সংখ্যালঘুদের সংরক্ষণের জাঁতাকলে পড়ে অসংরক্ষিত অপেক্ষাকৃত মেধাবীরা মার খাচ্ছে প্রতিটি স্তরেই। এই অবস্থায় সারা দেশে শুরু হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার। সমস্ত অসংরক্ষিত প্রার্থীদের নিয়ে একটি নূতন ‘জন জাগরণ মঞ্চ’ তৈরির ডাক দেওয়া হয়েছে।
২০১৮ সালে তৈরি হয় অল ইন্ডিয়া অ্যান্টি রিজার্ভেশন কমিউনিটি। এ ছাড়াও রয়েছে অ্যান্টি রিজার্ভেশন ইউনিয়নস, অ্যান্টি রিজার্ভেশন কমিটি (এআরসি), ‘অ্যান্টি রিজার্ভেশন ফ্রন্ট ওয়েস্ট বেঙ্গল’ প্রভৃতি। সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন গোষ্ঠীর দাবি, “এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বাড়াতে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। শিক্ষায় ও কর্মক্ষেত্রে জেনারেল ক্যাটেগরির প্রার্থীরা কিভাবে এবং কতটা অবহেলিত, বঞ্চিত বা দুর্ভোগের ও দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছেন সে অভিজ্ঞতার কথা প্রত্যেকেই প্রকাশ করুন। এই সংরক্ষণ বিরোধী গোষ্ঠীর সুদূরপ্রসারী এবং মূল লক্ষ্য হবে দেশটাকে প্রকৃত যোগ্য ও মেধাবী মানবসম্পদের সাহায্যে আরো উন্নত ও সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলা এবং সেই জন্যই উচিত হবে সারা দেশ থেকে প্রায় সমস্ত রকমের (কিছু প্রতিবন্ধী ও প্রাক্তন সেনাকর্মীদের জন্য ছাড়া) সংরক্ষণ তুলে দেওয়া।”
“কিন্তু যতক্ষণ না এই মূল দাবি আদায় হবে আমাদের প্রাথমিক বা তাৎক্ষণিক লক্ষ্য হবে নিম্নরূপ: ১) যারা যারা প্রচলিত সংরক্ষণের সুবিধা সুযোগ নিয়ে আজ দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উচ্চ পদে প্রতিষ্ঠিত তাদের নামের পাশে এসসি/এসটি/ওবিসি কথাটা লিখতে আইনতঃ বাধ্য করা। ২) সংরক্ষণ তুলে দেবার মূল দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সরকারের কাছে দাবি জানাতে হবে যেন :
ক) যে কোনও ব্যক্তি শুধু মাত্র শিক্ষায় বা কর্মক্ষেত্রে যে কোনও একটি বারই চলতি সংরক্ষণের সুযোগ নিতে পারবে।
খ) সংরক্ষণের সুবিধা নিয়ে একবার চাকরিতে ঢুকলে পরবর্তী কালে প্রোমোশনের ক্ষেত্রে কোনও সংরক্ষণের সুযোগ পাবেন না।
গ) সংরক্ষিত শ্রেণির ক্যান্ডিডেট উচ্চ মেধার হলেও এখনকার মতো আর অসংরক্ষিত পোস্টে ভাগ বসাতে পারবে না।
ঘ) স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই যদি সংরক্ষিত শ্রেণির হয় তাহলে কেবল মাত্র যে কোনও একজনই সংরক্ষণের সুযোগ ভোগ করতে পারবে।
ঙ) আইন করে বংশ পরম্পরায় সংরক্ষণের সুযোগ পাওয়া বন্ধ করতে হবে। কোনও পরিবারে শুধু মাত্র একটি প্রজন্মই সংরক্ষণের সুবিধা পায়।
চ) উপরোক্ত দাবিগুলির প্রতি সহমত পোষণ না করলে বা সংরক্ষণের পক্ষে হলে সেই সব রাজনৈতিক দলকে ভোট বয়কট করতে হবে।
ছ) ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রোফেসর, উকিল, ম্যানেজমেন্ট এবং সায়েন্টিস্ট ইত্যাদি অতি গুরুত্বপূর্ণ বা স্পর্শকাতর প্রোফেশনে মেধাই একমাত্র বিবেচ্য হওয়া উচিত এবং এ সব ক্ষেত্রে কোনও রকম সংরক্ষণ থাকা চলবে না দেশের প্রকৃত কল্যাণ ও উন্নয়নের খাতিরে।
জ) সবচেয়ে ভালো হয় যদি সর্ব প্রকার সংরক্ষণ তুলে দিয়ে শুধু মাত্র অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল (জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে) শ্রেণীর জনগণের পাশে সরকার অর্থ বা পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেন তাদের পড়াশোনা বা চাকরির পরীক্ষায় যোগ্য করে গড়ে তুলতে।”
জাতীয়তাবাদী অধ্যাপক ও গবেষক সংঘের প্রাক্তন রাজ্য কার্যকরী সদস্য ডঃ রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রতিবেদককে বলেন, “একটি বিষয় স্পষ্ট করে বলা যায় যে, সংবিধান অনুযায়ী শুধুমাত্র হিন্দু অনগ্রসর শ্রেণির জন্যই সংরক্ষণ আইনসিদ্ধ, অন্য ধর্মের জন্য নয়। কারণ সংখ্যালঘুরা বিশেষত ইসলাম ধর্ম কখনোই জাত-পাত কেন্দ্রিক নয়, বরং তার বিরুদ্ধে। সুন্নত ও কলমা পড়ে ইসলাম কবুল করার সাথে সাথে কোনও ব্যক্তি বৃহত্তর আন্তর্জাতিক মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রবেশ করে, যেখানে রং, আকৃতি, বর্ণ, অর্থ, সামাজিক প্রভাব ইত্যাদি লুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু ভারতবর্ষে ক্রিশ্চান মিশনারিরা বনবাসী মানুষগুলোকে হিন্দু থেকে গণহারে খ্রিস্টান ধর্মে পরিবর্তন করার পরেও তারা একাধারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এবং অপরদিকে তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের যুগপৎ সংরক্ষণের যে সুবিধা ভোগ করছে– তা শুধু সংবিধান বিরোধী নয়, মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী মারাত্মক ফৌজদারি অপরাধ।“