স্বাস্থ্য, বয়স নির্বিশেষে সবাইকে নয়। করোনা টিকা (Covid Vaccine) দেওয়া হবে বাছাই করে। যেমন কাল, ১৬ জানুয়ারি শুরু হতে চলা করোনা (Corona Virus) টিকাকরণের আওতার বাইরে থাকবেন সন্তানসম্ভবা এবং স্তন্যদাত্রী মহিলারা। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক সব রাজ্যকে টিকাদানের নতুন প্রোটোকল পাঠিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সন্তানসম্ভবা ও স্তন্যদাত্রীদের পাশাপাশি টিকার বাইরে থাকবেন গুরুতর অসুস্থরাও। করোনা (COVID-19) চিকিৎসায় যাঁদের প্লাজমা থেরাপি অথবা মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি দেওয়া হয়েছে, তাঁদের সুস্থ হওয়ার পর ৪ থেকে ৮ সপ্তাহ টিকার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। উপসর্গযুক্ত সক্রিয় করোনারোগীদেরও টিকা দেওয়া যাবে না। যাঁদের বিভিন্ন ওষুধে অ্যালার্জি আছে তাঁদের ক্ষেত্রে সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে। ১৮ বছরের কম বয়সীরা আপাতত টিকা পাবে না। যাঁরা অন্য কোনও প্রতিষেধক গ্রহণ করেছেন তাঁরা ১৪ দিনের মধ্যে করোনার টিকা নিতে পারবেন না। যাঁরা অন্য কোনও অসুখে হাসপাতালে ভরতি হয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও সুস্থ হওয়ার পর টিকাদানের জন্য ৪ থেকে ৮ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, এইচআইভি বা ক্যানসার আক্রান্ত কিংবা অন্য ক্রনিক রোগে ভোগা রোগীদের টিকা নিতে সমস্যা নেই। কোমরবিডদেরও সমস্যা নেই।
কোভ্যাকসিন ও কোভিশিল্ডের কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, তাও স্বাস্থ্যমন্ত্রকের নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে। তাতে মাথাধরা, গা ব্যথা, বমি ভাব, জ্বর ইত্যাদি-সহ বহু উপসর্গ রয়েছে। কিছু প্রোটোকলের কথা বৃহস্পতিবার সরকারিভাবে জানিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, “পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কাতেই এই ধরনের সতর্কতামূলক সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।” উল্লেখ্য, কোভিশিল্ডের অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম থাকলেও সন্তানসম্ভবা এবং স্তন্য পান করানো মায়েদের উপর এই টিকার কী প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়ে বিশদ গবেষণা এখনও হয়নি। কাল, শনিবার রাজ্যজুড়ে প্রথম দিনের টিকাকরণ কর্মসূচি কেমন চলছে, নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ভিডিও মারফত তা নজরে রাখবেন।
বস্তুত কোভিড টিকা নিয়ে আমজনতার মনেও বিস্তর প্রশ্ন। ভ্যাকসিন কাজ করবে কিনা? সাইড এফেক্ট কী কী হতে পারে? ইত্যাদি হাজারও সংশয় রয়েছে। প্রথিতযশা চিকিৎসক এবং নার্সিং সুপারদের পাশাপাশি টিকার লাইনে হাসপাতালের সাফাইকর্মী, ট্রলিবাহক, অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের দাঁড় করিয়ে সংশয় দূর করার চিন্তা-ভাবনা চলছে। উদ্দেশ্য একটাই, এঁদের দেখে সাধারণ মানুষ যাতে ভরসা পান। যাবতীয় সংশয় আশঙ্কা উড়িয়ে প্রতিষেধকের বর্মে বলীয়ান হয়ে তাঁরাও টিকা নিতে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসেন। কলকাতায় আমরি, আর এন টেগোর এবং অ্যাপোলো হাসপাতাল ছাড়াও ২০৯টি সরকারি হাসপাতালে করোনার টিকা দেওয়া হবে। এক-একটি হাসপাতালে পাঁচটি বুথ খোলা হবে। দপ্তর সূত্রে খবর, এসএসকেএম এবং স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনে বুথের সংখ্যা ১০টি, কারণ ওখানে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যাও বেশি। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. অজয় চক্রবর্তী বলেন, “শনিবার সকাল ন’টায় টিকাকরণ শুরু হবে। চলবে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। অপেক্ষারত শেষ ব্যক্তিটিও টিকা পাবেন।”
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যসচিবসহ স্বাস্থ্য দপ্তরের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে অনলাইন বৈঠক হয় জেলা হাসপাতালগুলির। সেখানে প্রথম দিনের প্রস্তুতি নিয়ে শেষ পর্যায়ের আলোচনা হয়। আজ, শুক্রবার সব বুথে (কোল্ডচেন পয়েন্ট) একজন করে নোডাল মেডিক্যাল অফিসারকে ইউনিক লগইন আইডি দেওয়া হবে। শনিবার দুপুর ১২টা থেকে নবান্নের সঙ্গে এই আইডিতেই ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হবেন তাঁরা। সপ্তাহে সাতদিন নয়, টিকাকরণ হবে সপ্তাহে চারদিন। সোম-মঙ্গল-শুক্র ও শনিবার। মাঝের দিনগুলিতে ওই ক্যাম্পগুলিকে জীবাণুমুক্ত করা হবে। বৃহস্পতিবার কলকাতার সব সরকারি হাসপাতালে টিকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সমস্ত নোডাল অফিসারকে স্বাস্থ্যসচিব নির্দেশ দিয়েছেন, “ডোজ যেন কোনওভাবেই নষ্ট না হয়। ভায়াল সংগ্রহ করে রাখবেন নোডাল অফিসার। আচমকা কারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে ওই ভায়াল কাজে লাগবে।”