১৯৭০ সালে ২২ সে এপ্রিল মার্কিন সেনেটর গেলার্ড নেলসন ধরিত্রী দিবস প্রচলন করেন আর তখন থেকে পৃথিবীর অনেক দেশই এই ধরিত্রী দিবস বা বসুন্ধরা দিবস উদযাপন করে আসছে। এই দিবস ১৯৯০ সালে আন্তর্জাতিক ভাবে পালিত হয়েছে। অনুরূপ আরেকটি উৎসব হলো বিশ্ব পরিবেশ দিবস যা ৫ই জুন প্রায় অনেক দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ১৯৭০ সাল থেকেই বেশ কিছু সামাজিক গোষ্ঠী ধরিত্রী দিবস সপ্তাহ ব্যাপী কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করে আসছে। সারা যুক্তরাষ্ট্রে হাজার দুয়েক কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও হাজার দশেক বিদ্যালয় এবং অগনিত সামাজিক গোষ্ঠী ধরিত্রী দিবস উদযাপন করছে । যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সহ সারা পৃথিবীর প্রায় ১২০ দেশ ২০১৬ সালে প্যারিস চুক্তিতে একটি দিক নির্দেশ এর জন্য সাক্ষর করে। তারপর থেকে অনেক পদযাত্রা, সচেতনতার প্রসার ও প্রচার হয়েছে কিন্তু প্রকৃতির নিধন ও হয়েছে সমান তালে। তাই পৃথিবীব্যাপী মিষ্টি জলের হাহাকার, ভূগর্ভস্থ জল স্তরের নিম্ন মুখীতা, বিশ্বব্যাপী উষ্ণায়ন, চাষজমিতে জলের টান আবার অতি বন্যায় বানভাসি মানুষের মিছিল আজকে বসুন্ধরা দিবসের প্রাক্কালে যেন আমাদেরই ব্যাঙ্গ করছে।
কিন্তু আধুনিকতার দৌড়ে নেমে কোথাও কোথাও ভয়াবহ খরা ও বন্যার কবলে মানব জাতির অস্তিত্ব আজ বিপন্ন। ধরিত্রী মায়ের ঋণ তো আমরা শোধ করতে পারিনি উপরন্তু আরও ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছি আমরা।
এই ক্রান্তিকালে গুজরাটের “মিশন লাইফ” ভারতের নেতৃত্বে যেন বিশ্বব্যাপী এক গণ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে।
গুজরাটের “মিশন লাইফ” এর সূচনা এই কারণে তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এটি পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি এবং জলবায়ুর সুরক্ষার জন্য দেশের এক অগ্রণী রাজ্যের উদ্যোগী পদক্ষেপ। খালগুলিতে সৌর প্যানেল স্থাপন করা ও রাজ্যের খরা পীড়িত অঞ্চলগুলির জন্যে জল সংরক্ষণ মিশন লাইফ এর প্রধান সার্থকতা । একটি প্রচলিত ধারণা যে জলবায়ুর পরিবর্তন শুধু মাত্র নীতির সথে সম্পর্কিত একটি বিষয়। এটি এমন একটি চিন্তা প্রক্রিয়ার উদ্রেক করে যেন এসব গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা যা শুধু সরকার বা আন্তর্জাতিক সংস্থা উপরে ন্যাস্ত হওয়া উচিৎ। কিন্তু আমরা কতটা আন্তরিক প্রাকৃতিক সমস্যা সমাধানে? মানুষ তার পারপার্শ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব অনুভব করছে এবং বিগত এক দশকে অপ্রত্যাশিত প্রতিকূল বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এটি স্পষ্ট যে জলবায়ুর পরিবর্তন নীতি নির্ধারণের বাইরে চলে গেছে। মানুষ তাই নিজেরাই খুঁজে পাচ্ছে যে পরিবেশে ব্যাক্তি, পরিবার ও সম্প্রদায় হিসেবে তাদের অবদান রাখা উচিত।
