আবার এসেছে আগস্টআকাশ ছেয়ে ।।

প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস,
ভারতের স্বাধীনতা দিবস,
মুজিব হত্যা দিবস এবং হাসিনার পতন ও পলায়ন দিবস কি কোনো ভাবেই সম্পর্কযুক্ত নয়!!আমি মানে আমরা মানে আপনারা সবাই কিন্তু ভাবছি , ভাবছি এবং ভাবছি। ওপরের ঘটনাবলীর সবই কিন্ত্ত আগস্টের কালো ডায়েরিতে লেখা। সবত্রই এক মৌলবাদের আগ্রাসী লালসা আর তাতেই ইন্ধন কোথাও জিন্নার বা সূরাবর্দির মতো স্বৈরাচারী মুসলিম শাসকের বা হিন্দু ছদ্মনাম ধারী রাষ্ট্র শাসকের।
জিন্না থেকে জামাত – সব জমায়েতে সেই এক “হিন্দু হানো”র ডাক।

আগস্ট ১৯৪৬ থেকে শুরু করে, ভারত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার হিংস্র তরঙ্গ প্রত্যক্ষ করতে শুরু করে, বিশেষ করে বিহার, পাঞ্জাব এবং বাংলায়। দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং একটি হলোকাস্টের মতো যা শহর কলকাতা কখনও দেখেনি, যা বাংলার ‘বিভাগ দাঙ্গা’ বলে অভিহিত করা হয়। বিশেষ করে দাঙ্গাকারীদের অংশগ্রহণের নারকীয় পদ্ধতি,
হিংস্রতা এবং বিপরীতে সাম্প্রদায়িক শান্তি প্রচেষ্টার হাস্যকর পারস্পরিক নির্ভরতা। আমি আমরা ও আপনারা শত এবং সহস্র কোটি কন্ঠে যেন উম্মুক্ত মঞ্চে নিন্দা ও ধিক্কার না করি বরং সুরাবর্দির মতো মৌলবাদী শাসকদের বর্তমান প্রজন্মের মুখেও থুতু দিয়ে আসি।
শ্যামাপ্রসাদ বাংলাকে মুসলিম অধিক্যর কারণে পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্ত করণ যে প্রশংসনীয় ভাবে আটকে দিয়েছিলেন ততোধিক নিন্দনীয় ভাবে ভারতের অভ্যন্তরে থেকেও মৌলবাদী মুসলিম নেতারা ও মেকি সেকুলঙ্গার কংগ্রেসী ও স্বাধীনতা সংগ্রামে দর্শক আসনে উপবিষ্ট বাম মানসিকতার হিন্দু নেতারা ভারত বিভাজন আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও হোতা ও সমর্থক ছিলেন। ভারতকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করার এক ভিন্ন মানসিকতা — সময় কালও হয়তো ভিন্ন।।

আমর দেখেছি যে কীভাবে ওয়েভেল প্ল্যান সংক্রান্ত সাংবিধানিক অচলাবস্থা এবং ক্যাবিনেট মিশন দ্বারা পাকিস্তানের অগ্রহণযোগ্যতা জিন্নাহকে শেষ পর্যন্ত ডাইরেক্ট অ্যাকশনের কালো ভাবনা ও সুরবর্দির মাধ্যমে পৈশাচিক হিন্দু নিধন লীলা সংঘটিত করার দিকে এগিয়ে দেয়। মুসলিম লীগ সমর্থকরা পাঁচ লাখ লোকের ভিড় টানে ‘কলকাতার সংখ্যালঘু মুসলমানদের জন্য, শহরের শিল্প ওয়ার্ডের জনাকীর্ণ ও নোংরা বস্তি থেকে আসা অনেকের জন্য, শহরের সবচেয়ে পবিত্র নাগরিক স্থানটি দখল করা হয়ে ছিল, ভিড়কে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রায় এক হাজার মুসলিম ন্যাশনাল গার্ড স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করা হয়েছিল, এবং মুখ্যমন্ত্রী সুরাবর্দী, স্যার নাজিমুদ্দিন এবং অন্যান্য নেতৃস্থানীয় মুসলমানরা বক্তৃতা করেছিলেন। যাদের সকলেই পাকিস্তানের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন। ক্যাবিনেট মিশনকে ‘ব্লাফ’ আখ্যা দিয়ে সুরাবর্দী
উল্লেখ করেন যে ডাইরেক্ট ‘অ্যাকশন ডে’ ই একমাত্র মুসলিম মুক্তির প্রথম পদক্ষেপ।

মাউন্টব্যাটেনের সূত্র ছিল ভারতকে বিভক্ত করা এবং একই সাথে সর্বোচ্চ সম্ভাব্য ঐক্য বজায় রাখা। আবুল কালাম আজাদ সহিংস দাঙ্গার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন, যার উত্তরে মাউন্টব্যাটেন বলেছিলেন:
“অন্তত এই প্রশ্নে আমি আপনাকে সম্পূর্ণ আশ্বাস দেব। রক্তপাত ও দাঙ্গা যেন না হয় সেদিকে নজর রাখব। আমি একজন সৈনিক এবং বেসামরিক নই। বিভাজন নীতিগতভাবে মেনে নেওয়া হলে দেশের কোথাও যেন কোনো সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলা না হয় সে জন্য আমি আদেশ জারি করব। যদি সামান্যতম আন্দোলন হয়, তবে আমি কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করব যাতে অঙ্কুরে সমস্যাটি ছিটকে যায়। “
কিন্তু মৌলবাদের যে বীজ অনেক আগেই বপন করা হয়েছিল তাতেই সিলমোহর দিয়ে সেই হিন্দু সংহার লীলার বিভীষিকার পরের বছরের সেই আগস্টেই দেশ ভাগ করে এলো স্বাধীনতা।

পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন অর্জনের প্রয়াস এবং পরবর্তীকালে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পেছনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে দেখা হয় ও কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে বাংলাদেশের “জাতির জনক” বা “জাতির পিতা” হিসেবে অভিহিত করা হয়।।

“কিন্তু হায়রে –
আগস্ট আবার আসিল ফিরে”

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একদল সদস্য সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত করে এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির বাসভবনে সপরিবারে হত্যা করে। পরে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ থেকে ৬ নভেম্বর ১৯৭৫ পর্যন্ত খন্দকার মোশতাক আহমেদ অঘোষিতভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির হন। শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের বেসামরিক প্রশাসনকেন্দ্রিক রাজনীতিতে প্রথমবারের মতো সামরিক ক্ষমতার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ ঘটে।হত্যাকাণ্ডটি বাংলাদেশের আদর্শিক পটপরিবর্তন বলে বিবেচিত হয়। লরেন্স লিফশুলৎজ এই হত্যাকাণ্ডের সামগ্রিক ঘটনাবলিকে মার্কিন-পাকিস্তানপন্থী ও ভারত-সোভিয়েতপন্থী দুই অক্ষশক্তির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার স্নায়ুযুদ্ধের সহিংস বহিঃপ্রকাশ বলে আখ্যায়িত করেন।

সেই কালো অগাষ্ট আবারো এলো বাংলাদেশে। হাসিনার দেশত্যাগ ও পরবর্তীতে রাজপথ, রাজ প্রাসাদ সবই চলে গেলো ছাত্র আন্দোলনের মুখোশধারী জামাতপন্থী ও খালেদাপন্থীদের হাতে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতা ও হিন্দু সংখ্যালঘুদের হত্যা , দোকানঘর, বাসস্থান পড়ানো ,ধর্ষণ, মন্দির ও দেবীমূর্তি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা কজন জানেন। সকলে জানেন জেসিপি দিয়ে মুজিবের মূর্তি ভাঙ্গা হয়েছে। নীরব দর্শকও মৌন থেকে এই নারকীয় লীলায় সমর্থন দিয়েছে জামাতপন্থী বাংলাদেশি সেনা। ব্যাপারটা কেবলই ছাত্র আন্দোলন নয় বরং ভারত বিদ্বেষী একাধিক বিদেশি শক্তি যারা আওয়ামী লীগের পতন ঘটিয়ে তাদের হাতের পুতুল কোনো সরকার ও সুবোধ বালকের মতো কোনো রাষ্ট্র নায়ক বসিয়ে নিজেদের ব্যবসায়িক, আন্তর্জাতিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য স্বার্থক করবে।সাম্প্রতিক কালে ঘটে চলা প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের অছিলায় সংখ্যালঘু হিন্দুদের জীবন , সম্পত্তি, নারীদের সম্ভ্রম অতিশয় বিপন্ন। সারা বাংলাদেশ জুড়ে হিন্দুদের ওপর নারকীয় অত্যাচার চলছে অবাধে।
হিন্দু পুরুষ খুন, হিন্দু নারীদের সম্ভ্রম লুণ্ঠন চলছে সেনা ও পুলিশের প্রচ্ছন্ন মদতে।হিন্দু পৌরপিতাকে প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করে রাস্তায় উল্টো করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে, ইসকনের মন্দির , কালী মন্দির , কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মূর্তি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আসলে আমি, আমরা ও আপনারা সবাই জানি ঘরে ধর্ষণ হলে নীরব থাকাই ভালো। এই করেই ধর্ষণ হলেও গর্জন করার শক্তি আমাদের হারিয়ে গেছে। ওপরে সংখ্যালঘু থেকে এপারেই সংখ্যালঘু হতে চলেছি। ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় মাদ্রাসার রমরমা চলছে, সেখানে ছোটো থেকে শিশুদের হিন্দু বিদ্বেষী করে তোলা হয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অথচ আমাদের শিক্ষা লাভ করতে গিয়ে আমাদের সনাতনী ধর্মের কিছু কি জেনেছি? বিদ্যা শিক্ষার মাধ্যমে কোনো ধর্মাচরণ কি কোনো শিক্ষক পালন করিয়েছেন? দেশের রক্ষার জন্য কোনো বিষয় পড়েছি না পরীক্ষা দিতে হয়েছে? আমাদের কতো জনের বাড়ীতে শিশুদের পূজা পাঠের দিকে আগ্রহী করে তোলা হয়? তাই এই আত্মমুখী স্বার্থপর হিন্দুরা আক্রান্ত হয়েও মাথা নিচু করে আপোস করছে।

মুসলিম চরমপন্থী মৌলবাদীদের পূর্ব পরিকল্পিত পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশকে হিন্দুশুন্য করে দেওয়ার চক্রান্ত যেমন চলছে সেরকমই কায়দায় এই রাজ্যেও সন্দেশখালী, কালিয়াচক, কামদুনি, দারিভিট এর মতো স্থানে স্থানে হিন্দুদের উপর আক্রমণ করার মতো সাহস দেখাতে পারে ওই মৌলবাদী শক্তির মদত পুষ্ট কুচক্রী ভারত বিদ্বেষী গোষ্ঠী।।

তবে আমি মানে অমরা ও আপনারা আশঙ্কা করছি আবারো কোনো আগস্টের কালো দিনে এখানেরও কোনো স্বৈরাচারী শাসনের অবসান হবে, রাজপথ থেকে রাজতোরণ থেকে মহাকরণে ইসলামিক জয়ধ্বজা
পতপত করে উড়বে। কাঁদবে হিন্দু , আসবে অগাষ্ট।

                      সৌমিত্র সেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.