বাংলার গর্ব গুরুচাঁদ ঠাকুর

গুরুচাঁদ ঠাকুর (১৩ মার্চ, ১৮৪৬ – ১৯৩৭) ছিলেন একজন বাঙালি সমাজসংস্কারক ও শিক্ষাব্রতী মনীষী। মতুয়া ধর্মের উন্নতি, দলিত হিন্দুদের শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নের উদ্দেশ্যে তিনি সারাজীবন কাজ করেছেন।

অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার সাফলিডাঙা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন গুরুচাঁদ। তাঁর পিতা ছিলেন মতুয়া আন্দোলনের সূচনাকারী হরিচাঁদ ঠাকুর। সামাজিক বৈষম্যের কারণে গুরুচাঁদ কোনো বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেননি। ফলে বাধ্য হয়েই পিতা হরিচাঁদ তাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করেন ও নির্দেশ দেন ভবিষ্যতে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি ঘটানোর। পিতার মৃত্যুর পর তাঁর যোগ্য সন্তানের মতোই এই সামাজিক আন্দোলনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন গুরুচাঁদ।

অনুন্নত শ্রেনীর শিক্ষাবিস্তার ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়ননের ওপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছিলেন গুরুচাঁদ ঠাকুর। সামাজিক অস্পৃশ্যতা ও বর্ণহিন্দুদের বাঁধা অতিক্রম করে ১৮৮০ সালে ওড়িয়াকান্দিতে তিনি প্রথম বিদ্যালয় স্থাপন করেন। তাঁর প্রবল উৎসাহে মাত্র ১৮ বছরের মধ্যেই এটি প্রাথমিক স্তর হতে উচ্চ বিদ্যালয়ে উন্নীত হয়।

হিন্দু সমাজের মধ্যে অস্পৃশ্যতা দুরীকরণ ও শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে গণ আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন তিনি। তাঁর দীর্ঘ ৯০ বছরের জীবনে সর্বমোট ১৮১২ টি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাঙ্গালার গ্রামাঞ্চলে। ১৮৮১ সালে তাঁর উদ্যোগে ও সভাপতিত্বে খুলনার দত্তডাঙায় প্রথম নমঃশূদ্র মহা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। চন্ডাল জাতিকে নমশুদ্র জাতিতে উত্তরনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর চেষ্টায় একটি প্রতিনিধিদল ১৯০৭ সাকে বাংলা ও আসাম গভর্নর জেনারেলের কাছে এই মর্মে প্রতিবেদন পেশ করেন। ফলে ১৯১১ সালের জনগনায় নমশূদ্র নামটি পরিচিতি লাভ করেছিল। গুরুচাঁদ ঠাকুরের মৃত্যুর পর এই আন্দোলনের দায়িত্ব নেন প্রমথরঞ্জন ঠাকুর। দেশবিভাগের পর তিনি ভারতে চলে আসেন এবং মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান কেন্দ্র গড়ে ওঠে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার ঠাকুরনগরে।

মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে পশ্চিমবঙ্গের ঠাকুরবাড়ি ও মতুয়া ধাম বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। মতুয়া ধাম ঠাকুরনগর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ১ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। প্রতিবছর চৈত্র মাসে মতুয়া সম্প্রদায়ের গুরু হরিচাঁদ ও তার পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুরের আদর্শে মতুয়া ধামে মতুয়া মহামেলা বসে।

শ্রদ্ধেয় শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুর ১৯৩৭ সালে পরলোকগমন করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.