সর্তক হোন। আপনি ভিমরুলের চাকে ঢিল মেরেছেন। সতর্ক হোন। এতদিন দিব্যি ছিলেন আপনি প্যালেস্টাইন, সিরিয়া, ইরাক নিয়ে আহা উহু করে। এতদিন দিব্যি চলছিল অন্যদের কচুকাটার সমাধিতে মোমবাতি আর বিদ্রোহ জ্বালিয়ে। ‘আমাগো একখ্যান দ্যাশ ছিল’ ন্যারেটিভ ঝালিয়ে, সুপুরি গাছ, গোল্লাছুটের মাঠের নস্টালিয়া কপচিয়ে। আপনি বুক চাপড়ে রোহিঙ্গা – রোদন করুন, জায়েজ! মিষ্টি মিষ্টি দেশভাগ- পূর্ববর্তী প্রেম আর দেশভাগ- পরবর্তী মেলোড্রামা নিয়ে দারুণ তো ছিলেন! ফালতু ভিমরুলের চাকে ঢিল মেরেছেন। সতর্ক হোন।
সবে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের হয়ে সামান্য কিছু বলেছেন আর ঝাঁকে ঝাঁকে নাগ নাগিনীরা চারিদিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস। বিশাল ফেসবুকীয় বাম পলিট’বুড়ো’ RTI তথ্য নিয়ে চলে এসেছেন। না ৮০০ না ৮০টা পণ্ডিতের লাশ। RTI করে বিপ্লবী জেনেছেন। ধরে নিলাম ৮০টা লাশই। মানে তারও দাম নেই? কমরেড? মানে এক রাতে ঘর ছেড়ে চলে আসার সময় কমরেড আপনি মনে করছেন সেই পরিবারগুলো আগে থানায় যাবে। FIR করবে, বলবে আমরা ধর্ষিত, আমার বাবা খুন হয়েছে, আমরা এক রাতের নোটিশে নিজের বাড়ি ঘরদোর ছেড়ে চলে যাচ্ছি। বলতে হবে। নয়তো উদার চোখে, বিপ্লবী চোখে সেগুলি নাজায়েজ! ছি:! থুতু ফেলি এই উদার লিবারেল ডেমোক্রেসিতে।
মানতে শিখুন। কাশ্মীরি পণ্ডিতরা কাশ্মীর থেকে পালিয়ে যাচ্ছিল, আপনারা মজা দেখছিলেন। তারা জম্মু বা দিল্লিতে শরণার্থীদের জীবনযাপন করছিল। আপনারা প্যালেস্টাইন, সিরিয়ার শরণার্থীদের নিয়ে ভাবিত ছিলেন। কারণ পণ্ডিতদের ভোট ব্যাংক ছিল না। কাশ্মীরি পণ্ডিতরা উপত্যকা ত্যাগ করে জম্মুতে এবং দেশের বিভিন্ন অংশে বসবাস করতে শুরু করে। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সংখ্যা ১ লাখ থেকে ২ লাখের মধ্যে, যারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল বলে মনে করা হয়। RTI করে দেখে নিন কমরেড।
১৯ জানুয়ারি, ১৯৯০-এর রাত। আপনি জেগে ছিলেন? FIR লিখবেন বলে? RTI করবেন বলে? লাউডস্পিকার থেকে ভেসে আসছিল হুমকি স্লোগান, রাস্তায় রাস্তায়ও একই পরিস্থিতি। একটি বিশেষ ধর্মের শ্রেষ্ঠত্বের গুণগান করে ভাষণ দেওয়া হচ্ছিল, সে ভাষণে বিরোধিতা করা হচ্ছিল আরেক বিশেষ শ্রেণীর। হয় ধর্মান্তরিত হও নয় কাশ্মীর ছেড়ে পালাও। হয় ঘরের মা বোনেদের রেখে যাও। নয় মৃত্যুবরণ করো। আপনি সেই সময় পুলিশের অভিযোগ দায়ের করে, ধৈর্য ধরে, অপেক্ষা করতে বলেছিলেন? ছি:!
কাশ্মীরি পণ্ডিত সংঘর্ষ সমিতি (কেপিএসএস)-র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী. ১৯৯০ সালের জানুয়ারি মাসে ঘর ছেড়েছেন ৭৫,৩৪৩ কাশ্মীরি পণ্ডিত পরিবার, ১৯৯০ থেকে ১৯৯২ সালের মধ্যে আরও ৭০ হাজার। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে ২০০০ সাল পর্যন্ত। কেপিএসএস-এর দেওয়া তথ্য অনুসারে ১৯৯০ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে জঙ্গিদের হাতে খুন হয়েছেন ৩৯৯ জন কাশ্মীরি পণ্ডিত, এর মধ্যে বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ডই ঘটেছে ১৯৮৯-৯০-এ। তিন দশক ধরে উপত্যকাতে রয়ে গিয়েছে ৮০০ পণ্ডিত পরিবার। এদের চোখে চোখ রেখে আসুন কথা বলি। যদি না বলতে পারেন, ঠান্ডা ঘরে থাকুন। বাকিটা মানুষ বুঝে নিক।
নাগ – নাগিনীরা চারিদিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস। সাবধান হোন। আপনাকে সাম্প্রদায়িক তকমা দিতে প্রস্তুত এরা। যতবার আপনি পূর্ববঙ্গ থেকে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসা উদ্বাস্তুদের কথা বলবেন। কাশ্মীর থেকে জম্মুতে চলে আসা পণ্ডিতদের কথা বলবেন। কেন চলে আসতে হয়েছিল তার কথা বলবেন। ততবার আপনি সাম্প্রদায়িক তকমা পাবেন। আপনি যতক্ষণ মিনমিন করে, মিষ্টি মিষ্টি করে আমাগো একখান সুপুরি গাছ ছিল, পুকুর ছিল, ভিটেমাটি ছিল, তুলসীতলা ছিল বলবেন, ততক্ষণ আপনি উদার আন্তজার্তিক লিবারাল। যেই কাশ্মীরি পন্ডিতদের জন্য হাউ হাউ করে কেঁদেছেন, আপনি সাম্প্রদায়িক। এমন একচোখা ধর্মনিরপেক্ষতার ১০৮!
- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
সেই সময়কার, মানে ১৯৯০ এর সময়ের এক সিআরপিএফ অফিসারের কথা শুনুন “কাশ্মীর ফাইলস” দেখার পর….