শুধু শিশুরাই বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হবে তেমন নয়, করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও একই রকম বেশি। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য দফতরের বৈঠকে এমনই অভিমত জানান বিশেষজ্ঞ কমিটির চিকিৎসক সদস্যেরা। শুধু তাই নয়, সূত্রের খবর, করোনা বিধি না মানলে ও গণ পরিবহণ পুরো মাত্রায় চালু হলে অগস্টের শেষেই বঙ্গে তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য শিবির সূত্রের খবর, গত এপ্রিলের শেষ ও মে মাসে রাজ্যে করোনা আক্রান্তের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সে দেখা গিয়েছে, ৯৪টি নমুনার মধ্যে ৮৭টি মহারাষ্ট্রের স্ট্রেন।
তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় দশ জন চিকিৎসকের বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়েছে স্বাস্থ্য দফতর। শিশুদের চিকিৎসার জন্যও হয়েছে কমিটি। এ দিন দুই কমিটির সদস্যদের সঙ্গেই বৈঠক করেন স্বাস্থ্য কর্তারা। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘মহারাষ্ট্রে তৃতীয় ঢেউ কবে আসছে, সে দিকে নজর রাখতে হচ্ছে। কারণ, তার কয়েক সপ্তাহ পরেই বঙ্গেও তা শুরু হবে।’’ ইতিমধ্যে মহারাষ্ট্র, কর্নাটক ও মধ্যপ্রদেশে ‘ডেল্টা প্লাস’ স্ট্রেনের খোঁজ মিলছে। বঙ্গে এখনও তার হদিস মেলেনি। তবে রাজ্যে নতুন কোনও স্ট্রেন ঢুকেছে কি না সে বিষয়ে নজরদারি জোরদার করা হচ্ছে। সে জন্য কল্যাণীতে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্স’-এ যে সব নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করতে পাঠানো হচ্ছে, তার রিপোর্ট আরও দ্রুত পাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন কমিটির সদস্যরা। এখন রিপোর্ট আসতে ১৫ দিন সময় লাগছে।
স্বাস্থ্য শিবির সূত্রের খবর, প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে রাজ্যে শিশুদের আক্রান্তের হার তিন শতাংশ। তৃতীয় ঢেউয়ে তা সামান্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। করোনা আক্রান্ত শিশু এবং করোনা পরবর্তী সময়ে ‘মাল্টিসিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিন্ড্রোম ইন চিল্ড্রেন’ (এমআইএস-সি) এর চিকিৎসার জন্য বিশেষ ওষুধের তালিকা প্রস্তুত হয়েছে। আবার ১২ থেকে ১৮ বছর এই বয়সের কেউ আক্রান্ত হলে, তাকে হাসপাতালে রাখার বিষয়ে প্রাথমিক পরিকল্পনা হয়েছে। কিশোর হলে পুরুষ ওয়ার্ডে, বাবার সঙ্গে, কিশোরী হলে মহিলা ওয়ার্ডে, মায়ের সঙ্গে থাকবে। কিন্তু বাবা-মা ক্রিটিক্যাল ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত হলে পুরুষ ও মহিলা কোভিড যোদ্ধা বা স্বেচ্ছাসেবকের ব্যবস্থার পরিকল্পনাও হচ্ছে।
সূত্রের খবর, গ্রামে আরও বেশি করোনা পরীক্ষা, চিকিৎসা পরিকাঠামো ও প্রতিষেধক প্রদান বাড়ানোর প্রস্তাবও দিয়েছে কমিটি। স্টেরয়েডের যথাযথ ব্যবহার, অক্সিজেনের অপচয় বন্ধ করা, অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যু না হওয়ার দিকে নজর রাখা, তৃতীয় ঢেউয়ের পূর্বাভাস বুঝতে মহামারি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বৈঠকে। প্রতিটি জেলায় কোভিড রোগীর জন্য ডায়ালিসিস ইউনিট তৈরি রাখা, শহরে কোনও হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীর এমআরআই-র প্রয়োজন হলে তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা করানোর প্রস্তাবও উঠেছে বৈঠকে।