২০২০। সালটা ভুলতে কেউ পারবেন না। একথা হলফ করে বলাই যায়। করোনা আতঙ্কে বিধ্বস্ত মানুষ এই বছরে হারিয়েছেন অনেক কিছু। অপ্রাপ্তির ভাঁড়ার হয়তো উপচে পড়ছে বিশ সালে। কিন্তু ২০২০ সাল কি শুধুই নিয়েছে আমাদের থেকে, দেয়নি কিছুই? সেকথা বলা যাবে না। এই বছরও আমাদের জীবন ভরিয়েছে নিজের মতো করে। শুধু খুঁজে নেওয়ার অপেক্ষা। যদি বলি ২০২০ আমাদের বাঁচতে শিখিয়েছে ? ভুল হবে কি? না, নিজেদের মতো করে বাঁচতে শিখেছি আমরা। খুঁজে পেয়েছি জীবনের মানে। ভার্চুয়াল বন্ধুরা নয়, জীবনের আসল মানে পরিবার, তা বুঝেছি আমরা।
একবার চোখ ফেরানো যাক সেই সব মণিমুক্তোর দিকে, ২০২০ সাল যা আমাদের জন্য রেখে গিয়েছে
১. সুপারস্টাররা নন, আসল হিরো লুকিয়ে অন্য পেশায়
চিকিৎসক, পুলিশ কর্মী, সাফাই কর্মী, সাংবাদিক বা স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষ। আসল হিরোদের এবার চিনতে শিখেছি আমরা। পর্দা কাঁপানোর সুপারস্টাররা কিন্তু হিরো নন। হিরো তাঁরা, যাঁরা করোনা কালেও মানুষের জীবন বাঁচানোর কাজে যুক্ত ছিলেন। নিজের জীবন বিপন্ন করে তথ্য সরবরাহ করেছেন যে সব সাংবাদিকরা, বা লকডাউন চলাকালীন আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে যে কাঁধে ছিল, সেই পুলিশ কর্মীরা দেখিয়ে দিয়েছেন আসল হিরোগিরি কাকে বলে। তাই কুর্ণিশ সেই সব মানুষকে, যাঁরা নিজেদের প্রিয়জনের কথা ভাবেননি, এগিয়ে এসেছেন সমাজের সেবায়, দশের দায়িত্ব নিতে।
২. প্রাণ খুলে শ্বাস নিয়েছে চারপাশের পরিবেশ
এই দুনিয়া মানুষই একমাত্র প্রাণী নয়। সেকথা প্রায় ভুলতে বসেছিলাম আমরা। অন্য প্রাণেদের তোয়াক্কা না করে স্বার্থপরের মত পরিবেশের ক্ষতি করে চলেছিলাম। করোনার জেরে লকডাউন দেখিয়ে দিল মানুষ ছাড়া এই বিশ্ব কত সুন্দর। মানুষ ঘরে বসে থাকার দরুণ, রাস্তায় গাড়ি না চলাচলের দরুণ শ্বাস নিল পৃথিবী। সবুজ হল পৃথিবী। কমল দূষণ, মেরামত হল চারপাশের পরিবেশ। বিহারের নেপাল সীমান্তবর্তী গ্রাম সিংহবাহিনী থেকে পরিষ্কার দেখা গেল মাউন্ট এভারেস্ট। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা স্যাটেলাইট সেনসর পর্যবেক্ষণের পরে জানিয়েছে, করোনা ভাইরাসে লাগাম টানতে দেশব্যাপী লকডাউনে বাতাসে ধূলিকণা, ধোঁয়াশার পরিমাণ তাৎপর্যপূর্ণভাবে ২০ বছরে সবচেয়ে কম হয়েছে।
৩. পরিবারের সঙ্গে সময়
শেষ কবে পরিবারের সঙ্গে একসাথে বসে গল্প করেছেন, খাবার খেয়েছেন, মনে পড়ছিল না যাঁদের। এই করোনা মিলিয়ে দিয়েছে তাঁদের। বাড়িতে বসে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর অনবদ্য সুযোগ এনে দিয়েছে সবার সামনে। ২০২০ সাল তাই এমন এক বছর, যা পরিবার কি, তা বুঝিয়েছে। নিজের মানুষদের কাছে নিয়ে এসেছে। প্রিয়জনেদের সঙ্গে বসে কথা বললে কোনও ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডের ওপর নির্ভর করার দরকার পড়ে না, তা বুঝিয়েছে। তৈরি হয়েছে স্মৃতি, মুহুর্তের বুনোটে বাসা বেঁধেছে ছোট্ট ছোট্ট গল্প।
৪. মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা
মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশন যে কোনও বিলাসিতা নয়, তা বুঝিয়েছে ২০২০। সাধারণ মানুষ, আপনি-আমি সচেতন হয়েছি মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে। মন খারাপের পরিণাম সম্পর্কে অবগত হয়েছি আমরা। তাই ডিপ্রেশনে কথা বলতে শিখিয়েছে ২০২০। বিষন্নতা, দুশ্চিন্তা, মন খারাপ নিয়ে আমরা যেমন কথা বলি, তেমনি আড়ালে নেই ম্যানিয়া, সিজোফ্রেনিয়ার মতবড় রোগগুলোও। কিন্তু আসলেই কি আমরা সবাই আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন? একটা সময় এর উত্তর ছিল, না। কিন্তু এখন আমরা বুঝতে শিখেছি এই মানসিক টানাপোড়েনেরও প্রতিকার রয়েছে।