কয়েকটি ফেসবুক পোস্টের আদান-প্রদানকে কেন্দ্র করে গত ১১ই আগস্ট কর্ণাটকের পুলকেশীনগর বিধানসভা কেন্দ্রের ডি জে হাল্লি ও কে জি হাল্লি অঞ্চল যে দাঙ্গার সাক্ষী হয়েছিল, সে সম্বন্ধে ৪ঠা সেপ্টেম্বর কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পাকে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিয়েছে সিটিজেনস্ ফর ডেমোক্রেসি ফোরামের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির সদস্যরা। রায়ট-আক্রান্ত এলাকায় তদন্ত করে, এলাকার সাধারণ মানুষ ও আক্রান্ত পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলে এবং এলাকা ও ঘটনা সংক্রান্ত নানা তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের পর যে বিস্তারিত রিপোর্ট তাঁরা জমা দিয়েছেন, তা দাঙ্গার ঘটনাটির ওপর বিশদে আলোকপাত করেছে। রিপোর্ট গ্রহন করে এবং সব শুনে মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা সিএফডিকে আশ্বস্ত করেছেন যে শীঘ্রই রাজ্যের গৃহমন্ত্রক, ডিজি পুলিশ ও পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে উক্ত কমিটির বৈঠকের আয়োজন করা হবে এবং ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ যাতে অবিলম্বে শুরু করা যায়, তা নিশ্চিত করা হবে। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, পুলকেশীনগর বিধানসভা কেন্দ্রটি তপশীলি জাতির জন্য সংরক্ষিত এবং উক্ত দাঙ্গায় ঐ কেন্দ্রের বিধায়ক অখণ্ড শ্রীনিবাস মূর্তি ও তাঁর ভাইপো নবীন শ্রীনিবাস মূর্তির বাড়ি এবং স্থানীয় পুলিশস্টেশনগুলি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
সিটিজেনস্ ফর ডেমোক্রেসি দায়িত্বশীল নাগরিকদের একটি প্লাটফর্ম যাঁরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং ভারতীয় নাগরিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন ও সক্রিয়। ব্যাঙ্গালোরের দাঙ্গার আদত ও বৃহত্তর পটচিত্রটি কি তা অনুসন্ধান করতে এঁদের একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি নিরলস কাজ করেছে এবং সমাপনান্তে ৪৯ পৃষ্ঠার একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তাঁরা পেশ করেছেন। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শ্রী শ্রীকান্ত ববলাদির সভাপতিত্বে কমিটির অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত আইএএস শ্রী মদন গোপাল, অবসরপ্রাপ্ত আইএফএস শ্রী ডঃ ডি আর রাজু, অবসরপ্রাপ্ত আইআরএস শ্রী ডঃ প্রকাশ, অবসরপ্রাপ্ত ডিরেক্টর জেনারেল অব পুলিশ শ্রী এম এন কৃষ্ণমূর্তি, সাংবাদিক শ্রী আর কে মাট্টু ও শ্রী সন্তোষ তম্মাইয়া, প্রফেসর শ্রী ডঃ এম জয়াপ্পা ও শ্রী ডঃ এইচ টি অরবিন্দ, সমাজকর্মী শ্রী মুনিরাজু ও শ্রী জেরোম অ্যান্তো এবং অ্যাডভোকেট শ্রীমতী ক্ষমা নারগাণ্ড।
Bengaluru Riots: CFD’s Fact Finding Committee Report(Full Text) : https://wp.me/aaN0VK-rqA
রিপোর্ট অনুযায়ী তাঁদের মূল পর্যবেক্ষণগুলি নিম্নরূপ।
দাঙ্গাটি কোনো আকস্মিক উত্তেজনাবশতঃ নয়, বরং পূর্ব-পরিকল্পিত, সুপরিকল্পিত ও সংগঠিতভাবে ঘটানো হয়েছিল। কমিটির মতে দাঙ্গার মূল সম্ভাব্য উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের অনাস্থা তৈরি করে একটি ভয় ও অনিশ্চয়তার মানসিকতার জন্ম দেওয়া।
উত্তেজিত জনতা বেছে বেছে এলাকার সম্পন্ন হিন্দুদেরকে আক্রমণ করেছে।
