পানিনী, পতঞ্জলি, ভাস, কালিদাস, ভবভূতি, ভার্তিহারি আদি নামগুলো শুনলেই প্রাচীন ভারতের সেই গৌরবময় অতীতের কথা কী আমাদের মনে পড়ে যায়না! পানিনির ব্যাকরণ, পতঞ্জলির মহাভাষ্য আর কালিদাস, ভাস, বানভট্টাদি সংস্কৃত সাহিত্যিকদের রচনা আজ বিশ্ববন্দিত। যদি বর্তমানে ভারতের কোন প্রান্তে গিয়ে কাউকে জিজ্ঞাসা করা হয় – এঁদের মাতৃভাষা কি ছিল? – সকলেই একবাক্যে উত্তর দেবেন যে এঁদের মাতৃভাষা ছিল সংস্কৃত। কিন্তু এখন যদি কোন বিদেশী আমাদের জিজ্ঞাসা করেন যে বর্তমানে ভারতের মাতৃভাষা তথা রাষ্ট্রভাষা কি – আমরা কিন্তু নিরুত্তর থাকব। সম্পূর্ণ বিজ্ঞান সম্মত একটি সমৃদ্ধতম ভাষার গৌরবময় উত্তরাধিকার লাভ করেও বর্তমানে আমাদের কোন রাষ্ট্রভাষা নেই।
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন – সংস্কৃত ভাষাই ভারতে ভাষা সমস্যার একমাত্র সমাধান। সংস্কৃত ভারতী নামক একটি অখিল ভারতীয় সংগঠন স্বামীজীর এই উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করার জন্য নিরলস চেষ্টা করে চলেছে বিগত আটটিরিশ বৎসর ধরে। সংস্কৃত ভাষার প্রচার ও প্রসারের জন্যই এই সংগঠনটি তৈরি করেছিলেন কতিপয় সংস্কৃত প্রেমী মানুষ। আজ ভারতের প্রত্যেকটি প্রদেশে এই সংগঠনের শাখা গড়ে উঠেছে। সংস্কৃত ভারতী, দক্ষিণ বঙ্গ এইরকম একটি শাখা।
সংস্কৃত ভাষার প্রচার প্রসারের প্রথম ধাপ হল – প্রতিদিন দু ঘন্টা করে দাশ দিনের সম্ভাষণ বর্গ। কোন বই পত্রের প্রয়োজন নেই। সম্পূর্ণ নিঃশুল্কে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে ব্যবহারিক প্রয়োজনককে সরল সংস্কৃতর মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয় যাতে করে নবম দশম দিনেই ছাত্র ছাত্রীরা সংস্কৃততে কথা বলতে সক্ষম হয়। সংস্কৃততে কথা বলা, পড়তে পারে ও লিখতে পাড়ার জন্য এরপর আর কয়েকটি ধাপ আছে যেগুলির মাধ্যমে একজন সংস্কৃততে সহজভাবে কথা বলতে-পড়তে-লিখতে স্বাবলম্বী হতে পারে।
বর্তমানে কোভিড 19 -র জন্য লকডাউন ও নানা সাবধানতার কারনে যেহেতু সম্ভাষণ বর্গ চালানো সম্ভব হচ্ছে না, সংস্কৃত ভারতী, দক্ষিণ বঙ্গ online মাধ্যমে দক্ষিণ বঙ্গে সম্ভাষণ শিবিরের আয়োজন করতে শুরু করে। অবশ্য অনলাইনে মাধ্যমে শিক্ষন সময় ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট। হোয়াটসআপ, ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেরে ছাত্র ছাত্রী থেকে শুরু করে বয়স্ক ও প্রাজ্ঞজনেরাও এই শিবিরে উৎসাহের সঙ্গে অংশ নিচ্ছেন। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে বারটি স্থানে এই online সম্ভাষণ শিবির শুরু হয়েছে, চলবে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। বারটি স্থান মানে বারজন শিক্ষক নিজেদের বাড়িতে বসে অনলাইন মাধ্যমে এই সম্ভাষণ শিবিরে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। মাত্রা তিন দিনের সূচনাতে ১৪০০ ছাত্র ছাত্রী এই এই শিবিরগুলিতে যোগদান করেছেন। আগামী ১১ সেপ্টেম্বর সামগ্রিক ভাবে বিকাল তিনটার সময় সমারোপ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে। সমারোপ কার্যক্রমে মুখ্য বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সোমনাথ সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ গোপবন্ধু মিশ্র এবং প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করবেন খড়গপুর IIT -র অধিকর্তা।
এই বারটি শিবিরের নামগুলো বড় অর্থপূর্ণ, যেমন, পানিনি, পতঞ্জলি, ভাস, কালিদাস, ভবভুতি, ভার্তিহারি, বান, শ্রীহর্ষ, ইত্যাদি। এর আগে ২০ আগস্ট থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত পাঁচটি অনলাইনে শিবির আয়োজিত হয়েছিল। প্রায় ৭০০ জন এই অনলাইনে বার্গে অংশ নিয়েছিলেন। এইভাবে সংস্কৃত ভারতী নিঃশুল্কে সংস্কৃত প্রচার ও প্রসারের কাজে ভারতসহ বিশ্বের আরো ১৯ টি দেশে নিরলস কাজ করে চলেছে।