প্রণয় রায়ের স্মৃতিতে কিছু লিখতে হবে, এর থেকে কষ্টকর আর কিছু হয় না। ১৯৮৬ সালে যার জন্ম, সেই প্রানখোলা হাসিমুখের তরতাজা ছেলেটি চলে গেল। জানিনা করোনার অতিমারি আমাদের জন্য আর কতো হৃদয়বিদারক ঘটনা রেখে দিয়েছে?
সালটা ২০০৬ কি ২০০৭। সাহিত্য পরিষদ স্ট্রীটের ‘বিশ্ব সংবাদ কেন্দ্রে’ তখন চাঁদের হাট। প্রনয়, রাজু, মানব, প্রীতম আর ওদের বন্ধুরা। সকলের বয়সই কমবেশী কুড়ি বছর। লেখাপড়ায় ঝকঝকে, কেউ অঙ্কে, কেউ ফিজিক্স, একজন স্ট্যাটেসটিকস’এর বা কেউ ইকোনমিক্সে স্নাতকোত্তর করছে। সবাই সুব্রতদাকে ঘিরে জড়ো হোত। সুব্রত চট্টোপাধ্যায় তখন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের প্রচার প্রমূখ। সঙ্ঘ সমাচার আর নতুন তৈরী জাগরণ পত্র ‘শঙ্ঘনাদ’ ওই বাড়ি থেকেই প্রকাশিত হত।
প্রনয়ের বাবা বিহারে রেলে চাকরি করতেন। ওর জন্ম বিহারেই, কিন্তু পড়াশুনা বেশিরভাগটাই উত্তরবঙ্গের বালুরঘাটে। সেখান থেকে স্নাতক হয়ে কলকাতায় আসে। অল্প কিছুদিন দমদমের শিশুমন্দিরেও কাছে একটি ঘর ভাড়া করে থাকে। প্রনয় আর ওর ভাই প্রলয়। সেইসময় শিশুমন্দিরে আচার্য প্রনব বর আর কাশীনাথ নন্দীরা শিশুমন্দিরেই থাকতেন। তখন সংস্কৃতভারতীর প্রান্ত সংযোজক প্রণব নন্দ প্রায়ই যেতেন সেখানে। আসলে দমদমের যে বাড়িটাতে শিশুমন্দির সেটা মাননীয় সঙ্ঘচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মনোজ ঘোষের আবাসস্থল ছিল। তাই এতদঞ্চলের স্বয়ংসেবকদের কাছে তীর্থক্ষেত্রের মতো ছিল সেই বাড়িটা। প্রণয় প্রণবদার মতো অনেকেরই একান্ত ভালোবাসার ছেলে উঠল।
প্রণয় অনেকগুলি ছদ্মনামে লিখতো। ওর খুব পছন্দের ছদ্মনাম ছিল, ঐন্দ্রিলা মুখোপাধ্যায়। এইনামে ও একটি ধারাবাহিক লিখেছিল, “ইতি তোমার মা”। ছাত্রাবাসে থাকা এক কিশোর ছেলেকে চিঠিতে তার মা বাংলার বীর সন্তানদের চেনাচ্ছেন।
এই ধারাবাহিক লেখাগুলি নিয়ে “বীর বাঙালি ” নামে একটি পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়েছিলো।
চিরকালই মেধাবী ছিল প্রণয়। খুব অল্পবয়েসেই রেলে চাকরি পেয়ে যায়। কিন্তু রেলের চাকরি করতে করতেই ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। অবশেষে ২০১৪ সালে ডাব্লুবিসিএস হিসাবে চাকরিতে যোগ দেয়।
প্রণয়ের চরিত্রের সবথেকে আকর্ষণীয় বিষয় ছিল ওর সদা হাস্যময় স্বভাব। ও নিজের নাম কখনোই চাইতো না। সমাজের কাজ করে কিছুই পাওয়ার আশা করতো না।
কিছুদিন মাত্র সংসার শুরু করেছিল ছেলেটি। প্রণয়ের হাসিমুখ, সেই প্রাণখোলা ডাক আর শুনতে পাবো না!
জিষ্ণু বসু