এফআইআর গুলি থেকে এবং আক্রান্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে যে স্থানীয় মানুষেরাও উক্ত ঘটনার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল। ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির মতে ডিজে হাল্লি ও কে জি হাল্লি এলাকার স্থানীয় মানুষেরা শুধু যে দাঙ্গায় অংশগ্রহণ করেছে তাই নয়, তারা আগে থেকেই জানত এমন কিছু ঘটবে। অর্থাৎ বিষয়টি ছিল পূর্ব পরিকল্পিত ও সুচারুভাবে সংগঠিত ও সংঘটিত।
রাজনৈতিক বিদ্বেষই উক্ত দাঙ্গার চালিকাশক্তি বলে তুলে ধরার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু কমিটির মতে রাজনৈতিক নয়, আদতে এটি নিঃসন্দেহে একটি সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও হিংসাপ্রসূত দাঙ্গা।
কমিটির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী বেছে বেছে যে ধরনের বাড়ি ও যে সব লোকেদের আক্রমণ করা হয়েছে, তাতে মনে হয় যে এলাকার বিশিষ্ট হিন্দুদের মনে ভয়ের সঞ্চার করাই উদ্দেশ্য ছিল যাতে তাঁরা এলাকা ছেড়ে চলে যান এবং তার ফলে এলাকার ডেমোগ্রাফির তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তনের মাধ্যমে এলাকাটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ মুসলিম এলাকায় পরিণত করে তোলা যায়।
কমিটির মতে গোটা ঘটনাটির পরিকল্পনা ও রূপায়ণে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল এসডিপিআই এবং পিএফআই।
কমিটির এমত পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে অরগ্যানাইজার পত্রিকার সম্পাদক শ্রী প্রফুল্ল কেতকার প্রশ্ন করেন যে দাঙ্গার সঙ্গে পিএফআইএর সংযোগ সংক্রান্ত কোনো অকাট্য প্রমাণ বা তথ্য কমিটির হাতে আছে কিনা এবং গোটা বিষয়টির সমন্ধে কমিটির পর্যবেক্ষণের সঙ্গে কর্ণাটক পুলিশের করা এফআইআরগুলির মধ্যে কোনো মৌলিক পার্থক্য আছে কিনা। উত্তরে কমিটির প্রতিনিধি এক সদস্য বলেন যে পিএফআই এর কার্যকলাপের যে সুপরিচিত মোডাস অপারেন্ডি দেখা যায়, ডি জে হাল্লি ও কে জি হাল্লির দাঙ্গায় তা স্পষ্ট দেখা গিয়েছে। ফেসবুক পোস্ট নিয়ে পুলিশের কাছে এফআইআর করার পর পুলিশ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। তৎসত্ত্বেও যে তিন / চার হাজার লোক কিছু সময়ের মধ্যেই সেখানে জড়ো হয়ে প্রথমে পুলিশ স্টেশন আক্রমণ করেছিল, তাদের অধিকাংশই ছিল বহিরাগত। এই আকস্মিক লোকবল এবং সুপরিচিত মোডাস অপারেন্ডিই উক্ত ঘটনায় পিএফআইএর ভূমিকার নির্দেশক। কমিটি জানায় পিএফআইএর স্ট্যাণ্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওরের অন্যতম হল, কোনো এলাকায় প্রথমে তারা একটি বার্তা ছড়িয়ে দেয় যে সেই এলাকাটি হিন্দুদের জন্য নিরাপদ নয়, যাতে সেই এলাকায় সম্পত্তির দাম পড়তে আরম্ভ করে। তাতে ভয় পেয়ে বহু হিন্দু পরিবার নামমাত্র মূল্যে তাদের স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে এলাকা ছেড়ে চলে যায় যার ফলে এলাকাটি তৎপরবর্তীকালে একটি মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় পরিণত হয়। এই রকম একটি ডেমোগ্রাফিক ট্রানজিশনের সময় উক্ত এলাকায় ড্রাগের রমরমাও দেখতে পাওয়া যায়। এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিবেশন করেছেন কমিটির অন্যতম সদস্য শ্রীমতী ক্ষমা নারগাণ্ড। এই সমস্ত লক্ষণ ডি জে হাল্লি ও কে জি হাল্লির দাঙ্গায় দেখতে পাওয়া গিয়েছে। এমনিতেই উক্ত এলাকা মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ। তৎসত্ত্বেও এলাকার বিশিষ্ট হিন্দুদের এবং পুলিশ স্টেশনদুটি আক্রমণ করার মাধ্যমে দাঙ্গাকারীরা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে আদতে রাষ্ট্রব্যবস্থার দিকে। বোঝাতে চেয়েছে যে তেমন পরিস্থিতি তৈরি করতে তারা সক্ষম যখন পুলিশ প্রশাসনও কাউকে সুরক্ষা প্রদান করতে পারবে না, সে ব্যক্তি যত বিশিষ্ট বা ক্ষমতাশালীই হোন না কেন।
