এখনও চোখের জল শুকোয়নি। প্রতিদিন প্রয়াত স্বামীর উপস্থিতি অনুভব করেন সংযুক্তা চট্টোপাধ্যায়। অনেকগুলো আফসোস, আর না-ভোলা স্মৃতি আঁকড়ে স্বামীর দেখানো পথে চলতে চান তিনি। অভিনেতা অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের অকাল মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছে তাঁর গুণমুগ্ধ ভক্তদের। এর মাঝেই মুক্তির অপেক্ষায় অভিনেতার শেষ ছবি ‘পঞ্চভূজ’। এই ছবির ট্রেলার ও গান লঞ্চ হল শনিবার। নন্দনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রয়াত অভিনেতাকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানালো ‘পঞ্চভূজ’ পরিবার। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন মৃত অভিনেতার স্ত্রী ও কন্যা। পৌঁছেছিলেন অনস্ক্রিন কন্যা তৃণা সাহা, সহকর্মী দুলাল লাহিড়ী।
এই ছবি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন রানা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই বেশকিছু ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয়েছে ‘পঞ্চভূজ’। আর ‘পোর্ট ব্লেয়ার ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এ এই ছবির জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কারও পেয়েছেন প্রয়াত অভিনেতা। এদিন সেই পুরস্কারই অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী সংযুক্তা ও মেয়ে সাইনা (ডল)-র হাতে তুলে দিল টিম ‘পঞ্চভূজ’।
পুরস্কার গ্রহণের পর আপ্লুত সংযুক্তা চট্টোপাধ্যায়। অভিষেক অনুরাগীদের পাশে থাকাটাই এই কঠিন সময়ে তাঁকে এগিয়ে চলতে উদ্ধুদ্ধ করছে। ‘ডলকে বড় করো, ডল বড় হবে, এই কথাগুলো এখন আমাকে মোটিভেট করছে। দয়া করে এগুলো তোমরা করতে থেকো। আমি সত্যি এগোব, ডলকে বড় করব’, প্রয়াত অভিনেতার ভক্তদের বার্তা সংযুক্তার।
পরে রাতে ফেসবুকে দীর্ঘ পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আজই অভিষেকের পুরস্কার বাড়ি নিয়ে এলাম। ওর শেষ ছবি পঞ্চভূজের জন্য পোর্ট ব্লেয়ার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার সম্মান পেয়েছে। এই ছবির পরিচালক রানা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রযোজক সৌমেন চট্টোপাধ্যায়। সবাইকে বার বার একটা কথাই বলছি… আমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে অভিষেকের উপস্থিতি অনুভব করছি…’
এর পাশাপাশি তিনি যোগ করেন, ‘একটি ফোন নম্বর অভিষেকের ফোনে খুঁজছিলাম। অজান্তের রানাদার নম্বর ডায়েল করে ফেলি। কী ভাবে হল বুঝতেই পারলাম না! তখনও জানতাম না অভিষেকের শেষ ছবি ওঁর পরিচালনায়। রানাদাই আমাকে সবটা জানান এবং এই পুরস্কার গ্রহণ করার জন্য আমাকে বলেন। তাহলে বুঝতে পারছেন তো… অভিষেক কীভাবে আমাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছে!’
অদ্ভূতভাবে এই ছবির ট্রেলারে অভিষেকের মুখে ফুটে উঠে মৃত্যুর কথা। ‘মৃত্যুর কাছে সমপর্ণ করাটা কি বাঞ্চনীয়?’ ছবির ট্রেলারে কো-স্টার সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এমনই প্রশ্ন করেন অভিষেক। জবাব মেলে, ‘মৃত্যু তো অনিবার্য, তাকে মেনে নিতে বাধাটা কোথায়?’
এই সব দেখবার পর সংযুক্তা লেখেন, ‘ছবির প্রতিটি সংলাপ কী অসাধারণ! গায়ে কাঁটা দেবে আপনাদের। মৃত্যুর কথা, আত্মার কথা ওর মুখে রয়েছে। ভাবটা এমন যেন সব জানত কী হবে!’
সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী মাসেই মুক্তি পাবে অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের শেষ ছবি। অন্তিমবার রুপোলি পর্দায় টলিপাড়ায় ‘কার্তিক ঠাকুর’কে দেখতে গিয়ে বাঙালির চোখের কোণে জল যে আসবে, তার আভাস দিচ্ছে ছবির ট্রেলার।