মিশন লাইফ এর মন্ত্র হলো পরিবেশের জন্য জীবন ধারা। মিশনটি P 3 মডেল, প্রো প্ল্যানেট পিপল এর চেতনাকে উৎসাহিত করে।
“মিশন লাইফ, পৃথিবীর মানুষকে একত্রিত করে এই গ্রহের প্রেমিক মানুষ হিসাবে, তাদের সকলকে তাদের চিন্তায় একত্রিত করে। এটি ‘গ্রহের জীবনধারা, গ্রহের জন্য এবং গ্রহ দ্বারা’ মৌলিক নীতির উপর কাজ করে।”
পুনর্ব্যবহার’ এবং বৃত্তাকার অর্থনীতির ধারণা বহু বছর ধরে ভারতীয় জীবনধারার একটি অংশ। এ ধরনের অভ্যাস প্রচলিত আছে, যা আমাদেরকে প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে অনুপ্রাণিত করে। মিশন লাইফ প্রকৃতির সংরক্ষণের সাথে সম্পর্কিত প্রতিটি জীবনধারাকে অন্তর্ভুক্ত করবে, যা আমাদের পূর্বপুরুষরা গ্রহণ করেছিলেন এবং এটি আজকে আমাদের জীবনধারার একটি অংশ করা যেতে পারে।
ভারত জলবায়ু পরিবর্তনের ভীতির মোকাবেলায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশে বার্ষিক মাথাপিছু কার্বন ফুটপ্রিন্ট মাত্র ১.৫ টন, যেখানে বিশ্বে গড় প্রতি বছর ৪ টন। নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ক্ষমতাসম্পন্ন। আমরা বায়ু শক্তিতে চতুর্থ এবং সৌর শক্তিতে পঞ্চম স্থানে আছি। গত ৮ বছরে ভারতের নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষমতা প্রায় ২৯০ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। আমরা নির্ধারিত সময়সীমার ৯ বছর আগে অ-জীবাশ্ম জ্বালানি উৎস থেকে ৪০ শতাংশ বৈদ্যুতিক ক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্য অর্জন করেছি। আমরা পেট্রোলে ১০ শতাংশ ইথানল মিশ্রণের লক্ষ্যও অর্জন করেছি এবং তাও সময়সীমার 5 মাস আগে। জাতীয় হাইড্রোজেন মিশনের মাধ্যমে, ভারত একটি পরিবেশ-বান্ধব শক্তির উৎসের দিকে এগিয়ে গেছে। এটি ভারত এবং বিশ্বের অনেক দেশকে তাদের নেট শূন্যের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে।
জাতি সংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, “পরিবেশের জন্য জীবনধারা -জীবনের উদ্যোগটি প্রয়োজনীয় এবং আশাব্যঞ্জক সত্যগুলিকে তুলে ধরার জন্য তুলে ধরা হয়েছে৷ আমরা সবাই, ব্যক্তি এবং সম্প্রদায়, আমাদের পৃথিবী এবং আমাদের সম্মিলিত ভবিষ্যত রক্ষার সমাধানের অংশ হতে পারি এবং অবশ্যই হতে পারি। সর্বোপরি, জলবায়ু, পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং দূষণের মূলে রয়েছে অতিরিক্ত ব্যবহার। এক বিরাট জটিল অসমতা।”
মিশন লাইফ আন্দোলনের উদ্যোগগুলো সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া উচিত। বিশেষত আমরা কিছু না করেই যখন বলি ” এগিয়ে বাংলা”।
ভারতের পরিবেশগতভাবে সুষ্ঠু নীতি অনুসরণ করার প্রতিশ্রুতির জন্যে অত্যন্ত উৎসাহিত হয়েছে মানুষ। আমাদের পুনর্নবীকরণযোগ্য বিপ্লব আনতে হবে এবং এই এজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভারতের সব প্রদেশে এই চিন্তা ও উদ্যোগ প্রসারিত করতে হবে।
সৌমিত্র সেন