(বৈশাখ সংক্রান্তি বিষ্ণু উপাসনার একটি অত্যন্ত শুভসময়৷ আমার মা প্রতিবছর এই সংক্রান্তিতে তুলসীতলা নিকিয়ে নিবেদন করেন ভেজানো ছোলা, আখের গুড়, মরশুমি ফল এবং বাতাসা। প্রদীপ জ্বালিয়ে দেন, পাশেই সুগন্ধি ধূপ। ‘হরি বোল, হরি বোল’ ধ্বনিতে পূর্ণ করে তোলেন চারপাশের আবহ। কাঠের বড় থালায় বছরের প্রথম পাকা আম, তরমুজ, ফুটি, কলায় ভরিয়ে দেন সুসজ্জিত নৈবেদ্য। এবার বললেন, পরের বছর থেকে যেন আমাদের প্রজন্ম এই ফল নিবেদনের কাজটি শুরু করি। তাই এবছর সন্ধ্যায় আমিও পালন করছি বিষ্ণুপদী সংক্রান্তি। আপনি?)

চৈত্র সংক্রান্তি থেকে বৈশাখ সংক্রান্তি পর্যন্ত প্রচণ্ড দাবদাহে তুলসীমঞ্চে ঝারা দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয় হিন্দু-গৃহে। মঞ্চে তুলসী গাছের উপর কঞ্চির ফ্রেমে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় মাটির ঘট, তার তলায় থাকে ক্ষুদ্র ছিদ্র। ঘটে প্রদত্ত গঙ্গাজল বা পুস্করিণীর জল ছিদ্রের মাধ্যমে তুলোর সলতে দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা করে নীচের তুলসীগাছে পড়ে। তাতে গাছের সেচের যোগান দেওয়া হয়, তপ্ত গ্রীষ্মে গাছ বেঁচে থাকে। আজ সেই মাটির ঘটটি খুলে নিয়ে সন্ধ্যাবেলায় তুলসীতলায় অনুষ্ঠিত হবে শ্রীবিষ্ণুর পুজো।

‘বিষ্ণুপদী’ বলতে গঙ্গা বা জাহ্নবীকেও বোঝানো হয়৷ ভাগবতে গঙ্গার বিষ্ণুপদী হওয়ার কাহিনি পাওয়া যায়। মার্কণ্ডেয় পুরাণ অনুসারে বিষ্ণুপদ থেকে তিনি নেমে আসেন চন্দ্রলোকে। তারপর চন্দ্রকিরণের সঙ্গে মিলেমিশে মেরুপৃষ্ঠে। তারপর হিমালয়ে শিবের জটাজালে অবতীর্ণ হন গঙ্গা। এরপরই ভগীরথের কাহিনি।

এবছর (২০২৪ সালে) বিষ্ণুপদী সংক্রান্তি পড়েছে ১৪ ই মে, মঙ্গলবার। এদিন দিবস ১১ টা ৩৪ মিনিটে শুরু হয়েছে সংক্রান্তি কৃত্য, স্নানদানাদি এবং অনধ্যায়। গোস্বামী মতে এদিন শ্রীকেশবব্রতের সমাপন। সন্ধ্যা ৬ টা ৭ মিনিট থেকে রাত ৭ টা ৪৩ মিনিটের মধ্যে শ্রীসত্যনারায়ণ ব্রতের সময় নির্ধারিত হয়েছে। সারা বাংলার নানান জায়গায় উৎসব ও মেলা সংগঠিত হচ্ছে আজ। যেমন খণ্ডঘোষে (বর্ধমান জেলার নপাড়াগ্রাম ও ক্ষীরগ্রাম), মানবাজারে (পুরুলিয়া জেলার ক্ষীরগ্রাম) যোগাদ্যাদেবীর মহাপূজা হবে। এদিন সুতিতে (মুর্শিদাবাদ জেলার জেহেলীনগর গ্রাম) বুড়োশিবের থানে হচ্ছে ব্রহ্মাপূজার আয়োজন এবং রঘুনাথগঞ্জের জমিদার ভবনে তুলসী বিহার উৎসব ও মেলা। দক্ষিণ শিবপুরে (হাওড়া জেলা) হচ্ছে শ্রীপঞ্চানন জীউর পূজা এবং মেলা। গঙ্গোৎপত্তির এই দিনটিতে বহু পুণ্যার্থী তর্পণ এবং স্নান, দরিদ্রকে দানকর্ম সেরে তৈরি হয়ে আছেন বিষ্ণুপূজা করবেন বলে।

(ছবিগুলি ফেসবুকের Tulsi থেকে সংগৃহীত)

কল্যাণ চক্রবর্তী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.