দিব্যাঙ্গরা বিশেষ ভাবে সক্ষম, তাই জন্মান্ধ পদকর্তা সন্ত সুরদাসের জন্মদিন পালন করলো ‘সক্ষম’।

মিলন খামারিয়ার প্রতিবেদন, কলকাতা, ১৯ শে মে, ২০২১।

দিব্যাঙ্গের অধিকারী মানুষ যে আত্মশক্তিতে আর ভগবতসাধনায় উজ্জীবিত হয়ে অসাধ্য সাধন করতে পারেন, তা সন্ত সুরদাস (১৪৭৮-১৫৮৩) নিজের জীবনচর্যা ও মানসচর্চায় প্রমাণ করে গেছেন। জন্মান্ধ এই পদাবলী রচয়িতা ও সঙ্গীতজ্ঞ ১০৫ বছর বেঁচে ছিলেন। তিনি মধ্যযুগীয় ভক্তিবাদী আন্দোলনের এক অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব; তিনি ‘পুষ্টিমার্গীয় ভক্তি’-র প্রচারক। এই পথে ভক্তের উপর ভগবানের কৃপার নাম পোষণ বা পুষ্টি। এই পুষ্টি নিবৃত্তির উপদেশ দেয় না। দেয় জীবনের প্রতি গভীর প্রেম, আশা ও আনন্দের প্রেরণা। একজন জন্মান্ধ যদি জীবন সংগ্রামে হেরে না যান, তবে দিব্যাঙ্গের অধিকারী কোনো মানুষেরই জীবনে হেরে যাওয়ার নন। এটা বোঝাতেই ‘সক্ষম’ নামক সর্বভারতীয় এক অরাজনৈতিক সংগঠন ভারতব্যাপী ‘সুরদাস জয়ন্তী’ পালন করেছে গত ১৭ ই মে। এই উপলক্ষে ‘সক্ষম’-এর দক্ষিণবঙ্গ শাখা একটি ওয়েবিনারের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কল্যাণ চক্রবর্তী। উপস্থিত ছিলেন ‘সক্ষম’-এর রাষ্ট্রীয় সাধারণ সম্পাদক শ্রী কমলাকান্ত পাণ্ডে এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের দক্ষিণ বঙ্গের সহ প্রান্ত প্রচারক শ্রী প্রশান্ত ভট্ট মহোদয়।

এ-দিন কুমারী শ্রীতমা ঘোষের উদ্বোধনী সঙ্গীতের মাধ্যমে সভার শুভ সূচনা হয়।তারপর দেশব্যাপী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতদের প্রতি শোক এবং শান্তি কামনা করা হয়।

প্রাথমিক কার্যক্রমের পর এই সভায় ‘সন্ত সুরদাসজীর জীবনী ও তার থেকে শিক্ষা গ্রহণ’ সম্বন্ধে আলোচনা করেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক,বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কল্যাণ চক্রবর্তী।এছাড়া ‘নেত্রদানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন ‘সক্ষম’-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শ্রী কমলা কান্ত পান্ডে।উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের সহ-প্রান্ত প্রচারক শ্রী প্রশান্ত ভট্ট।তিনি বর্তমান ‘করোনা মহামারি’ পরিস্থিতিতে কীভাবে সেবাকার্য করা হচ্ছে – তার বিবরণ তুলে ধরেন।

শ্রী কমলা কান্তজীকে বলেন যে,-” দেশের মানুষকে চক্ষুদানের মতো মহৎকর্মে এগিয়ে আসার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করতে হবে।যেমন ভাবে আজ সেচ্ছায় মানুষ রক্তদান করতে এগিয়ে আসেন তেমন চক্ষুদান করতেও এগিয়ে আসার জন্য মানুষকে সচেতন করতে হবে।তারজন্য জন-জাগরণ ও গণ-আন্দোলন করতে হবে আমাদের।একজন মানুষও যে-দিন দৃষ্টিহীন থাকবে না সে-দিন সক্ষম এর উদ্দেশ্য চরিতার্থ হবে।”

দেশের মানুষকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দেবার মতো একটি মহৎ কাজ করে চলেছে ‘সক্ষম’।প্রায় ১৪০ কোটির মানুষের দেশে মাত্র ৩০ লক্ষ ‘কর্ণিয়া অন্ধত্ব’ মানুষ এই সুন্দর পৃথিবীকে দেখতে পাবেন না!যেখানে প্রায় প্রতি বছর ১ কোটি মানুষের মৃত্যু হয় ভারতে।তাদের চোখকে সংরক্ষণ করে রেখে এই ‘কর্ণিয়া অন্ধত্ব’ মানুষদের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেবার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ‘সক্ষম’।তাদের গণ-আন্দোলনের মাধ্যম দিয়েই মানুষ সচেতন ভাবে চক্ষুদানের মতো মহৎকর্মে অংশগ্রহণ করুক।এ ভারত তথা পৃথিবী সুন্দর হোক সকলের দৃষ্টির মধ্যে দিয়ে।

অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ‘সক্ষম’-এর প্রান্ত সভাপতি ডাঃ সনৎ কুমার রায়, সহ-সভাপতি ডাঃ তরুণ কুমার সরকার, সচিব অনীক ব্যানার্জী ও বিশিষ্ট চিকিৎসক মন্ডলী।অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন শ্রীমতী কল্যাণী ব্যানার্জি।অনুষ্ঠান শেষে ‘বন্দেমাতরম’ গীত পরিবেশন করেন অরিন্দম উপাধ্যায় মহোদয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.