পুজোর পর স্কুল খুললেও বেতন পাননি কলকাতার পাঠভবন স্কুলের শিক্ষকরা। তাঁদের দাবি ‘আর্থিক, প্রশাসনিক অচলাবস্থা’ তৈরি হয়েছে স্কুলে। আশঙ্কা ভবিষ্যতেও এ রকম হতে পারে। তাই ক্লাস করানোর মাঝেই স্কুলের সামনে প্রতিবাদে শামিল হচ্ছেন তাঁরা। টিচার ইন চার্জ জানিয়েছেন, বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। তবে যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বেতন মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
পাঠভবন স্কুলের সামনে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করছেন শিক্ষকরা। হাতে কোনও প্ল্যাকার্ড বা ব্যানার নেই। মুখে স্লোগানও নেই। শিক্ষকদের দাবি, তাঁদের এই প্রতিবাদে পঠনপাঠনে কোনও সমস্যা হচ্ছে না। এই মাসের বেতন পাননি বলে এই বিক্ষোভ নয়। বরং যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তা কাটানোর চেষ্টা করছেন।
স্কুলে ৩০ বছর ধরে ইতিহাস পড়াচ্ছেন উর্মি চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘‘পাঠভবন যে আলাদা স্কুল, প্রথম থেকে আমাদেরতা শেখানো হয়েছে। আমাদের আন্দোলন ছাত্র-বিরোধী নয়। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে প্রতিবাদ করছি।’’ তিনি এও জানিয়ে দিলেন, শুধু এক মাসের বেতনের জন্য তাঁদের প্রতিবাদ নয়। আশঙ্কা, আগামী দিনেও এ রকম হতে পারে। উর্মি বলেন, ‘‘মাসের ৩ তারিখেও বেতন হয়নি। সেটা কারণ নয়। অনিশ্চয়তার জন্য প্রতিবাদ করছি। এখানকার প্রায় ১১০ জন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী বোঝাপড়ায় আসতে পারছি না কর্তৃপক্ষের সঙ্গে।’’
পদার্থবিদ্যার শিক্ষক শুভদীপ চক্রবর্তীর দাবি, টিচার ইনচার্জ গোটা বিষয়ে সঠিক উত্তর দিতে পারছেন না। বেতনের পাশাপাশি স্কুলের অন্য খরচ কী ভাবে চলবে, সেই নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অন্য এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘স্কুলের বিদ্যুৎ বিল, ফোনের বিল, একাদশ, দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রদের রেজিস্ট্রেশন ফি কে মেটাবেন, তাও জানা নেই। কর্তৃপক্ষ বলছে, সেগুলি ডিসবার্স করার কেউ নেই। কোনও পক্ষকে আক্রমণ করতে চাই না। দৈনন্দিন স্কুল চালনার প্রক্রিয়া যাতে ব্যহত না হয়, সেই আবেদন করছি।’’
এই অচলাবস্থার পিছনে রয়েছে ডিস্ট্রিক্ট ইনস্পেক্টর অব স্কুল (সেকেন্ডারি এডুকেশন)-এর পাঠানো একটি ইমেল। নির্বাচনে জিতে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিতে এসেছেন সদস্যরা। সেই ম্যানেজিং কমিটি না ভেঙেই ইমেল পাঠিয়ে ড্র অ্যান্ড ডিসবার্সমেন্ট অফিসার (ডিডিও) নিয়োগ করেছে ডিআইয়ের অফিস। এই আধিকারিকের মাধ্যমে শিক্ষকদের বেতন, স্কুলের অন্য খরচের টাকা প্রদান করে ম্যানেজমেন্ট। ডিআইয়ের অফিস থেকে নিযুক্ত সেই ডিডিওকেই মানতে চাইছেন না স্কুল কর্তৃপক্ষ। জানিয়েছেন, পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির টিচার ইনচার্জ সুভা গুপ্ত। এই নিয়ে আদালতে রিট পিটিশন দিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি আদালতে উঠেছে। অন্য পক্ষ সময় চেয়ে নিয়েছে। তাতে কিছুটা বিপাকে স্কুল কর্তৃপক্ষ। সুভার কথায়, ‘‘আমি ম্যানেজিং কমিটিকে জানিয়েছি, কী ভাবে বেতন হবে। ৯ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা সম্ভব না।’’