Pallavi Death Mystry: কম সময়ে বেশি অর্থ, পরিবার-বিচ্ছিন্ন জীবন পল্লবীদের সর্বনাশ করছে, সরব টলিপাড়া

পল্লবী দে-র মৃত্যুর দু’দিন কেটে গিয়েছে। টেলিপাড়া যথারীতি ব্যস্ত। তবে কাজ থেকে অবসর মিললে চর্চাও চলছে অভিনেত্রীর আকস্মিক মৃত্যু নিয়ে। অভিনয়-দুনিয়া নিজের মতো করে ব্যাখ্যা দিচ্ছে এই অঘটনের। কেউ দায়ী করছেন অবসাদকে। অনেকেরই দাবি, স্টুডিয়োয় পা রেখেই রাতারাতি ‘তারকা’র খ্যাতি সামলে উঠতে পারছেন না অধিকাংশ অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। ফলে অসময়ে ফুরিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি আঙুল উঠছে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পরিবার ছেড়ে একা জীবনযাপনের দিকেও। শহরতলি থেকে আসা তরুণ-তরুণীরা পেশার কারণে একা ফ্ল্যাটে থাকেন। যার জেরে একাধিক সম্পর্ক, সম্পর্কের টানাপড়েন। পরিবারের শাসন থেকে দূরে। জীবনে অবাধ স্বাধীনতা। তাতে কিছুটা হলেও বিশৃঙ্খল জীবন। হাতেও প্রচুর অর্থ। যাঁরা নিজেদের লাগাম পরাতে পারছেন না তাঁরা তলিয়ে যাচ্ছেন।

এই কারণগুলোই কি মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে পল্লবী এবং বাকি উঠতি তারকাদের? টেলিপাড়ায় ছড়িয়ে পড়া গুঞ্জনের সত্যতা যাচাই করতে সেখানকার মানুষদের সঙ্গেই যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। মুখ খুললেন অভিনেতা দেবযানী চট্টোপাধ্যায়, প্রযোজক স্নিগ্ধা বসু, পরিচালক স্বর্ণেন্দু সমাদ্দার।

বিষয়টি তুলতেই দেবযানীর সোজাসাপ্টা জবাব, ‘‘আমরা প্রথম শ্রেণি থেকে পরীক্ষা দিয়ে তবে উঁচু শ্রেণিতে উঠেছি। ছোট চরিত্রে অভিনয় করতে করতে বড় চরিত্র পেয়েছি। বলতে বাধ্য হচ্ছি, এখন স্টুডিয়োয় পা রেখেই সবাই নায়ক-নায়িকা! একটা ধারাবাহিকে অভিনয় করেই খ্যাতি মুঠোবন্দি করে ফেলছেন। ধাপে ধাপে পরীক্ষা দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে হয় না তাঁদের। এর ফলাফল তো এমনই হবে।’’

ছোট পর্দার পাশাপাশি অভিনেত্রী বড় পর্দাতেও চুটিয়ে কাজ করছেন। ২৭ মে মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর ‘তীরন্দাজ শবর’। দেবযানীর আরও বক্তব্য, এক জন ইঞ্জিনিয়ারের মাসিক উপার্জন ৩০ হাজার টাকা। সেখানে তার থেকেও কমবয়সী একটি ছেলে বা মেয়ে প্রথম ধারাবাহিকেই মাসে পাচ্ছেন ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা! কী করে তাঁরা নিজেদের সামলে রাখবে? আনন্দবাজার অনলাইনের মারফত তিনি প্রশ্ন রেখেছেন তাঁদের কাছে, ‘‘তাঁদের লক্ষ্য কি তাঁরা স্থির করতে পেরেছেন? প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা-অভিনেত্রী হবেন? নাকি দামি মোবাইল, গাড়ি হলেই চলবে?’’ অভিনেত্রীর আফশোস, সেটুকু বোঝার মতো বয়স, পরিণতমনস্ক হওয়ার আগেই তাঁরা নিজের মতো জীবনযাপনে অভ্যস্ত।

