[ বিশ্বময় এখন ‘হিন্দু’ দেখতে শুরু করেছে বামেরা! রজ্জুতে সর্পভীতি। অথচ বিশ্ব-সন্ত্রাসীদের ধর্ম নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই! ওদেরই ন্যারেটিভ — ব্রিটেনে যা ভাবা যায়, ভারতে নাকি তা ভাবা অসম্ভব! প্রকারান্তরে বার্তা এই, ভারতে অহিন্দু/অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের পক্ষে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদে যাওয়ার ভাবনা একেবারেই অসম্ভব! কিন্তু সত্যিই কি তাই? বামেরা কেন বলছে এসব কথা? বামেরা আসলে কোন্ ধর্মের প্রতি দুর্বল আর কোন ধর্মই বা তাদের চক্ষুশূল? তা নিয়েই প্রস্তুত আলোচনা। ]
বোঝাই যাচ্ছিল পোড়ানারাঙ্গায় মলম লাগবে! তবে এতটা যে জ্বলবে ভাবা যায় নি! সুনক প্রধানমন্ত্রী হতেই বাম-যবন মিলিতবাহিনী দহন জ্বালায় কাতর! অন্য ধর্মগ্রন্থ তবু বা সই, গীতা ছুঁয়ে শপথ নেওয়া যে ঘোর অন্যায়, ঠারেঠোরে তা বোঝাতে গেলে যে বুমেরাং হতে পারে, বুঝে সে পথ মাড়ায়নি বামেরা। কিন্তু গেয়ে রেখেছে ‘গরুকে পুজো করা ঋষি’ সম্পর্কে টিপ্পনী! বলেছে, তিনি “….প্রধানমন্ত্রী হতে পারছেন! কারণ, ওই দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র এবং সরকারি স্তরে ধর্মনিরপেক্ষতা আছে৷” বোঝাতে চাইছে মোদী অমিত শাহের ভারতবর্ষে তা নেই। ভারতে এটা সম্ভবও নয়৷ আলোচনায় সোনিয়া গান্ধীর প্রশংসাও করেছে বামেরা। অর্থাৎ এটা কেবল বামেদের জ্বালা শুধু নয়, কংগ্রেসসহ হরেক দলের সমভিব্যাহারের জ্বালা।
আগে বলে নেওয়া ভালো, ঋষি সুনকের কাছে ভারতবাসী হিসাবে আলাদা করে কিছু প্রত্যাশা নেই, থাকার কথাও নয়। সুনক ভারতীয় বংশোদ্ভূত হতে পারেন, তিনি হিন্দু হতে পারেন, কিন্তু তিনি একজন ব্রিটিশ নাগরিক। ব্রিটেনের স্বার্থ দেখাই তার কাজ। দুর্দিনে তাঁকেই ভরসা করেছে ব্রিটেন। তবে ভারতের প্রতি বরাবরের উন্নাসিক ব্রিটিশ নানান নঞর্থক ব্যাপারে এখন থেকে অতি-সক্রিয় হবে না, ব্যাস, এইটুকুই আশা করা যেতে পারে।
বাম লিবারেল গোষ্ঠী যা দেখাতে চাইছেন, যে লাইনটাতে আক্রমণ করতে চাইছেন, তা হল, ঋষি-রাজ ব্রিটেনে এভাবে সম্ভব হলেও অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান-রাজ ভারতে সম্ভব নয়।
ঋষি সুনক ভারতীয় পরিবারের বংশোদ্ভূত হলেও, তিনি ভারতীয় নন। এখন ‘বংশোদ্ভূত’ কথাটির মধ্যে আধুনিক মনস্তাত্ত্বিক বিষয়টি যদি ধরে নিই, নারী পুরুষের সমানাধিকারের কথাই যদি বলি, তবে বলতে হয় একজন ছেলে বা মেয়ে যতটা বাবার সন্তান, ঠিক ততটাই মায়েরও সন্তান। ঋষি সুনক পিতৃমাতৃত্বের পরিচয়ে যতটা হিন্দু; ‘কংগ্রেস যুবরাজ’ রাহুল গান্ধী ঠিক ততটাই ইতালীয়।
ঋষি যেখানে নির্বাচনে ব্রিটেনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পেয়েছেন, ভারতে রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও ততটাই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পেয়েছেন। তফাৎ একটাই, ঋষির ব্যক্তিগত সাবজেক্টের প্রতি, এমনকি পেশাগত জীবনেও যে মুন্সীয়ানা এবং দক্ষতার প্রকাশ ছিল, আছে এবং দেখাতে পেরেছেন, রাজনৈতিকভাবে যেভাবে তিনি সঙ্গতিপূর্ণ এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে উঠেছেন; রাহুলের অথবা প্রিয়াঙ্কার সেই দৃঢ়তা, ঘনত্ব, ধারাবাহিকতা কোনোটাই নেই। ব্রিটেনে ঋষি প্রাথমিকভাবে একজন MP, তারপর তিনি একজন প্রধানমন্ত্রী।
একইরকম ভাবে আমাদের দেশে রাহুল বা প্রিয়াঙ্কা MP হওয়ার দৌড়ে লড়েছেন, একাধিকবার জিতেছেন, হেরেওছেন। সেইটুকু স্বাধীনতা ভারতবর্ষে, এমনকি মোদী-অমিত শাহের ভারতবর্ষে প্রত্যেকে পেয়েছেন, তারা বিদেশী রক্ত গায়ে নিয়েও, বিদেশী বংশোদ্ভূত হওয়া সত্ত্বেও। ‘বংশ’ কথাটায় মনে রাখতে হবে, বাবা অথবা মা, উভয়কেই আমরা বংশ হিসাবে মনে করবো।
অতএব রাহুল বা প্রিয়াঙ্কা প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন না, রাজনৈতিকভাবে অথবা সাংবিধানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী হতে দেওয়া হত না, এমনটা নয়। কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করাও হয়নি। বরং তারা বা অন্য আরো কেউ নিজের যোগ্যতার অভাবেই বা ক্যারিশ্মার অভাবেই প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। কিন্তু সুনক ব্রিটেনে যোগ্যতার বিচারেই প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। যোগ্যতার অভাব রাহুল-প্রিয়াঙ্কাকে তা অধরা রেখেছে। তফাৎ এইটুকুই।
এখন কং-বাম ন্যারেটিভ রাইটারদের কী এমন ভীমরতি হল যে, অযোগ্যদের জন্য কথাতেই জগৎ মেরে দিচ্ছেন! কথার জালে জড়িয়েই প্রধানমন্ত্রীত্বের দৌড়ে লেলিয়ে দিচ্ছেন!
