রাজ্যকে জ্বালানির উপর কর কমাতে হবে। গত নভেম্বরে কেন্দ্র পেট্রল-ডিজেলের উপর থেকে আন্তঃশুল্ক কমানোর সময় যে সব রাজ্য ভ্যাট কমায়নি তাদের উদ্দেশে বুধবার এমনটাই বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড-সহ অবিজেপি শাসিত কয়েকটি রাজ্যের নামোল্লেখও করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, এই সব রাজ্যের বাসিন্দাদের সঙ্গে গত ছ’মাস ধরে অন্যায় করা হয়েছে। অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে সুবিধা দেওয়া হয়নি রাজ্যের নাগরিকদের। বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে ভ্যাট কমানোয় পেট্রলের লিটার প্রতি দামেরও উল্লেখ করেন। সেই সময়েই জানান, কলকাতায় দর ১১৫ টাকার আশপাশে আর কাছের রাজ্য উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনউতে ১০৫ টাকার আশপাশে।
বুধবার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বর্তমান কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন মোদী। সেখানেই ওঠে বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কথা। সেটা বলতে বলতেই কেন্দ্র ও রাজ্যকে একসঙ্গে চলার বার্তা দেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘দেশবাসীকে সুবিধা দিতে গত নভেম্বর মাসে আন্তঃশুল্ক কমিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তখনই রাজ্যগুলিকে অনুরোধ করা হয়েছিল, তারাও যেন কর কমায়। কিন্তু কিছু রাজ্য কেন্দ্রের সেই কথা শুনে ভ্যাট কমালেও অনেক রাজ্যই তা করেনি। কোনও না কোনও কারণ দেখানো হয়েছে। এখন সেই সব রাজ্যকে অনুরোধ করছি গত ছ’মাস আগেই যেটা করার ছিল সেটা এখন করে মানুষের সুবিধা করে দেওয়া হোক।’’
বাংলার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা ওই বৈঠকে ছিলেন। সেখানে মোদী আরও বলেন, ‘‘ভারত সরকার রাজস্বের ৪২ শতাংশই দেয় রাজ্যগুলিকে। বিশ্ব জুড়ে যে সঙ্কট চলছে তাতে সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো থাকা প্রয়োজন। কেন্দ্র কর কমানোর পরে রাজ্যগুলিও সেই পথে হাঁটলে মানুষের সুরাহা হবে। দেশের উপকার হবে।’’ পেট্রোপণ্যে ভ্যাট কমানোর আর্জি জানানোর সময় মোদী বলেন, ‘‘আপনাদের রাজ্যের মানুষের ভালোর জন্যই আমি এই প্রার্থণা করছি।’’
জ্বালানির দাম বেড়ে চলায় বেশ কিছু দিন ধরেই আক্রমণের মুখে কেন্দ্র। বুধবার মোদীর গলায় অনুরোধের সুর থাকলেও, আসলে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির দায় রাজ্যের দিকে ঠেললেন প্রধানমন্ত্রী। বিজেপি নেতারা যেটা বলে এত দিন যুক্তি সাজাচ্ছিলেন সেটাই শোনা গেল প্রধানমন্ত্রীর মুখে। জ্বালানির উপরে ভ্যাট কমালে যে রাজ্যগুলির আর্থিক ক্ষতি হয় তা-ও উল্লেখ করেন মোদী। সেই সঙ্গে তিনি এমনটাও বলেন যে, কেন্দ্রের কথা শুনে কিছু রাজ্যে সেই আর্থিক ক্ষতি মেনে নিলেও কিছু রাজ্য নিজেরই নাগরিকদের থেকে গত ছ’মাস ধরে বাড়তি রাজস্ব আদায় করেছে। মোদী বলেন, ‘‘আমি এটা বুঝতে পারি যে পেট্রল, ডিজেলের কর কমালে রাজস্ব আদায় কমে। কর কমানোর ফলে কর্নাটক সরকারের সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় কমেছে। গুজরাতের রাজস্ব আদায় কমেছে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকা। কিন্তু দেখা গিয়েছে কর্নাটক বা গুজরাতের পাশের রাজ্যগুলি কর না কমিয়ে গত ছ’মাস ধরে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করেছে।’’ সরকারগুলি রাজ্যের নাগরিকদের সঙ্গে অন্যায় করেছে বলেও মন্তব্য করেন মোদী।