করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বহু মানুষ তাঁদের কোভিড-আক্রান্ত প্রিয়জনদের জন্য অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খেয়েছেন। কোভিডের কারণে হঠাৎ কী ভাবে মানুষের দেহের অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায় এবং তাঁর ফল কতটা মারাত্মক হতে পারে, তা আমাদের শিখিয়েছে দ্বিতীয় ঢেউ। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বহু রোগী যখন হাসপাতালে আসছেন, তাঁদের শারীরিক অবস্থা আদপে অনেকটাই খারাপ। তাঁদের অজান্তেই হয়তো এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা যতটা সন্দেহ করা হচ্ছে, তার চেয়ে অনেকটাই কম। এটাকেই বলা হচ্ছে ‘হ্যাপি হাইপক্সিয়া’।
হ্যাপি হাইপক্সিয়া কী
শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিকের (৯৪ শতাংশ) তুলনায় কমে গেলে সেটাকে হাইপক্সিয়া বলা হয়। কিন্তু অনেক সময় অজান্তেই অক্সিজেনের মাত্রা অনেকটা কমে যায়। যা মানুষ প্রথমে বুঝতে পারেন না। চিকিৎসকদের ভাষায় তাকেই বলা হয় ‘হ্যাপি হাইপক্সিয়া’। অনেক সময়ে কোভিডের কারণে ফুসফুস যে ভাবে প্রভাবিত হয়, তা প্রথমে ধরা পড়ে না। হয়তো জ্বর, কাশি, গায়ে ব্যথার মতো অন্য উপসর্গ নিয়েই মানুষ বেশি মাথা ঘামান। কিন্তু অক্সিজেনের অভাব ধীরে ধীরে মুখে, ঠোঁটে বোঝা যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে হয়তো বোঝা যায় না, যে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমার ফলে আরও ঘন ঘন শ্বাস নিতে হচ্ছে। আমরা যখন কোনও পাহাড়ি অঞ্চলে যাই, বাতাসে অক্সিজেন কম থাকার ফলে শরীর ধীরে ধীরে তার সঙ্গে মানিয়ে নেয়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়। যতই রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাক, শরীর তার সঙ্গে প্রথম দিকে মানিয়ে নেয়। অনেক পরে গিয়ে বোঝা যায় যে শরীরে কোনও রকম অসুবিধা হচ্ছে। কিন্তু ততক্ষণে শরীরের ভিতর অনেক রকম গুরুতর ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তখন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর প্রয়োজন প়ড়ে। এমনকী আইসিইউ কেয়ারেও রাখতে হতে পারে।
কী করে বুঝবেন কোনও পরিশ্রম ছাড়াই যদি হঠাৎ খুব ঘামতে থাকেন, কিংবা মুখ বা ঠোঁটের কোণ হঠাৎ নীলচে বা বেগুনি হয়ে যায়, তাহলে সতর্ক হতে হবে। এগুলো সবই অক্সিজেন কমে যাওয়ার লক্ষণ। তাড়াতাড়ি ধরা পড়লে সঠিক চিকিৎসায় এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।
কী ভাবে আটকাবেন
এই ধরনের পরিস্থিতি আটকানোর একটাই উপায়— সারাক্ষণ সজাগ থাকা। অত্যন্ত মৃদু উপসর্গ হলেও দ্রুত কোভিড পরীক্ষা করিয়ে নিন। রিপোর্টের অপেক্ষা না করে প্রথম থেকেই নিয়মিত পাল্স অক্সিমিটারে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা মেপে দেখুন। কিছু চিকিৎসক মনে করেন, মৃদু উপসর্গ থাকলে রোগীর ‘৬ মিনিট টেস্ট’ করা উচিত। মানে একবার অক্সিজেনের মাত্রা মেপে ৫-৬ মিনিট ঘরের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করুন। তারপর ফের একবার মাপুন। পাল্স অক্সিমিটার অনেক সময় ভুল রিডিং দেখায়। তাই আঙুল দিয়ে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে থেকে তারপর রিডিং নিন।