বঙ্গদেশ তথা ভারত রাজনারায়ণ বসুকে মনে রাখবে কেবল শ্রীঅরবিন্দ বা বিপ্লবী বারীন্দ্রকুমার ঘোষের মাতামহ হিসাবে নয়, সম্পাদক ও নির্বাসিত নেতা কৃষ্ণকুমার মিত্রের শ্বশুরমশাই হিসাবেও নয়। ভারতবাসী এই চিন্তানায়ক ও শিক্ষাবিদকে মনে রাখবে, ব্রিটিশ যুগের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অধঃপতিত হিন্দুজাতিকে সঙ্গবদ্ধ করে পুনরায় একটি আদর্শ জাতি হিসাবে উত্থাপন করার মহান পরিকল্পনার জন্য। তাঁর রচিত বই ‘বৃদ্ধ হিন্দুর আশা’-র পরতে পরতে তাঁর পরিকল্পনা বিবৃত হয়েছে।
তিনি আদি ব্রহ্ম সমাজের জন্য উল্লেখযোগ্য কাজ করেছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কেশবচন্দ্র সেনের সঙ্গে। সামাজিক সৎকাজেও তিনি ছিলেন এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। ‘জাতীয় গৌরব সম্পাদনী সভা’, ‘সুরাপান নিবারণী সভা’ স্থাপন করে তিনি জনমানসে এক উচ্চ আসন লাভ করেছিলেন। বাংলা ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি, অনুশীলন ও চর্চার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান সারা দেশে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন ‘হিন্দুমেলা’ প্রবর্তনের সঙ্গে। দেশভক্ত নবগোপাল মিত্রের স্থাপনায় চৈত্রমাসে উৎযাপিত জাতীয় ফেস্টিভ্যাল ‘হিন্দুমেলা’-র তিনিই অনুপ্রেরণা। রাজনারায়ণ প্রতিষ্ঠিত ‘জাতীয় গৌরব সম্পাদনী সভা’-ই হিন্দুমেলার আদি উৎস। কোনো শিক্ষাবিদ, কোনো সমাজসেবী, কোনো নেতার যদি জাতীয় জীবন গঠনে বিন্দুমাত্র স্বয়ংক্রিয় প্রচেষ্টা না থাকে, তবে তাঁর কানাকড়ি দামও নেই! রাজনারায়ণ-নবগোপাল সম্মিলন বাঙালির জাতীয় জীবনে এক উল্লেখযোগ্য আবির্ভাব। মেদিনীপুর মনে রাখবে রাজনারায়ণের শিক্ষক ও শিক্ষাবিদ হিসাবে উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলিতে ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে অনবদ্য ব্যাখ্যা পরিলক্ষিত হয়।
কল্যাণ গৌতম।