আম্বানী দ্য ম্যাঙ্গো ট্রেডার

২০০৩ সাল নাগাদ পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড থেকে রিলায়েন্সকে একটা নোটিশ ধরানো হয়, কারণ জামনগরে নতুন তৈরি হওয়া রিলায়েন্সের খনিজ তৈল পরিশোধনাগারটি নাকি প্রচুর দূষণ ছড়াচ্ছিল।

গরীব ঘরের ধীরুভাইর রিলায়েন্স, একদম জন্মলগ্ন থেকেই ভারতের বিভিন্ন দল, সরকার ও এজেন্সির বিরাগভাজন হয়েছে, তাই এটাও তাদের কাছে নতুন কিছু ছিল না।

তবে নোটিশ পেয়ে কর্তৃপক্ষ একটু চিন্তায় পরে যায় কারণ দূষণ কমাতে যে যে পদক্ষেপের কথা বলা হচ্ছিল, সেগুলো মানতে গেলে বিরাট অঙ্কের ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়তে হত রিলায়েন্সকে।

সেই সময় হঠাৎ করেই কোন একজনের মাথায় আসে, বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। কর্তৃপক্ষ তৎক্ষনাৎ গুজরাটের জামনগর রিফাইনারির ফাঁকা জমিতে আম গাছ লাগানো শুরু করে দেয়। আমের গাছ লাগানোর সবচেয়ে বড় কারণ ছিল, আম গাছ একধারে যেমন বাতাসে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন ছাড়ে, তেমনই অন্যধারে অন্যান্ন কাষ্ঠল বৃক্ষের থেকে জল কম খায়।

গাছ লাগানোর পর বেশ কয়েক বছর কেটে যায়। ব্যপক হারে বৃক্ষ রোপন দেখে পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডও খোঁচাখুচি বন্ধ করে দিয়েছে। হঠাৎই একদিন দেখা যায় গাছ গুলোতে আম ফলেছে। কর্তৃপক্ষ প্রথমে বিষয়টাতে গুরুত্ব দেয়নি। কারণ আমগাছে আম হবেই, এটা গুরুত্ব দেওয়ার মতন কিছু নয়।

তারপরেই তারা জানতে পারে আমের পরিমাণ কয়েক টন। কথাটা কানে যায় আম্বানি পরিবারের। সবাই নড়েচড়ে বসে। খানদানি না হওয়ার জন্য ব্যবসা করতে গিয়ে প্রচুর স্ট্রাগল করা আম্বানী পরিবার বুঝে যায়, এই ফলন তাদের কাছে আশির্বাদ স্বরূপ। ঐ বছর আম গুলো কর্মী ও স্থানীয়দের মধ্যে বিলিয়ে দিলেও, তারা পরের বছরের জন্য প্ল্যানিং করতে থাকে।

পরের বছর আমের ফলন হতেই তারা সেগুলো সোজাসুজি বিদেশে রপ্তানি করে দেয় এবং কয়েক কোটি টাকা রোজগার করে। আন্তর্জাতিক বাজারে আমের চাহিদা দেখে, তারা আমের ব্যবসার দিকে নজর দেওয়া শুরু করে দেয়।

ব্যবসা শুরুর পর, এই মুহুর্ত্যে একা আম্বানি পরিবারই ১৩ লক্ষ আম গাছের মালিক। শুধু তাই নয়, তারা পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যাঙ্গো এক্সপোর্টার আর এশিয়ার বৃহত্তম ম্যাঙ্গো ট্রেডার।

একটা সরকারি সংস্থার নোটিশ তাদের উন্নতির শিখরে নিয়ে এলো কারণ, তারা নোটিশের ভয় পিছিয়ে যায়নি, তারা সমাধান খুঁজতে চেয়েছিল, যার জন্য তারা সফল হয়েছে। আম্বানী পরিবার ভাল কিছু করতে চেয়েছিল, তাই ভগবানের আশির্বাদের হাত, তাদের মাথার উপর পেয়েছে।

অনিক বোস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.