Satyajit Ray Birth Anniversary: ‘ওঁর ছবি না দেখা মানে এ-পৃথিবীতে বাস করেও কখনও সূর্য না দেখা’!

স্থির অক্ষরলিপি থেকে চলমান আলোকলিপিতে সরে-যাওয়া– এই ভাবেই জন্ম হল ভারতীয় ছবির এক কিংবদন্তির। যিনি বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকতে-আঁকতে একদিন ভারতীয় ফিল্মের ললাটলিখনও এঁকে ফেললেন। তিনি সত্যজিৎ রায়। ভারতীয় ছবির প্রথম পুরুষ। আজও যাঁর অপু ট্রিলজি, কলকাতা ট্রিলজি তাড়া করে এ গ্রহের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের, ভাবায়, মুগ্ধ করে, শিল্পভাবনায় সিক্ত করে। ২ মে তাঁর জন্মদিন। শতবর্ষ-উত্তীর্ণ এই ফিল্ম-করিয়ে আজও নানা ভাবে ছুঁয়ে থাকেন বাঙালিজীবন। যদিও তিনি নিজে নিছকই কূপমণ্ডূক অর্থে আবদ্ধ ছিলেন না বাঙালিত্বে। তিনি বিশ্ব-শিল্পের মর্মে-মর্মে নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। 

এতটাই যে, মার্টিন স্করসেসির মতো চিত্রপরিচালক সত্যজিতের ছবিকে সরাসরি ‘ট্রেজার অফ সিনেমা’ বলে দেন। বলেন, ছবিতে যাঁদের আগ্রহ আছে অন্তত তাঁদের কাছে রে-ফিল্ম গুপ্তধনের মতোই অমূল্য। আর জাপানি জিনিয়াস আকিরা কুরোসাওয়া? তিনি আরও সাংঘাতিক কথা বলে দেন! তিনি বলেন, সত্যজিতের ছবি না-দেখার অর্থ হল এই পৃথিবীতে বেঁচে থেকেও কখনও সূর্য বা চাঁদ না দেখা!

অথচ কেমন করে শুরু হল এমন এক জিনিয়াসের অনন্য শিল্প-যাত্রা? শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এ কথা অনেকটাই সত্যি যে, ছোটবেলা থেকে প্রায় মধ্য-যৌবন পর্যন্ত বাংলা বইপত্র সত্যজিৎ বেশ কমই পড়েছিলেন। এতই কম যে, সিগনেট প্রেসের কর্ণধার স্বয়ং দিলীপকুমার গুপ্ত তথা ডি.কে. তাঁকে ‘বাংলাসাহিত্যে গোল্লাজ্ঞানী’ আখ্য়া দিয়েছিলেন। যদিও ১৯৪৪ সালে ডি.কে. সেই গোল্লাজ্ঞানীকেই ‘পথের পাঁচালী’র কিশোরপাঠ্য সংক্ষিপ্ত সংস্করণ ‘আম আঁটির ভেঁপু’র গ্রন্থসজ্জার ভার দিয়েছিলেন। সেই কাজের সূত্রেই ছবি করার সুপ্ত ইচ্ছে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠল তরুণ সত্যজিতের। ইলাস্ট্রেশনের প্রয়োজেন বিভূতিভূষণের লেখা পড়তে-পড়তে সত্যজিৎ যেন একটা দাঁড়ানোর মতো, বা বলা ভাল, তাঁর নিজস্ব সিনেমা-দর্শনকে দাঁড় করানোর মতো একটা জায়গা পেলেন। শুরু হয়ে গেল অপূর্ব এক যৌথযাত্রা। এক ঔপন্যাসিকের রচনার নিবিড় কবিত্ব ও শান্ত লাবণ্য লেখকের কলম থেকে যেন সরাসরি চিত্রপরিচালকের নির্জন ক্য়ামেরার গভীরে এসে ভর করল। বাঙালি পেয়ে গেল ছবিতে কবিতা!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.