বাজার অর্থনীতিতে Green Marketing বলে একটি কথা আছে। বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘সবুজ বিপণন’ বা সবুজ বাজারী উদ্যোগ। সেটা কী? একটা কনসেপ্ট তৈরি হল যে, A satisfactory green images could improve public relations and provide a marketing niche . অর্থাৎ একটি সন্তোষজনক সবুজ-ভাবমূর্তি দরকার, যা ক্রেতার সঙ্গে উৎপাদক/বিক্রেতার জনসংযোগ বাড়াবে, এবং পরিশেষে একটি যথাযোগ্য বাজার বা ব্যবসা শুরু করা যাবে। একটি কাঙ্ক্ষিত ‘মার্কেটিং নিচ’ বা ‘বিপণন কুলুঙ্গি’ তৈরির জন্যই কিছু কোম্পানি বা উৎপাদক সংস্থা আটের দশক থেকে এটা ভাবতে শুরু করলো। সবুজের দিকে ফিরে চাওয়া বা পরিবেশ-বান্ধব হওয়া সেসময় ব্যবসার খাতিরেই শুরু হল।যেহেতু পরিবেশ নিয়ে ভাবনা ও আন্দোলন তখন দানা বাঁধছে, পণ্য উৎপাদকেরা তাতে পিছিয়ে থাকবেন কেন? সবুজের জন্য ভাবনা এবং সেই অনুযায়ী উৎপাদন করে ক্রেতা বা ভোক্তার কাছে পৌঁছে যাবার নামই হল ‘গ্রীন মার্কেটিং’ (Green Marketing). বিভিন্ন কোম্পানি বিবিধ খাতে পরিবেশ-বান্ধব উন্নত পণ্যসামগ্রী বাজারে আনতে শুরু করলো। আটের দশকে কীভাবে এটির সূচনা হয়, তার একটি উদাহরণ দেওয়া যাক — বিশ্বখ্যাত Mc Donald কোম্পানি পরিবেশগত অডিট (Environmental Audit) করে বাস্তব এবং ক্রেতার মনোভাব বুঝলো এবং তারা প্লাস্টিক প্যাকেজিং ছেড়ে চলে গেল পরিবেশ-বান্ধব কার্ডবোর্ড প্যাকেজিং-এর দিকে। কোনো কোনো কোম্পানি এমন রেফ্রিজারেটর বাজারে আনলো, যার ব্যবহারে ইলেকট্রিকের খরচ কমতে পারে। এরই নাম Green Marketing.
৩রা জুলাই সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে প্লাস্টিক মুক্তির দিন হিসাবে। আমরা চেষ্টা করতে পারি আজ, প্লাস্টিক ব্যবহার না করতে। কাঁচের ভারি বোতলে বা ধাতব বোতলে পানীয় জল ব্যবহার করতে, বাজারে পাটের থলে নিয়ে যেতে, প্লাস্টিকে কোনো সামগ্রী না কিনতে। জামা-কাপড় মেলতে পলিথিনের দড়ি নয়, নারকেলের দড়ি ব্যবহার করতে পারি। গুটিকলম বাঁধতে পলিথিনের রুমাল নয়, ব্যবহার করতে পারি নারকেলের ছোবড়া। ইত্যাদি।
পরিবেশ দূষণের কী কী কারণ? যদি তার তালিকা করা যায়। তাহলে একদম উপরের দিকেই থাকবে প্লাস্টিকের দূষণ। এই উপাদান মানব সভ্যতাকে অনেকটা এগিয়ে দিলেও, ভয়াবহ সব ঝুঁকিতে পিছিয়েও দিয়েছে। আজ বিশ্ব-দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ প্লাস্টিক বা প্লাস্টিকজাত সামগ্রী।
সুতরাং International Plastic-bag Free Day -তে আমরা মানুষকে সচেতন করতে পারি বিশ্বে প্লাস্টিকের দূষণের বিরুদ্ধে। প্লাস্টিকের কী কু-প্রভাব আমাদের তুলে ধরতে হবে। যদি একান্তই ব্যবহার করি তবে কী কী ভাবে সচেতন থাকতে হবে, তাও বলা দরকার। একটি বড় কাজ করা দরকার যেমন, প্লাস্টিকে বিক্রি হওয়া দুধ, চিপস্ ইত্যাদির প্যাকেট যখন কাঁচি দিয়ে কাটবো, তখন যেন সেই কর্তিত অংশটি মূল প্যাকেটের সঙ্গে কিছুটা লেগে থাকে। কারণ আজ সচেতন হয়ে মানুষ হয়তো দৃশ্যমান বড় প্যাকেটগুলি তুলে কোনো নিরাপদ জায়গায় ফেলবে, কিন্তু ছোটো ছোটো টুকরোগুলি তো পরিবেশে এরকম অসংখ্য কোটি কোটি সংখ্যায় রয়ে যাবে, তা তো খালি চোখে তুলে ফেলা যাবে না, যদি না তা মূল প্যাকেটের সঙ্গে রাখা হয়। ভাবুন এই ছোটো টুকরোগুলি সম্মিলিতভাবে পরিবেশে দুই-এক দশক ধরে কী মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে! এত ক্ষুদ্র প্লাস্টিক তুলবে কে? বাংলায় একটি প্রবাদ আছে
“এত তুলো ধুনবে কে!”
সমুদ্রের জলে মিশে গিয়েও যাবতীয় প্লাস্টিক ‘পাল্ভারাইজড প্লাস্টিকে’ পরিণত হয়। অর্থাৎ প্লাস্টিকগুলি ধীরে ধীরে ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়। সেই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম প্লাস্টিক কণিকা সাগরের প্রাণীদেহে এবং পাখিদের দেহাভ্যন্তরে প্রবেশ করে প্রাণের অকাল মৃত্যু ডেকে আনছে রোজ। প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর অংশে সমুদ্রের জলে জমে থাকা ভাসমান প্লাস্টিক বা জিপিজিপি দেখা যাচ্ছে মহাকাশ থেকে। গ্রেট প্যাসিফিক গার্বেজ প্যাচ তাই মনুষ্য সভ্যতার কলঙ্ক বাড়াচ্ছে রোজ। জিরো ওয়েস্ট ইউরোপ (জেডডব্লিউই) এর সদস্য রেজেরো, 3 জুলাই, 2008-এ প্রথম আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক ব্যাগ মুক্ত দিবসের সূচনা করে। কর্ণাটক হল দেশের প্রথম রাজ্য যেটি 2016 সালে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়মের সাথে একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করেছিল।
সুস্মিতা সরকার এবং কল্যাণ চক্রবর্তী