জয়েন্ট এন্ট্রান্স ও নিট পরীক্ষা নিতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি ১৫০ জন শিক্ষাবিদের

সনিয়া গাঁধী থেকে শুরু করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন জয়েন্ট এন্ট্রান্স ও নিট পরীক্ষা (JEE & NEET Examination) রুখতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।‌ ঠিক তখনই, প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে এই দুই পরীক্ষা নেওয়ার আবেদন জানিয়ে চিঠি পাঠালেন দেশের এক ঝাঁক শিক্ষাবিদ। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন দেশ-বিদেশের ১৫০ জন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। সেই চিঠিতে তাঁরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে (Narendra Modi) লিখেছেন, “এই পরীক্ষা গ্রহণে আর যদি বিলম্ব হয় তাহলে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হবে।” এটুকু বলেই ক্ষান্ত হননি তারা, এই বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ চিঠি লিখে প্রধানমন্ত্রী কে বলেছেন, “পরীক্ষা ও ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে দেশের লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সরকারের উচিত দ্রুত তা নিরসন করা।”

বুধবার ভার্চুয়াল বৈঠক করে জয়েন্ট এন্ট্রান্স ও নিট পরীক্ষার রুখতে সনিয়া গাঁধীর স্বপক্ষে মত দেন দেশের সাত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের যাবতীয় অজুহাতকে কিনারা করে ওই শিক্ষাবিদরা বলেছেন, “মহামারীর অজুহাতে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ, স্বপ্ন নিয়ে আপস করা উচিত হবে না। যে দিন নির্ধারিত হয়েছে, সেই দিনগুলিতেই ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষা হোক। আর দেরি করলে ছাত্রছাত্রীদের সর্বনাশ হবে। কোনও কিছুর বিনিময়েই এই সময় আমরা লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রীদের ফিরিয়ে দিতে পারব না।”

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছেন জেএনইউ, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি, আইআইটি দিল্লি, লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক ও উপাচার্যরা। সঙ্গে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া-সহ জেরুজালেম, ইসরালের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ভারতীয় অধ্যাপকরাও এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। পরীক্ষা নেওয়ার স্বপক্ষে শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক (Ramesh Pokhriyal Nishank) বলেছেন, “পরীক্ষার্থীদের অনুরোধেই সেপ্টেম্বরে সর্বভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষা (জেইই-মেন) এবং ডাক্তারির প্রবেশিকা (নিট-ইউজি) নেওয়ার বন্দোবস্ত করেছেন তাঁরা। ওই দুই পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের হল-এ পৌঁছতে যাতে কোনও অসুবিধা না-হয়, সমস্ত রাজ্যকে তা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছে আয়োজক সংস্থা এনটিএ-ও।” তাঁর আরও দাবি, “বহু পড়ুয়া এবং অভিভাবকেরাই লাগাতার আমাদের জিজ্ঞাসা করে গিয়েছেন যে, নিট, জেইই-র পরীক্ষা কেন নেওয়া হচ্ছে না? পড়ুয়ারা কত দিন পড়তে থাকবেন? শেষ পর্যন্ত কী হবে? কত দিনের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে? এর আগে পরিস্থিতি বুঝে পরীক্ষা দু’বার পিছোনো হয়েছ। জেইই-মেনের জন্য যে ৮.৫৮ লক্ষ পড়ুয়া নাম নথিভুক্ত করিয়েছিলেন, গত কাল পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে ৭.২৫ লক্ষ অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোড করেছেন।” শিক্ষামন্ত্রীর সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, পরীক্ষা দিতে আপত্তি নেই অধিকাংশ পরীক্ষার্থীরই।

এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) বিচারপতি অরুণ মিশ্রের বেঞ্চ জানিয়ে দেয়,  “করোনা সংক্রমণের কারণে জীবন থমকে থাকবে না। স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের কারণে এমনিতেই ছাত্রছাত্রীদের কেরিয়ারের অনেক ক্ষতি হয়েছে। পরীক্ষা পিছিয়ে দিলে তাদের আরও একটা বছর নষ্ট হবে। সেদিকটা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (National Testing Agency) দাবি করেছে, পড়ুয়াদের সুরক্ষার সঙ্গে কোনও আপোস করা হবে না। মানা হবে প্রতিটি স্বাস্থ্যবিধি। তারা আরও জানিয়েছে, ২০১৯ সালের নিট পরীক্ষায় পশ্চিমবঙ্গে ৬৭,৭৭৬ জন পরীক্ষার্থীর জন্য কেন্দ্র ছিল ১১২টি। এ বছর ৭৭,০৬১ জনের জন্য কেন্দ্রের সংখ্যা ১৮৯। সারা দেশে গত বছর ১৫.১৯ লক্ষ পরীক্ষার্থীর জন্য যেখানে ২৫৪৬টি কেন্দ্র ছিল, সেখানে এ বার ১৫.৯৭ লক্ষ পরীক্ষার্থীর জন্য রয়েছে ৩৮৪২টি। একই ভাবে পরীক্ষা কেন্দ্র বাড়ানো হয়েছে জেইই-মেনেরও। পরীক্ষার দিনে (জেইই-মেন ১ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর আর নিট-ইউজি ১৩ সেপ্টেম্বর) পড়ুয়াদের যাতে সময়ে কেন্দ্রে পৌঁছতে অসুবিধা না-হয়, তা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়ে সমস্ত রাজ্যকে ইতিমধ্যে চিঠিও দিয়েছে তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.