কর্নাটক হাতছাড়া হয়েছে মাস কয়েক আগে। সামনেই রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। বছর ঘুরলেই লোকসভা ভোটও। অথচ রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের আকাশছোঁয়া দামে কার্যত নাভিশ্বাস সাধারণ মানুষের। উল্টো দিকে, এ নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে নিশানা করার পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচার এবং প্রতিশ্রুতিতে কম দামের গ্যাস-সিলিন্ডারকে হাতিয়ার করছে কংগ্রেস। এই চাপের মুখে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম কমানোর কথা বিবেচনা করতে বাধ্য হচ্ছে মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের অন্দরমহলের খবর, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে খুব তাড়াতাড়িই। শুধু তা-ই নয়, ভোটের কথা ভেবে পেট্রল-ডিজ়েলের দরে অন্তত কিছুটা সুরাহা দিতে উৎপাদন শুল্ক ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটা হতে পারে বলেও ইঙ্গিত মিলছে সরকারি সূত্রে।
দেশে গৃহস্থের হেঁশেলের গ্যাস সিলিন্ডারের দর আজ বহু দিন ধরেই ১১০০ টাকার বেশি। বিজেপির রাজ্য নেতারা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছেন, এই চড়া দামে নরেন্দ্র মোদীর ‘বিশ্বস্ত’ মহিলা ভোটব্যাঙ্ক অসন্তুষ্ট। তার উপরে রাজস্থানে কংগ্রেস সরকার ৫০০ টাকা দামে গ্যাসের সিলিন্ডার দিচ্ছে। মধ্যপ্রদেশেও কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে, ওই একই দামে সিলিন্ডার মিলবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই চাপের মুখে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, তেলঙ্গানা-সহ পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোট ও আগামী বছরের লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখেই গ্যাসের দাম কমানোর ভাবনা।
গত তিন বছরে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। সাধারণত আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দামের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে এ দেশে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ঠিক হয়। এ দেশে প্রয়োজনের প্রায় ৬০ শতাংশ এলপিজি-ই আনতে হয় বিদেশ থেকে। কিন্তু গত কয়েক বছরে রান্নার গ্যাসের দর প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ার ফলে বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, এর খেসারত দিতে হয়েছে এবং হচ্ছে রাজনৈতিক ভাবে। কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনে এর প্রভাব পড়েছে। সেই সঙ্গে কংগ্রেসশাসিত রাজ্যগুলি ভর্তুকি গুনে ৫০০ টাকা দামে সিলিন্ডার দিতে শুরু করায়, চাপ বেড়েছে বিজেপির উপরে। প্রধানমন্ত্রী যতই খয়রাতির রাজনীতির বিরুদ্ধে জোরালো সওয়াল করুন, তেল এবং গ্যাসের চড়া দামে বিরক্তি ক্রমশ বাড়ছে আমজনতার।
এখন রান্নার গ্যাসের সাধারণ সংযোগের সিলিন্ডারে নামমাত্র ভর্তুকি দেয় মোদী সরকার। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনায় যে সাড়ে ন’কোটি মতো পরিবারকে বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছিল, তাদের জন্য সিলিন্ডার-পিছু ভর্তুকি দেওয়া হয় ২০০ টাকা করে। কিন্তু তার পরেও দরিদ্র পরিবারগুলির পক্ষে প্রায় ৯০০ টাকার বেশি গুনে সিলিন্ডার কেনা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়ামমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী সরাসরি দাম কমানোর কথা না বললেও, দাবি করেছেন যে, আমজনতার বোঝা কমাতে মোদী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এরই মধ্যে জুলাইয়ে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার ৭.৪৪ শতাংশ ছুঁয়েছে। যা ১৫ মাসে সর্বোচ্চ। এই মূল্যবৃদ্ধির হারে লাগাম পরাতে পেট্রল-ডিজেলে উৎপাদন শুল্ক কমানো নিয়েও চিন্তাভাবনা করতে হচ্ছে মোদী সরকারকে। শেষ বার মূল্যবৃদ্ধির হার এতখানি ছিল ২০২২ সালের এপ্রিলে। ওই সময়ে মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৭.৭৯ শতাংশ। তার পরেই মে মাসে পেট্রল-ডিজেলে উৎপাদন শুল্ক কমানো হয়। কিন্তু তার পর থেকে আর শুল্ক ছাঁটাই করা হয়নি।
অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, সেই সময়ে পেট্রলে লিটার প্রতি ৮ টাকা ও ডিজ়েলে লিটার প্রতি ৬ টাকা করে শুল্ক কমানো হয়েছিল। কিন্তু তার দরুন সরকারকে রাজস্ব খোয়াতে হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, এখন জ্বালানির দাম কমানো হলে, কোষাগারে ‘চাপ পড়লেও’ সাধারণ মানুষের সুরাহা হবে। বোঝা কমবে মূল্যবৃদ্ধির। পরিবহণ খরচও কমবে। তারও সুফল দেখা যাবে মূল্যবৃদ্ধির হারে লাগামে। বিরোধী শিবিরের পাল্টা দাবি, অশোধিত তেলের দর কমা সত্ত্বেও বহু দিন ধরে চড়া উৎপাদন শুল্কের জেরে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বেশি গুনেছেন এ দেশের সাধারণ মানুষ। এখন শুল্ক ছাঁটাইয়ের ভাবনা কর্নাটকে ধাক্কা খাওয়ার পরে এক গুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ ভোট দরজায় কড়া নাড়ার কারণেই।