মাত্র ঊনিশ বছরের জীবন দীনেশচন্দ্র গুপ্ত (৬ই ডিসেম্বর ১৯১১ – ৭ই জুলাই ১৯৩১)-র। আর এই বয়সেই তিনি হয়ে উঠলেন মৃত্যুঞ্জয়ী। কারণ মুক্তি-মন্দিরের সোপনতলে তিনি আত্মবলিদান করেছেন ভারতবর্ষের পরাধীনতার শেকল ভাঙ্গবেন বলে। বিনয়-বাদল-দীনেশ এই ত্রয়ীর অন্যতম দীনেশচন্দ্র গুপ্তের আজ জন্মবার্ষিকী। আজ হয়তো অনেক মানুষই জানেন না, কিন্তু এই স্বর্গগত মানুষেরা এখনো জানেন “স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি।” ইংরেজ তাঁকে ফাঁসিকাঠে ঝোলালেও ভারতবর্ষের বিজয়লক্ষ্মী রক্তকমলে গাঁথা মালখানি কিন্তু তাঁর গলায় পরিয়ে দিয়েছেন।
১৯৩০ সালের ৮ই ডিসেম্বর গর্জে উঠবে তাঁদের পিস্তল, তার দু’দিন আগে তাঁর জন্মদিন গেছে। কিন্তু জীবন তো কেবল সংখ্যা নয়! জীবনের ব্যাপকতর অর্থ; দেশমাতৃকাও জীবনের কড়ি চান। দীনেশ বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স নামক এক গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠনের সঙ্গে নিজেকে জড়ালেন। যাতে সত্যনিষ্ঠ, দামাল, নির্ভীক, দৃঢ়প্রতিজ্ঞরাই জড়াতে পারেন! ভারত-বিদ্বেষী এবং বিপ্লবীদের উপর অত্যাচারী পুলিশ অফিসারদের মধ্যে ত্রাস জাগাতে তিনি মরিয়া হয়ে উঠলেন, যাতে দেশের মানুষকে অত্যাচার করার সাহস না পায় ইংরেজ। অতএব আগ্নেয়াস্ত্র চালনা শিখলেন এবং সতীর্থদেরও শেখালেন। গোপনে গড়ে তুললেন তাজা বিপ্লবের শাখা প্রশাখাগুলি। কুখ্যাত ইন্সপেক্টর জেনারেল সিম্পন সাহেবকে দুর্ভেদ্য রাইটার্স ভবনের মধ্যেই খতম করবেন, প্রতিজ্ঞা করলেন তিন মৃত্যুঞ্জয়ী বীর। সেই কাজ সম্পন্ন হল। তারপর পুলিশের সঙ্গে চললো বিখ্যাত অথচ সংক্ষিপ্ত অলিন্দ-যুদ্ধ, যতক্ষণ তাদের আগ্নেয়াস্ত্রে গুলি আছে। রাইটার্সে এখনও তার অমোচ্য ইতিহাস, ইতিহাস দেশব্রতী মানুষের অন্তরে। কিন্তু পুলিশের হাতে কোনোক্রমেই ধরা দেওয়া চলে না। বাদল বিষ খেলেন এবং অচিরেই মৃত্যু মুখে ঢলে পড়লেন। বিনয় নিজেকে গুলিবিদ্ধ করেছেন। বাদলও তাই করলেন। বিনয় মারা গেলেও দীনেশকে বাঁচিয়ে তুলে ব্রিটিশ-সুলভ বিচার করে ফাঁসিকাঠে ঝোলালো আদালত (৭ ই জুলাই, ১৯৩১)। ইংরেজে সরকারের কাছে তিনি মারা গেলেও দেশপ্রেমী মানুষের কাছে বেঁচে রইলেন। আজও। তাই তো জন্মদিনে তাঁর জন্য কথার মালা গেঁথে রয়েছি। রয়েছেন শত সহস্র দেশব্রতী মানুষ তাদের অন্তরের শ্রদ্ধা নিয়ে।
অরিত্র ঘোষ দস্তিদার এবং কল্যাণ চক্রবর্তী।