গত কয়েকদিন ধরে হিজাব বিতর্কে সরগরম কর্ণাটক। একটি কলেজে হিজাব পরে পড়ুয়াদের প্রবেশ করতে না দেওয়ায় বিতর্কের সূত্রপাত। বিষয়টি পৌঁছেছে আদালতে। কেন হিজাব পরে প্রবেশ করতে বাধা দিচ্ছে সরকার, সেই প্রশ্নই তোলা হয়েছে আবেদনকারীর তরফে। এক পড়ুয়াই আবেদন জানিয়েছিলেন কর্ণাটক হাই কোর্টে। মঙ্গলবার ছিল সেই মামলার শুনানি। সব পক্ষের যুক্তি শুনে, বিচারপতি কৃষ্ণা এস দীক্ষিত জানিয়েছেন, কোনও আবেগ দিয়ে নয়, সংবিধান অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে আদালত। পাশাপাশি, শান্তি বজায় রাখার বার্তা দিয়েছে আদালত। সংবিধানে আস্থা রাখার কথা বলেছেন বিচারপতি। বুধবার ফের এই মামলার শুনানি ছিল। এই বিতর্ক এতই চরমে পৌঁছেছে যে স্কুল-কলেজ তিন দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্ণাটক সরকার।
বিতর্কে কে, কী বলছেন দেখা যাক।
“ধর্মীয় অনুশাসনে ছাত্রীরা পড়াশোনা থেকে দূরে চলে যাচ্ছে নাতো“
— অগ্নিমিত্রা পাল, বিজেপি-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা বিধায়ক
আসুন আমরা যে কোনো প্রতিষ্ঠানের পোষাকবিধিকে সম্মান করি ঠিক যেভাবে সেনাবাহিনীতে একজন মুসলিম মহিলা শত্রুর সাথে লড়াই করার সময় হিজাব পরতে পারেন না অথবা একজন মুসলিম মহিলা ডাক্তার রোগীকে পরীক্ষা করার সময় হিজাব পরতে পারবেন না। শিক্ষার সাথে ধর্মকে মেশাবেন না।
আমি এক সময় ছাত্রী ছিলাম। কলেজে মেয়েরা শাড়ি পরে আসত. সেই সময়ের তাই ছিল অলিখিত নিয়ম। আশুতোষ কলেজের একটি ঘটনা নিয়ে খুব শোরগোল হয়েছিল। একটি মেয়ে মেয়ে শালোয়ার কামিজ পরে এসছিল। কলেজের প্রিন্সিপাল শুভঙ্কর বাবু সেটা এলাউ করেনি। খুব লেখালেখি হয়েছিল। সালোয়ার কামিজ খুব খারাপ পোষাক নয়। কলেজের ড্রেস কোডে ছিল না। তাই শুভঙ্করবাবু বাধা দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে শুভঙ্কর বাবু একটি বিশ্ববিদ্যালয় এর উপাচার্য হয়েছিলেন। বামপন্থী সরকারের কাছে সেই ঘটনা যে মারাত্মক প্রভাব ফেলেনি, তাঁর পদোন্নতি প্রমাণ করে।
এখনও কলকাতার বহু ক্লাব আছে, যাদের নিজস্ব ড্রেস কোড আছে. অনেক ঘটনা হয়েছে ধুতি, পাঞ্জাবী পরে যাওয়ার জন্য সেই ক্লাবে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এই প্রতিষ্ঠানের যুক্তি খুব সহজ। এখানে যুক্ত হতে হলে তার নিয়ম পালন করতে হবে। যদি কেউ সেই নিয়ম পালন না পারে সেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করবে না।
বিদ্যালয় তো পড়াশোনার জায়গা। ধর্ম পালন এর অধিকার সবার থাকবে। কিন্তু কোথায়? স্কুল না স্কুলের বাইরে? বাবা, মায়েরা সন্তানদের স্কুলে পাঠান ছেলে, মেয়েদের উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে। এই প্রসঙ্গে আসামে সরকার পোষিত মাদ্রাসায় আদালতের রায়ের দিকে তাকানো যেতে পারে। মাদ্রাসা সরকারি স্কুলের পরিবর্তিত হবে। নিছক ধর্মীয় শিক্ষার বদলে প্রাধান্য পাবে বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষা।
কর্ণাটকের ঘটনা নিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রে। উদিপির সেই কলেজে আরও নব্বই জন মুসলিম ছাত্রী পড়েন। এরা কেউ হিজাব পরে কলেজে আসেন না। পাঁচ ছাত্রী এই মামলা করেছেন।
স্কুলের ফল বলছে, এদের রেজাল্ট খুব খারাপ হয়েছে। অভিভাবকদের স্কুলের তরফে জানানো হয়েছিল। তাতে ফল হয়নি। ধর্মীয় অনুশাসনে এই ছাত্রীরা পড়াশোনা থেকে দূরে চলে যাচ্ছে নাতো? ভাবা দরকার। আশা করা যায়, আদালতের রায়ের পর কর্নাটকে পড়াশোনা আবার স্বাভাবিক গতিতে এগোবে।
অশোক সেনগুপ্ত