চলতি সপ্তাহেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) অনুমোদন পেয়ে যেতে পারে কোভ্যাক্সিন। সূত্র উদ্ধৃত করে এমনটাই জানাল সংবাদসংস্থা এএনআই। সেই অনুমোদন মিললেই কোভ্যাক্সিন রফতানি করতে পারবে ভারত বায়োটেক। পাশাপাশি কোভ্যাক্সিন প্রাপকদের বিদেশ যাত্রীও সহজ হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার থেকে জরুরি ভিত্তিতে আবেদনের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছে ভারত বায়োটেক। গত জুলাইয়ের গোড়ার দিকে বিশ্বের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথন জানিয়েছিলেন, চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে অনুমোদন পেতে পারে কোভ্যাক্সিন। তিনি বলেছিলেন, বলেন, ‘অনুমোদন পাওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে চলতে হয়। সুরক্ষাজনিত তথ্য, সম্পূর্ণ ট্রায়ালের তথ্য পেশ করতে হয় সংস্থাগুলিকে। এমনকী অনুমোদন পাওয়ার জন্য উৎপাদনের গুণমান সংক্রান্ত তথ্যও দিতে হয়। ইতিমধ্যে ভারত বায়োটেক (কোভ্যাক্সিনের প্রস্তুতকারক) তথ্য জমা দেওয়া শুরু করেছে। ডসিয়ার খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এরপর আমাদের কমিটি ভারত বায়োটেকের করোনাভাইরাস টিকার পর্যালোচনা করবে। অনুমোদন মিলবে কিনা, তা আগামী চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ সেইসঙ্গে তিনি জানিয়েছিলেন, কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের তথ্য দেখে ভালো মনে হচ্ছে। আপাতত বিশ্ব জনস্বাস্থ্য সংস্থাগুলির সুরক্ষার মাপকাঠিও পূরণ করেছে।
যদিও সেরকমটা হয়নি। সেই পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পাওয়ার জন্য কোভ্যাক্সিনের হয়ে তদ্বির করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডবিয়া। দেখা করেছিলেন বিশ্বের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের প্রধান বিজ্ঞানীর সঙ্গে। টুইকারে মান্ডবিয়া বলেছিলেন, ‘হু’র মুখ্য বিজ্ঞানী ডঃ সৌম্যা স্বামীনাথনের সঙ্গে একটি বৈঠক করলাম। ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিনের অনুমোদন নিয়ে আমাদের একটি ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, জুলাইয়ের গোড়ার দিকে তৃতীয় পর্যায়ের ক্নিনিকাল ট্রায়ালের চূড়ান্ত পরীক্ষায় ভারত বায়োটেক দাবি করেছে, উপসর্গযুক্ত রোগীর ক্ষেত্রে কোভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা ৭৭.৮ শতাংশ। আর গুরুতর অসুস্থতার ক্ষেত্রে ৯৩.৪ শতাংশ কার্যকরী কোভ্যাক্সিন। মেডরিক্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে জানানো হয়, ১৩০ জন উপসর্গ-যুক্ত করোনা আক্রান্তের উপর পরীক্ষা চালিয়ে কোভ্যাক্সিনের কার্যকারিতার প্রমাণ মিলেছে। করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কমপক্ষে দু’সপ্তাহ পরে তাঁদের উপর পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। দেশের ২৫ টি কেন্দ্রে চলছিল সেই পরীক্ষা। স্বেচ্ছাসেবকদের ২৪ জনকে টিকা প্রদান করা হয়েছিল। বাকিদের দেওয়া হয়েছিল প্লাসেবো। সেই পরীক্ষায় যাঁদের শারীরিক অসুস্থতা বেশি, তাঁদের ক্ষেত্রে ৯৩.৪ শতাংশ কার্যকরী হয়েছে কোভ্যাক্সিন। উপসর্গহীন করোনা আক্রান্তের ক্ষেত্রে আবার ভারত বায়োটেকের করোনা টিকার কার্যকারিতা ৬৩.৬ শতাংশ হয়েছে। বি.১.৬১৭.২ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে ৬৫.২ শতাংশ সুরক্ষার প্রমাণ মিলেছে। সঙ্গে কোভ্যাক্সিনের ট্রায়ালে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে, তা একেবারে নগণ্য বলে দাবি করা হয়েছে। সুরক্ষা তথ্যের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে, তা প্লাসেবোর মতোই। ১২ শতাংশ স্বেচ্ছাসেবকের ক্ষেত্রে সাধারণ পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। আর ০.৫ শতাংশের কম স্বেচ্ছাসেবকের গুরুতর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হয়েছিল।