সকালে হোয়াটসঅ্যাপে একটা আবেদন পেলাম— “আজ সবাই নিজ নিজ বাড়িতে বিপ্লবী অনিল রায়ের জন্মদিনে তাঁকে গান পাঠের মাধ্যমে স্মরণ করুন।” আর্জি জানিয়েছেন ৮৬ বছরের এক তরুণ বিজয় নাগ।
বিপ্লবচর্চা, ইতিহাস, ঐতিহ্য আমার অবচেতনে সর্বক্ষণ নাড়া দেয়। সব অকাজ ফেলে প্রকাশক বিজয়বাবুকে ফোন করলাম। দিনটি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আন্তরিক শ্রদ্ধা জানালাম। অনিল রায়, লীলা রায় কী মাপের মানুষ ছিলেন, তাঁদের কীর্তির গভীরতা খুব কম লোকই আজ মনে রেখেছেন। আগ্রহীরা গুগুলে পড়ে নিতে পারেন। কিন্তু তার বাইরের অজানা কথাগুলো একটু জানবেন না?
স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের দায়ে দুজনেরই কারাবাস হয়। ১৯৪৬ সালে কারামুক্তির কিছুদিন বাদে দু’জন থাকতে শুরু করলেন ১৪৭ এ, রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে। বিজয়বাবুর কথায়, “লীলা রায় ছিলেন আমার একমাত্র পিসিমা। অনিল রায় পিশেমশাই। ওঁরা ছিলেন নিঃসন্তান। ১৯৫২ সালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন অনিল রায়। আমরা রাজস্থানে থাকতাম। কলকাতায় এলাম। ২-৩ দিনের মধ্যে সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন উনি। আমার মা-কে পিসিমা বললেন, “আমি কী নিয়ে থাকবো?” আমার অনুমতি নিয়ে মা আমাকে পিসিমার সঙ্গী করে দিলেন। আমার বয়স তখন ১২।”
নেতাজী সুভাষচন্দ্রের অনুপ্রেরণায় কীভাবে লীলা রায় অবিভক্ত বঙ্গে ‘জয়শ্রী’ পত্রিকার প্রচার করেছিলেন, ইতিহাস তার সাক্ষী। পিসীমার সেই আন্তরিক আবেগ এবং নেতাজীর প্রতি নিখাদ ভালোবাসাকে সম্বল করে ছয়ের দশকে বিজয়বাবু শুরু করলেন ‘জয়শ্রী প্রকাশনী’। শুরু করেছিলেন নেতাজী রচনাবলী দিয়ে। এখনও প্রকাশনা বন্ধ করেননি। এই প্রতিবেদককে বিজয়বাবু জানালেন, “১৯৬৮-র ফেব্রুয়ারিতে স্ট্রোক হল পিসিমার। কোমায় চলে যান। মারা যান ২৯ মাস বাদে। তারিখটা ছিল ১৯৭০-এর ১১ জুন।
গত শতকের পঞ্চাশের দশকেই দক্ষিণ কলকাতায় ত্রিকোণ পার্কের কাছে যতীন দাস রোডের সংযোগস্থলে একটি রাস্তার নামকরণ হয় অনিল রায়ের স্মৃতিতে। অনেক পরে বালিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে ঢাকুরিয়া ব্রিজ পর্যন্ত মূল রাস্তার নাম হয় লীলা রায় সরণী।
আজ, ২৬ মে অনিল রায়ের জন্মদিন। ১২৫ বছর পূর্ণ হল তাঁর। অনেক শ্রদ্ধা তাঁকে এবং লীলা রায়কে। আর কৃতজ্ঞতা বিজয় নাগকে মুঠোফোনে এই দিনটা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য। গুগুলে একটু ওঁদের কীর্তি আর একবার পড়ে নিতে অনুজদের অনুরোধ জানাই। আমরা সবাই চলে যাব। যে যতদিন পারি, ইতিহাস তো আমাদেরই বাঁচিয়ে রাখতে হবে! ছবিতে অনিল-লীলা রায়।
অশোক সেনগুপ্ত। ২৬ মে, ২০২৫।