দেবযানী অভিযোগের আঙুল তুলেছেন এই প্রজন্মের অভিভাবকদের দিকেও। তাঁর প্রশ্ন, শহরতলির ছেলেমেয়েরা অবশ্যই স্বপ্ন দেখবেন। অভিনয় দুনিয়ায় আসবেন। কিন্তু তাঁদের মা-বাবাদের শাসন থাকবে না? দূরে থেকেও কি সন্তানকে শাসন করা যায় না? ‘‘বদলে এখনকার অনেক মা-বাবা আমার কাছে রীতিমতো দরবার করেন তাঁদের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের অভিনয়ে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য’’, দাবি অভিনেত্রীর। তাঁর মতে, পল্লবী দে-র মৃত্যু চোখ খুলে দিক এই প্রজন্মের এবং অভিভাবকদের। আর কেউ যেন এ ভাবে ফুরিয়ে না যান।

নিয়মনিষ্ঠ জীবনের পাশাপাশি সঠিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন অ্যাক্রোপলিস এন্টারটেনমেন্টের প্রযোজনা সংস্থার অন্যতম কর্ণধার স্নিগ্ধা বসু। তাঁর কথায়, অভিনেত্রী শ্যামৌপ্তি মুদলি তাঁর প্রযোজিত ধারাবাহিক ‘ধ্রুবতারা’য় অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। সেই সময় শ্যামৌপ্তি পড়ছিলেন। অ্যাক্রোপলিস তাঁকে পড়াশোনা শেষ করার পুরো সুযোগ দিয়েছিল। স্নিগ্ধার দাবি, ‘‘যাঁরা পড়াশোনা শেষ না করেই অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিচ্ছেন তাঁদের বলব, কাজের পাশাপাশি শিক্ষা শেষ করুন। সঠিক শিক্ষা আপনাকে ঠিক-ভুল বুঝতে সাহায্য করবে। তখন হয়তো কেউই আর এ রকম হঠকারী সিদ্ধান্ত নেবেন না।’’

পল্লবী দে-কে চেনেন না। অভিনেত্রী তাঁর পরিচালনায় কাজও করেননি। কিন্তু দুই প্রজন্মের ফারাক নিজের চোখে দেখেছেন পরিচালক স্বর্ণেন্দু সমাদ্দার। তাঁর কথায়, ‘‘অর্থই অনর্থের মূল। এবং তার শিকার অনেকেই। এত দিন যাঁরা মা-বাবার উপরে নির্ভরশীল ছিলেন তাঁরাই অভিনয়ে এসে হঠাৎ করে প্রচুর অর্থের মালিক। অভিনয় ছাড়াও মাচা, বিজ্ঞাপন আছে। ব্যস, স্বাবলম্বী হতেই ধরাকে সরা জ্ঞান করতে থাকেন অনেকে। মা-বাবা, পরিবারের যে প্রয়োজন আছে সেটাই আর মানতে চান না। নিজের মতো করে জীবন

উপভোগ করতে শুরু করেন। এবং এটাও ভুলে যান, উপার্জিত অর্থ আজ আছে কাল নেই। কারণ, অভিনেতাদের কোনও স্থায়ী কাজ নেই। বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে তখনই হাতে বড় স্মার্ট ফোন। গাড়ি ছাড়া যাতায়াতে মানে লাগে!”

স্বর্ণেন্দুর দাবি, কে কী ভাবে জীবন উপভোগ করবেন সেটা সম্পূর্ণ তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। অন্ধকারের পাশাপাশি উজ্জ্বল উদাহরণও পরিচালক তুলে ধরেছেন। স্বর্ণেন্দু এমনও অনেককে জানেন, যাঁরা উপার্জিত অর্থ ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করেন। অনেক স্বেচ্ছ্বাসেবীর সংস্থার মাধ্যমে দুঃস্থদের পাশে দাঁড়ান। দুটো গাড়ি আছে। তবু তিনি থলি হাতে বাজারে যান পায়ে হেঁটে। পরিণতবয়স্ক এবং পরিণতমনস্ক হওয়ার পরেও মা-বাবা বা পরিবারের সঙ্গে পরামর্শ করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন।
তা হলে পল্লবীর মৃত্যু কি সত্যি চোখ খুলে দেবে টলিপাড়ার?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.