কমিটির সদস্যরা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন যে ডি জে হাল্লির বিলাল বাগ এলাকাও শাহীনবাগের মত সিএএ-এন আর সি বিরোধী প্রতিবাদে সামিল হয়েছিল একই প্যাটার্ণে মহিলাদের ধর্ণায় বসিয়ে। ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির সাংবাদিক বৈঠকে এই প্রসঙ্গে উল্লেখিত হয় যে শাহীনবাগ ও বিলালবাগের মত কলকাতার পার্কসার্কাস এলাকাতেও চলেছিল মহিলাদের ধর্ণা। গোটা ভারতের বিভিন্ন এলাকায় একই সময়ে ঘটে চলা প্রতিবাদের ধরণে এমত সাযুজ্য ও সাদৃশ্য প্রমাণ করে যে এই ধরণের প্রোগ্রামগুলি সুপরিকল্পিত ও কনসর্টেড।
এমত পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি কর্ণাটক রাজ্য সরকারের কাছে যে সুপারিশগুলি করেছে, তা নিম্নরূপ।
পাবলিক ও প্রাইভেট প্রপার্টির যা ক্ষতি দাঙ্গাকারীরা করেছে বা দাঙ্গায় হয়েছে সে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে।
দাঙ্গার ধরণ যেহেতু দিল্লীর দাঙ্গা এবং সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সুইডেনের দাঙ্গার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ, সেই কারণে রাজ্যের কর্তব্য হল বিষয়টিকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে না দেখে সামগ্রিকভাবে দেখা এবং সেই মত তদন্ত করা।
দাঙ্গা ঘটানোর জন্য নানা ব্যক্তি ও অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত ধর্মীয় উগ্রপন্থী সংগঠনগুলি যে সব আর্থিক সহায়তা পেয়েছে এন আই এ’র তদারকি ও সহযোগিতায় সেই লেনদেনগুলির ক্রমাগত ট্র্যাকিং প্রয়োজন।
কোন্ কোন্ এলাকা এই ধরনের সাম্প্রদায়িক হিংসার শিকার হতে পারে, তা আগে থেকে চিহ্নিত করে রাখা কর্তব্য। এই ধরনের উত্তেজনা যাতে সেসব এলাকায় তৈরি হতে না পারে তার জন্য পুলিশ-প্রশাসনের তরফ থেকে শর্ট টার্ম ও লং টার্ম কার্যপ্রণালী থাকা দরকার। এই ধরনের ঘটনা ঘটলে তাকে চটজলদি কিভাবে প্রতিহত করা যাবে, তার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিও রাখা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে কমিটির অন্যতম সদস্য শ্রী মদন গোপাল বলেন যে শহুরে এলাকার পুলিশ স্টেশনগুলিতে প্রায়শঃই দেখা যায় পঞ্চাশোর্ধ্ব পুলিশ অফিসাররা ডিউটিতে থাকেন, যাঁরা এই ধরনের দুষ্কৃতীদের সঙ্গে শারীরিক সক্ষমতায় পাল্লা দিয়ে উঠতে পারেন না। তাই পশ্চিমী দেশগুলোর মত এইসব স্পর্শকাতর এলাকার ভারপ্রাপ্ত পুলিশকর্তা ও কর্মীদের ইয়ং ও শারীরিক সক্ষমতায় তুখোড় হওয়া বাঞ্ছনীয়।
সোশ্যাল মিডিয়া যাতে কোনো জাতি, ধর্ম, শ্রেণী বা বর্ণের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর কাজে কারুর দ্বারা ব্যবহৃত হতে না পারে, তার নিয়মিত তদারকির জন্য পুলিশের তৎপর সাইবার ডোম থাকা দরকার।
ড্রাগের রমরমা শক্ত হাতে দমন করা প্রয়োজন। কারণ এই ধরণের রায়টিং-প্রবণ এলাকায় ড্রাগের ব্যবহার হয়ে থাকে।
ইন্টেলিজেন্স সিস্টেম এবং ইন্টেলিজেন্স জেনেরেশন মেকানিসম পুলিশের বিভিন্ন স্তরে আরও দক্ষ ও শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন যাতে এই ধরণের দাঙ্গা আগেভাগেই যথাসময়ে হস্তক্ষেপ করে আটকে দেওয়া যায়।
