Black Fungus: ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কী এবং কেন

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে দেশ জুড়ে। এই ফাঙ্গাসের সংক্রমণ বাড়ছে বিভিন্ন প্রান্তে। প্রথমে মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, তেলেঙ্গানায় বেশি দেখা দিয়েছিল এই সংক্রমণ। ঘটেছে কয়েক হাজার মৃত্যু। পশ্চিমবঙ্গেও এ সংক্রান্ত কয়েকটি ঘটনার কথা জানা গিয়েছে। কোভিড থেকে সেরে ওঠার সময়ে বেশ কিছু রোগীকে নতুন ভাবে সংক্রমিত হতে দেখা গিয়েছে এই ছত্রাকের দ্বারা। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ এখন ছড়িয়েছে দেশ জুড়ে। এমন অপৎকালীন পরিস্থিতিতে এই অসুখও মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। করোনা রোগীদের মধ্যে এমন সংক্রমণের প্রবণতা বেশি দেখা দেওয়ায় চিকিৎসায় স্টেরয়েডের ব্যবহারে রাশ টানতে পরামর্শ দিয়েছেন অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এমস) কর্তৃপক্ষ। ফলে কী এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস, এমন পরিস্থিতিতে তা জেনে রাখা জরুরি।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কী?

করোনা রোগীদের শরীর ঘটছে এক প্রকার ছত্রাকের সংক্রমণ। তার নাম ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। চিকিৎসা পরিভাষায় এই রোগকে চিহ্নিত করা হচ্ছে মিউকোরমাইকোসিস নামে। শরীর দুর্বল হলে মূলত বাসা বাধে এই ছত্রাক। করোনা রোগীরা বেশি দিন আইসিইউ-তে থাকলে, কিংবা তাঁদের উপরে স্টেরয়েডের ব্যবহার বেশি হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এমন ক্ষেত্রে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ঢুকে পড়ছে শরীরে।


এই ছত্রাক করোনা রোগীদের মধ্যেই শুধু ছড়ায়, এমন নয়। কোনও মানুষের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে এই সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। করোনায় প্রতিরোধ শক্তি কমে যাচ্ছে। তার ফলে এমন রোগীদের শরীরে বেশি দেখা দিচ্ছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস।

এটি একটি বিরল সংক্রমণ। বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে, করোনা অতিমারি ছড়ানোর আগে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ দেখা যেত এক লক্ষ মানুষের মধ্যে এক জনের শরীরে।

এই রোগে মৃত্যুর হার যথেষ্ট বেশি। ৫০ শতাংশের কাছাকাছি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

কোন ধরনের রোগীর মধ্যে এই সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে?

সঙ্কট বাড়ছে বিশেষ করে ডায়াবিটিস রোগীদের মধ্যে। ক্যানসার আক্রান্তরাও সমস্যায় পড়ছেন ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ হলে। মূলত যে সব রোগ শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, কোনও কোভিড সংক্রমিতের তেমন কিছু আগে থেকে থাকলে অবস্থার অবনতির আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। ফলে গোটা দেশেই চিকিৎসকেরা আর্জি জানাচ্ছেন রক্তে শর্করার মাত্রা কম রাখতে।

শরীরের কোন অঙ্গে ছড়ায় সংক্রমণ?

সাইনাস, মস্তিষ্ক আর ফুসফুসে মূলত ছড়ায় সংক্রমণ। তবে কিছু ক্ষেত্রে খাদ্যনালী, চামড়া এবং অন্যান্য অঙ্গেও এর প্রভাব পড়তে দেখা গিয়েছে।

এই সংক্রমণের উপসর্গ কী?

নাকের উপরে কালো ছোপ, দেখতে অসুবিধা হওয়া, নাক বন্ধ, সর্দি সবই এই রোগের লক্ষণ। সঙ্গে নাক দিয়ে কালচে কফ বেরোয়। নাকের ভিতরের অংশ কালচে রঙের হয়ে যায়। মুখ, গালে ব্যথা। কারও কারও ক্ষেত্রে সে সব অংশ অবশ হয়ে যায়। সংক্রমণ বেশি ছড়ালে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্টও দেখা দিতে পারে।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কেন স্টেরয়েডের ব্যবহার কমানোর পরামর্শ?

করোনা রোগীর চিকিৎসায় স্টেরয়েড ব্যবহারের কারণে অনেক সময়ে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। তার জেরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সেই রোগীর শরীরে বাসা বাধার সুযোগ পাচ্ছে। বিশেষ করে করোনা রোগী যখন বেশ খানিকটা সেরে উঠছেন, সে সময়ে নতুন এই সংক্রমণের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। তাই করোনা-চিকিৎসায় স্টেরয়েড কম ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকেরা বলছেন ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ সবচেয়ে ক্ষতিকর। যথেষ্ট তাড়াতাড়ি এই সংক্রমণ ধরা না পড়লে চিকিৎসা চালানো কঠিন। কারণ, এমন রোগীর ক্ষেত্রে সংক্রমণ খুব দ্রুত বৃক্কে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে।

কী ভাবে সতর্ক হওয়া সম্ভব?

ডায়াবিটিস ছাড়াও যে সব কোভিড আক্রান্তের ক্যানসার, বৃক্কের রোগ কিংবা যকৃতে সমস্যা রয়েছে, তাঁদের সাবধান থাকতে হবে। শুধু করোনা চিকিৎসা চলার সময় নয়, সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও। কারণ, করোনা থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসার পরেও বহু সময়ে নতুন করে দেখা দিচ্ছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে কোনও নাক-কান-গলার চিকিৎসকের পরামর্শও নেওয়া যায়। তা ছাড়া, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দেখে নিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.