটি ৭৯ লক্ষ ৯৭ হাজার ২৬৭ জন করোনায় আক্রান্ত হলেন। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লক্ষ ১ হাজার ১৮৭ জনে। অ্য়াক্টিভ মামলার সংখ্যা ২৯ লক্ষ ৭৮ হাজার ৭০৯। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন ২ লক্ষ ৬১ হাজার ১৬২ জন। এখনও পর্যন্ত মোট সুস্থতার সংখ্যা ১ কোটি ৪৮ লক্ষ ১৭ হাজার ৩৭১। করোনাকে ঠেকাতে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে টিকাকরণ প্রক্রিয়া। এখনও পর্যন্ত ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে দেশের ১৪ কোটি ৭৮ লক্ষ ২৭ হাজার ৩৬৭ জনকে।