বিভূতিভূষণের জন্মদিনে শ্রদ্ধা

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ আরণ্যক ’ উপন্যাসে জঙ্গলবন্ধু যুগলপ্রসাদকে দেখেছি জঙ্গলের মধ্যেই সে বনস্পতির চারা লাগায়; জঙ্গলেই বনসৃজন করে। এ যে তেলা মাথায় তেল দেওয়া নয়! জঙ্গল কেটে ক্রমাগত বসতি স্থাপন করে, চাষাবাদ করে আমরা বনের ঢাকা-মাটি নগ্ন করে দিয়েছি। বাদাবন কেটে ঝড়-ঝঞ্ঝার অবারিত দ্বার খুলে দিয়েছি। অরণ্য কেবল কেটে ফেলার জিনিস নয়, লুঠপাটের জমিদারি নয় — তা বোধে এবং সংস্কৃতিতে চিরকালই বলে এসেছে সনাতনী সংস্কৃতি। কলোনিয়াল-লুঠেরা-শক্তি ভারতবাসীকে অরণ্য লুঠপাট করতে শিখিয়েছে। কিন্তু প্রাচীন সাহিত্য শিখিয়েছিল অরণ্য ‘দেবতার কাব্য। “পশ্য দেবস্য কাব্যম্”। সামীপ্যে সান্নিধ্যে এসেছিল তপোবনের শান্তিনিকেতনে।

অরণ্যষষ্ঠীতে অরণ্যের উপান্তে গড়ে উঠেছিল এক যুগবাহিত জীবনবোধ। জানপদিক-সংস্কৃতির এক অমূল্য সাধনা। শেষে অরণ্যেই ছড়িয়ে পড়বে ফলের বীজ; তারপরেই আসবে বর্ষা, বীজের সুপ্তি কেটে চারাগাছ বেড়ে উঠবে, অরণ্যের প্রভূত বিস্তার হবে। অরণ্যের মাঝে ফলাহারের এ এক দারুণ উৎসব, অরণ্যকেই বর্ধিষ্ণু করে তোলার উৎসব। সে সংস্কৃতি কোথায় গেলো? শাশ্বত সনাতনী পরত ফেরত চাই।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১২ ই সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪ — ১ লা নভেম্বর, ১৯৫০)

ড. কল্যাণ চক্রবর্তী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.