লেডি অব দি ল্যাম্প বসু বিজ্ঞান

মন্দিরের দ্বারপ্রান্তে নিবেদিতার মূর্তিটি স্থাপন করেছিলেন বিজ্ঞানাচার্য জগদীশচন্দ্র বসু। তার নাম দিয়েছিলেন লেডি অব দি ল্যাম্প অর্থাৎ দীপরূপিণী, মন্দির পথে দীপধারিণী তো নিশ্চয়ই। নিবেদিতাই বিজ্ঞান মন্দিরের আলোকদ্যুতি, নীরব নমস্কারের সঙ্গে সেই স্বীকৃতিটুকু আচার্য বসু প্রবেশ পথেই নিবেদন করলেন। অথচ নিবেদিতার নাম সেখানে নেই। অধ্যাপক শংকরীপ্রসাদ বসু লিখছেন, এর থেকে সুগভীর সুগম্ভীর শ্রদ্ধা নিবেদন অল্পই সম্ভব। জগদীশচন্দ্র মৃত্যুর অল্প দিন পূর্বে লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন, ভারতীয় বিজ্ঞান সম্বন্ধে নিবেদিতার আগ্রহই তাঁকে বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠায় প্রণোদিত করেছে। মিসেস উইলসনকে এক পত্রে তিনি লিখেছিলেন, নিবেদিতার স্বপ্নই আমার বিজ্ঞান মন্দিরের মধ্যে রূপায়িত। বিজ্ঞান মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন হয় ১৯১৭ সালের ৩০ শে জানুয়ারী, জগদীশচন্দ্রের জন্মদিনে। বিজ্ঞান মন্দিরের দারোদ্ঘাটন করবার আগে জগদীশচন্দ্র একটি কাজ করেছিলেন—নারী দধিচীর অস্থিচূর্ণ স্থাপন করেছিলেন তার প্রান্তে। দধীচির আদর্শকে তিনি বহু পূর্বেই পেয়েছিলেন ভারতীয় পুরাণ কাহিনী থেকে। কিন্তু সে আদর্শ বাস্তব সত্য রূপে আবির্ভূত হয়েছিল নিবেদিতার মধ্য দিয়ে। তাই নিবেদিতা যখন বুদ্ধগয়ায় গিয়ে বুদ্ধ-বেদীমূলে বজ্রচিহ্ন আবিষ্কার করলেন, এবং ভাবলেন, এই বজ্র প্রতীক হোক ভারতবর্ষের, তখন তাঁর সেই অভিপ্রায়কে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বীকার করেছিলেন জগদীশচন্দ্র। তাঁর বিজ্ঞান মন্দিরের প্রতীক বজ্র, মন্দির ভবনের শীর্ষে তা স্থাপিত। তারই নিচে আচার্য বসু স্থাপন করেছিলেন নারী দধীচির বজ্রাস্থি। আসলে নিবেদিতার স্বপ্ন বিজ্ঞান মন্দিরের প্রতিটি পাথরে মিশে ছিল। সম্পূর্ণ প্রাচীন ভারতীয় স্থাপত্যরীতিতে বিজ্ঞান মন্দিরটির নির্মিত হয়েছিল। তাই জগদীশচন্দ্র বারবার ঘোষণা করেছিলেন, আজ যাহা প্রতিষ্ঠা করলাম তা মন্দির, কেবলমাত্র পরীক্ষাগার নয়।—নিবেদিতার পুণ্য জন্মদিনে(১৮৬৭,২৮ শে অক্টোবর )শ্রদ্ধাঞ্জলি।(সংকলক: সন্দীপ সিনহা)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.