বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর জন্মদিনে যে কথা বলা দরকার

গত প্রজন্মের বাঙালি (হিন্দু) বুদ্ধিজীবীরা বাংলাভাষাকে সম্মান দেন নি, তাই কম মেধার বাংলাদেশীরা বাংলার দখল নিয়েছেন।

পয়লা জানুয়ারি। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার অনন্য উৎসাহী আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসুর আজ জন্মদিন। অথচ এখনও বাংলা ভাষায় ভালো পাঠ্যবই নেই। ইংরেজি-ভাষায়-গর্বিত বাঙালিরা নানান বিদ্যাশৃঙ্খলায় বাংলা ভাষায় বেস্ট বই কেন লিখতে পারবেন না? আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু বলতেন, যে বাঙালি বিজ্ঞানী আপন ভাষায় বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ লিখতে পারেন না, তারা হয় বাংলা জানেন না, অথবা বিজ্ঞানটা জানেন না। আজ সত্যিই মনে হয়, কম জেনে, কম বুঝে সেই সমস্ত বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা নিজেদের দর বাড়িয়েছেন, এখন তাদের অনেকেই আস্তাকুঁড়ে পড়ে রয়েছেন।
ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, কৃষিবিজ্ঞানের উন্নত মানের বই লিখে বাঙালি তার আগের জেনারেশনের বুদ্ধিজীবীদের কাজকর্মের প্রায়শ্চিত্ত করুক। বাংলা ভাষায় পঠন-পাঠন ও গবেষণার কাজ শুরু হোক। বাঙালি জাতিসত্ত্বা নিয়ে তবে তারা লড়াই করুন।

বাঙালির জাতিসত্ত্বা কেড়ে নেওয়া নিয়ে যে অভিযোগ আজ উঠছে, তার মূল কারণ হল বামপন্থী বাঙালি বুদ্ধিজীবী, উচ্চপদস্থ বাঙালি-আধিকারিক, আত্মপ্রসাদ-অভিলাষী বাঙালি-গবেষক, বিদেশী-ভাষায়-গর্বিত অধ্যাপকদের বাংলা ভাষার প্রতি প্রবল অশ্রদ্ধা। তাদের মুখে ‘বাংলা আমার আসে না’ বলার স্পর্ধা!
ফলে বিদেশী ভাষায় সমূহ লেকচার, গবেষণা-পত্র, কথোপকথন করে বাংলাকে অবহেলা করার সুযোগ পুরোদমে নিয়েছে বাংলাদেশের কম মেধার বুদ্ধিজীবীরা। তারা অনেকানেক নিম্নমানের বইপত্র, গবেষণাপত্র নিয়মিত বাংলা ভাষায় ছাপিয়েছেন, আলোচনা-সভা আয়োজন করেছেন বাংলা ভাষায়, এমনকি নেট দুনিয়ায় বাংলা ভাষায় বহু বিষয়ের নিবন্ধ-প্রবন্ধ আপলোড করে এসেছেন, যা অনেক সময়ই সুখপাঠ্য হয় না। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে তাদের হেপাজতে নেবার চেষ্টায় বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবীদের অবদান অস্বীকার যেমন করা যায় না, সে সুযোগে বাংলার মধ্যে আরবী, ফার্সী, উর্দূ-র অনাবশ্যক সমাহারের দুর্বৃত্তিও তাদেরই মস্তিষ্ক-প্রসূত। এখন কোনো প্রয়োজনে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানের পাঠ নিতে গেলে নেটে নিম্নমানের লেখা একের পর এক উঠে আসে। বলি, কয়েক দশক আগেও যে বাঙালি বিজ্ঞানী/অধ্যাপক/বুদ্ধিজীবী বাংলা ভাষায় কথা বলতে লজ্জা পেতেন, তাদের কে মনে রেখেছে? অথচ সাবির, আমজাদ, কামালুদ্দিনের (নামগুলি সবই কাল্পনিক) নামে রকমারি দরকারি পোস্ট নেটে হাত দিলেই ভেসে ওঠে; সেই নিম্নমানের, অসজ্জিত বাংলা লেখা এক অনুচ্ছেদ পরে আর পড়তে ইচ্ছে করে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.