কল্যাণ চক্রবর্তী
তখন তাঁর নাম বেণী। যদিও ‘বেণী’ নামটি ছিল তাঁর না-পসন্দ। কারণ স্কুলে গিয়ে শিশুপাঠ ‘বেণী’র গল্পে পড়লেন — ‘বেণী বড় দুরন্ত ছেলে।’ স্কুলের বন্ধুরা তাই ক্ষেপাত, এই সেই দামাল-দুরন্ত বাচ্চা, যার নাম বইয়ের পাতায় আছে। ব্যাস, আর যায় কোথায়! বাড়িতে বাবাকে চেপে ধরলেন, নাম তাঁর বদলাতেই হবে, কোনো কথা শুনবে না। অবশেষে সমস্ত ভাইয়ের ‘প্রসাদ’ সংযোজক-নাম রাখা ঠিক হল, বেণীর তাই নতুন নাম হল ‘শ্যামাপ্রসাদ’।
যখনকার কথা বলছি, তখনও তিনি শিশু ‘বেণী’, স্কুলে যাওয়া শুরু হয় নি। বয়স প্রায় দুই বছর; উঠে দাঁড়াতে পারেন না, হাঁটতেও পারেন না, কোনোক্রমে বসতে পারেন, এক দু’টি কথা হয়তো বলতে পারেন। কিন্তু সেই বয়স থেকেই বেণী খেতে খুব ভালোবাসেন। নানান খাবারের মধ্যে আম পেলে তো কথাই নেই! গ্রীষ্মের মরশুমে তাকে রসালো-মিষ্টি পাকা নরম আম দেওয়া হত। হাতে রগড়ে ভেতরের শাঁস চুষে খাওয়ার উপযুক্ত করে তিনি একটি ফুটো করে নিতেন।
১৯০১ সালের ৬ ই জুলাই তাঁর জন্ম। ১৯০৩ সালের আমের মরশুমের কথা। সেদিনও একটা বড়সড় আম বেণীর হতে তুলে দেওয়া হয়েছে। পিতা আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, বিশাল বপু, তিনিও খেতে ভালোবাসেন। তবে দুই বছরের বাচ্চার হাতে এত বড় আম দেখে যোগমায়া দেবীকে একচোট বকে স্নান করতে চলে গেলেন। শিশু বাবার মুখের দিকে তাকায়, হয়তো মনে মনে ভাবে, তুমি আর আমার কী খবর রাখো! স্নান শেষ হল, আশুতোষ বেণীর পাশ দিয়েই ঘরে ঢুকবেন। অবাক বিস্ময়ে দেখলেন, কোলের শিশু আমটি খাওয়া শেষ করেছে, আঁটিটিও চেটে সাদা করে দিয়েছে। এবার আঁটি-খোসা ছুঁড়ে ফেলে, বাবার দিকে তাকিয়ে বলছে, “ঐ যাঃ!” আরেকটি পাকা আমের জন্য মায়ের কাছে হাত বাড়িয়েছে। বাবার দিকে এমন করে তাকিয়ে আছে যেন, আমি রোজ এবেলা-ওবেলা গোটা আম চুষে খাই; আজ আর নতুন কী!
১৯৪৫ সাল নাগাদ শ্যামাপ্রসাদ রহড়া রামকৃষ্ণ মিশনের অনাথ ছাত্রদের কাছে গিয়েছিলেন। পুরোনো আশ্রম বাড়ির সামনে প্রাচীন আমগাছের তলায় সামিয়ানা খাটিয়ে কাঠের মঞ্চ তৈরি হয়েছিল। তখন আমের শেষ মরশুম, বর্ষা শুরু হয়েছে। আশ্রম অধ্যক্ষ স্বামী পুণ্যানন্দের নির্দেশে ঠাকুরের ফলপ্রসাদ ও আশ্রমের বাগানের সুস্বাদু আম কেটে তাঁকে পরিবেশন করা হয়। জানিয়েছেন প্রাক্তন প্রয়াত আশ্রমিক বিধুভূষণ নন্দ।
(এখানে পরিবেশিত ছবিটি শ্যামাপ্রসাদের নয়, ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত একটি ছবি)