ইনফরমেশন টেকনোলজি আইন, 2000’র 66A ধারা যেহেতু রদ করা হয়েছে, সেই হেতু অপমানজনক, বিদ্বেষ ও গালিগালাজমূলক মন্তব্য করে কোনো জাতি, ধর্ম, বর্ণ বা সংগঠনকে আক্রমণ করার মত অপরাধকে আটকানোর জন্য এবং এমত অপরাধে অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অন্য কোনো বিকল্প পন্থা থাকা প্রয়োজন বলে সুপারিশ করেছে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি।
এই দাঙ্গা কতখানি কনসর্টেড ও সংগঠিত তা বোঝা গিয়েছিল বেশ কিছু লক্ষণ থেকে। উদাহরণ হিসেবে কমিটির সদস্যরা জানান যে মুসলিম-অধ্যুষিত ডি জে হাল্লির বিভিন্ন স্থানে সাধারণভাবে সন্ধ্যেবেলায় যত গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে, ১১ই আগস্ট সেই সময় রাস্তা ছিল ফাঁকা। গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল না। এ থেকে বোঝা যায় যে এমন কিছু যে হতে পারে, সে সংবাদ স্থানীয়দের কাছে ছিল। কমিটির মতে গণ্ডগোল বাঁধানোর সলতে পাকানো ও সুযোগ খোঁজা হচ্ছিল আগে থেকেই, ফেসবুক পোস্টটি সেক্ষেত্রে সেই সুযোগ সরবরাহ করেছে। উপরন্তু, পুলিশ স্টেশন আক্রমণ করা হয়েছে সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা, আটটা নাগাদ, যখন পুলিশের ডিউটি শিফট্ পরিবর্তিত হয় এবং সেই কারণে সেই সময়ে পুলিশ স্টেশনে তৎপরতা থাকে কিছু কম। দাঙ্গাকারীরা সব রকম পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রস্তুতি নিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছে কমিটি।
এই দাঙ্গায় মহিলাদেরও কিছু পরোক্ষ ভূমিকা ছিল বলে আন্দাজ করেছেন কমিটির সদস্যরা। দাঙ্গা-অভিযুক্ত স্থানীয় পুরুষদের পুলিশ গ্রেফতার করার পর তাদের বাড়ির মহিলারা দলবদ্ধভাবে থানার ওপর চড়াও হয়েছে এই দাবী নিয়ে যে ঐ পুরুষেরা নিরপরাধ, দাঙ্গায় তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না। গভীর রাত্রে রাস্তায় দেখতে পাওয়ায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া কিশোরকে বাড়ির মহিলারা এই অজুহাতে আড়াল করার চেষ্টা করেছে যে রাত একটার সময়ে সে দোকানে গিয়েছিল ধনেপাতা কিনতে। দাঙ্গার ঘটনাটি সংগঠিত ও অর্কেস্ট্রেটেড হওয়ার এটি আর একটি পরোক্ষ প্রমাণ।
দাঙ্গার পর দেখা গিয়েছে যে মুসলিমরা মানববন্ধন করে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল একটি মন্দিরের সামনে। ভারতীয় মিডিয়ার একাংশ প্রচার করেছিল যে মুসলিমরাই রক্ষা করেছিল ঐ মন্দিরটিকে। কিন্তু বাস্তব হল, ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির সাংবাদিক বৈঠকে একজন সাংবাদিক বলেন যে মানববন্ধনের সামনে থেকে কে বা কারা সেদিন বলছিল—“জলদি ভিডিও করো, জলদি ভিডিও লে লো”। এ থেকে বোঝা গিয়েছে যে উক্ত মানববন্ধন আদতে করা হয়েছিল পারসেপশন ম্যানেজমেন্টের জন্য এবং তার সঙ্গে জড়িত ছিল ভারতীয় মিডিয়ার একাংশ। তারা সেই মানববন্ধনের ভিডিও গুরুত্ব দিয়ে প্রচারও করেছে। ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির মতে মানববন্ধনে তারাই দাঁড়িয়েছিল যারা দাঙ্গায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিল। মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে তারা নিজেদের নিরপরাধ প্রমাণ করে পুলিশের চোখে ধুলো দিতে চেয়েছিল।
দেবযানী ভট্টাচার্য্য
Debjani Bhattacharyya