১.
কাশীদাসী মহাভারতের আদিপর্বে বিষ্ণুর পরশুরাম অবতার গ্রহণ সম্পর্কে পর্বাধ্যায় রয়েছে। তা থেকে জানা যায়, পৃথিবীব্যাপী ক্ষত্রিয়গণ কদাচারে মহামত্ত হলে জনার্দন শ্রীবিষ্ণু লোকহিংসা সহ্য করতে পারলেন না।
“পৃথিবীর মধ্যে ক্ষত্র হইল অপার।
মহামত্ত হৈয়া সবে করে কদাচার।।”
সেই প্রেক্ষিতেই ভৃগুবংশে জমদগ্নি কুমাররূপে তাঁর আবির্ভাব হল, পরশুরাম; হাতে কুঠার, বারংবার তিনি পৃথিবীকে নিঃক্ষত্রা করে তা সাধারণ মানুষের বাসযোগ্য করে তুললেন।
“করেতে কুঠার জমদগ্নির কুমার।
নিঃক্ষত্রা করিল ক্ষিতি তিন সপ্ত বার।।”
অত্যাচারী ক্ষত্রিয় নিধনে গিয়ে পৃথিবীতে কোনো ক্ষত্রিয়কেই বাদ রাখলেন না তিনি, এমনকি ক্ষত্রিয় বংশের দুধের শিশুটিকেও হত্যা করলেন। সাধারণ মানুষকে রক্ষা করার জন্যই কদাচারী ক্ষত্রিয় শাসকদের একে একে সবংশে বিনাশ করতে লাগলেন।
“ক্ষত্র ব’লে ক্ষিতি মধ্যে না রাখিল রাম।
মারিল দুগ্ধের শিশু ক্ষত্র যার নাম।।”
এরপর ব্রাহ্মণের হাতে রাজ্যপাট সঁপে দিয়ে তপোবনে গেলেন পরশুরাম। এদিকে ব্রাহ্মণদের দিয়ে রাজকার্য হচ্ছিলো না। কাজেই বিপ্রগৃহে ক্ষত্রিয় স্ত্রীগণ গমন করলেন, ফলে সমুৎপন্ন হল ক্ষেত্রজ তনয়।
“রাজকর্ম বিপ্রগণে সম্ভব না হয়।
সে কারণে সমুৎপন্ন ক্ষেত্রজ তনয়।।
ক্ষত্র মাতা বিপ্র পিতা হইল কুমার।
পুনঃ ক্ষিতিমধ্যে হৈল ক্ষত্রিয় সঞ্চার।।”
এভাবে পৃথিবীর রাজারা নিষ্পাপ হলেন, তাদের মধ্যে পরম ধার্মিকতা প্রবেশ করল, বংশ বাড়লো এবং ধর্মভাবে প্রজাপালন চলতে লাগলো। রাজ্যে রাজ্যে অকাল মৃত্যু রোধ হল। সবাই নিজ নিজ বৃত্তি অনুযায়ী কর্মে মনোনিবেশ করলেন। রাজারা রাজ্যশাসনগুণে দ্বিতীয় দেবরাজ হয়ে উঠলেন।
“পাপের প্রসঙ্গ নাহি, ধর্মেতে তৎপর।
সাগর অবধি ক্ষিতি পূর্ণ হৈল নর।।
স্বর্গের বৈভব পূর্ণ হৈল ক্ষিতিমাঝ।
রাজগণ হইল দ্বিতীয় দেবরাজ।”
(ক্রমশঃ)
চিত্র ঋণ : শ্রী শীর্ষ আচার্য
কল্যাণ চক্রবর্তী।