বোঝা যাচ্ছে, ২০১৪ থেকেই একটা জ্বালা, যন্ত্রণা, আকাঙ্ক্ষা বিরোধীমহলকে কুরে কুরে খাচ্ছে! বামপন্থীদের দিয়ে তাই তারা কী ফোকাস করতে চাইছে, সেটা সকলকে বুঝে নিতে হবে। তাই ‘হিন্দু’, ‘হিন্দু’ বলে মূল ফোকাসকে ঘুরিয়ে দেবার চেষ্টা চলছে। আচ্ছা, ভারতবর্ষে কি অহিন্দু রাষ্ট্রপতি হননি কখনও? সেটাও কি সাংবিধানিক সর্বোচ্চ পদ নয়? জাকির হোসেন (১৩ ই মে, ১৯৬৭ – ৩ রা মে ১৯৬৯), মহম্মদ হিদয়েতুল্লা (২০ শে জুলাই, ১৯৬৯ — ২৪ শে আগস্ট ১৯৬৯), ফকিরুদ্দিন আলি আহমেদ (২৪ শে আগস্ট, ১৯৭৪ — ১১ ই ফেব্রুয়ারী,১৯৭৭), এ. পি. জে. আবদুল কালাম (২৫ শে জুলাই, ২০০২ — ২৫ শে জুলাই, ২০০৭) ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে আসীন ছিলেন। ভারতের বহু এম.পি, বহু মন্ত্রীর নাম জানা যায় যারা অহিন্দু; তাদের যে কেউ যোগ্যতা থাকলে প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। প্রধানমন্ত্রী হবার জন্য সাংবিধানিকভাবে একজন এম.পি হওয়া ব্যতিরেকে আর এক্সট্রা বা এডেড এক্সামিনেশনে পাশ করতে হয় না, কোয়ালিফিকেশনও লাগে না।
M.P হিসাবে ভারতবর্ষে বহু খ্রিস্টানকে দেখা যায়, বহু মুসলমানকেও দেখা যায়। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে সুনক পার্লামেন্টে ঢোকার যে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন, আমাদের দেশ তো বরং অনেক বেশি লিবারেল, সে সুযোগ অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ পান৷ তাছাড়া ভারতের লোকসভায় নিয়ম করে দুইজন অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের জন্য সীট বরাদ্দ, যেখানে খুব পরিচিতদের মধ্যে জর্জ বেকারের নাম আপনারা শুনেছেন৷ তারাও এম.পি। কাজের যোগ্যতা থাকলে তারাও প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন, বাধা ছিল না কোনো। এই অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের বাবা বা মা ভারতের বাইরের কেউ হতেই পারেন! ব্রিটেন অথবা ভারতের বাইরের কোনো দেশের। এই সুযোগ, সহমত বা সাপোর্ট তো ভারতীয় গণতন্ত্র, সংবিধান বহুকাল ধরে দিয়ে আসছে। মোদী-অমিত শাহের ভারতবর্ষে তা বন্ধ হয়ে যায়নি। তাদের মধ্যে যে কেউ যোগ্যতাবলে P.M. হতে পারতেন। কিন্তু পারেননি, তা তাদের ডিসক্রেডিট; বিজেপি সরকারের নয়, মোদী-অমিত শাহেরও নয়৷ ফলে কংগ্রেস সমর্থিত বামপন্থীদের এই সংক্রান্ত অপপ্রচার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অবান্তর এবং অশোভন। ভারতবর্ষের মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ভারতবিরোধী বামেরা এবং তাদের দোসরেরা আর কতদিন ভারতের মাটিতে অসত্যের শিলালিপি আঁকবেন? Enough is enough. এবার জবাব দিন।
কল্যাণ গৌতম।