ছবিটা করুণ। পরাজয় নিশ্চিত জেনে খেপে উঠেছেন, অসংলগ্ন কথা বলায় ‘জাতীয় ভাঁড়’ পাপ্পুকেও যেন হার মানাচ্ছেন। কোটি কোটি মানুষের নয়নের মণি থেকে চক্ষুশূল হয়ে গেছেন টের পেয়ে যেন ন্যূনতম চক্ষুলজ্জাটাও লোপ পেয়েছে।
সত্যিই খারাপ লাগছে, কারণ আমরা খুব বিশ্বাস করেছিলাম এই লড়াকু মানুষটিকে। বানতলা ধানতলা সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের বিপ্রতীপে একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে পরম ভরসা করে বাঁচতে চেয়েছিলাম। তার বদলে পার্কস্ট্রীট, কামদুনি, ধূপগুড়ি, মালদহ, মুর্শিদাবাদ ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদির মতো একের পর এক নারকীয়তা সম্পর্কে ছোটখাটো অন্তর্ঘাত, মাওবাদী ষড়যন্ত্র, বিরোধীদের অপপ্রচার এবং সর্বোপরি শরীর থাকলে অসুখের মতো এসব হবেই শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেছি। অপরাধীকে নিরাপত্তা দিয়ে নির্যাতিতা বা মৃতার পরিবারকে পুলিসি হেনস্থার সাক্ষী হয়ে নিষ্ফল আক্রোশে ফুঁসেছি।
দুধেল গোরুর নির্লজ্জ কিন্তু দর্পিত স্বীকারোক্তি শুনেছি প্রকাশ্যে, তাৎক্ষণিক তিন তালাকের মতো অনৈতিক বৈষম্যবাদী আইন বজায় রাখার সবরকম প্রচেষ্টা দেখেছি, দিনের পর দিন হিংস্র মৌলবাদীদের ও সন্ত্রাসীদের শুধু তোষণ নয় বেলাগাম যথেচ্ছাচারের ঢালাও অনুমোদন পেতে দেখেছি। সেই সঙ্গে দুর্নীতির বিশ্ব রেকর্ড।
আসলে ক্ষমতায় টিকে থাকতে গিয়ে তিনি বাঘের পিঠে আরোহণ করেছিলেন। সেখান থেকে নামতে গেলে বাঘের পেটে যেতে হবে।
কোনও অশালীন মন্তব্য করা আমার নীতি বিরুদ্ধ। কিন্তু সত্যি বলতে কী, নিজের সাদা শাড়িকে নিষ্কলুষ ও যথাস্থানে রাখার বিনিময়ে সারা রাজ্যে হিংস্রতম দুষ্কৃতীদের এন্তার যথেচ্ছ নারী মৃগয়ার ছাড়পত্র দিয়েছেন। যেমন যেসব মহিলা নারী পাচারের আড়কাঠির কাজ করে, তারা নিজেরা বিপন্ন হয় না, সম্পন্ন হয়ে থাকে।
‘দুধেল গোরু’র মতো মাতৃতুল্য উপকারী প্রাণী এখন ঘৃণ্যতম অপরাধপ্রবণ গোষ্ঠীর রূপক। সত্যিই কষ্ট হচ্ছে।
অথচ যাঁকে পশ্চিমবঙ্গের জনতা এতটা সমর্থন ভালোবাসা দিয়ে ভরসা করেছিল, তাঁর এইসব করার দরকার ছিল না। অনুপ্রবিষ্টদের সিপিএম ভোটার বানাচ্ছে– এই অভিযোগে যিনি লোকসভায় অসংযত হয়ে পড়েছিলেন, তাঁকে তো পশ্চিমবঙ্গের জনতা অনুপ্রবেশে রাশ টানা হবে ভেবেই ভোট দিয়েছিল, বাংলাদেশী থেকে রোহিঙ্গা পর্যন্ত যাকে তাকে এনে ভোটার বানানোর জন্য নয়।
কিন্তু তিনি যে সাম্প্রদায়িকতা ঢাকাচাপা ছিল, তার বস্ত্রহরণ করে গায়ে একটা সুতো পর্যন্ত রাখলেন না। যাদের ভোটে ক্ষমতাসীন হলেন, তাদের অধিকাংশের সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করলেন।
তাই কোটি টাকার বিনিময়ে ছবি বিক্রি হয়েছে যাঁর, আজকে তাঁর ছবিটা একেবারে হতদরিদ্র।
কিন্তু এই করুণ ছবিটায় আর কারও সহানুভূতি জাগছে না। সবাই নিষ্কৃতির জন্য দিন গুণছে।
শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়
(লেখকের মতামত ব্যক্তিগত)