জাতীয় সড়ক থেকে রেলস্টেশন। ট্রেনের রুট, বিদ্যুতের লাইন থেকে শুরু করে গ্যাসের পাইপলাইন-পরিকাঠামো। এমন বহু সরকারি সম্পদ কর্পোরেট সংস্থাকে ব্যবহার করার সুযোগ দিয়ে আগামী চার বছরে ৬ লক্ষ কোটি টাকা ঘরে তুলতে চাইছে মোদী সরকার। সূত্রের খবর, এই তালিকায় থাকতে পারে দার্জিলিংয়ের টয় ট্রেন, কলকাতা মেট্রো রেলের পরিকাঠামোও।
আগামী চার বছরে কোন কোন ক্ষেত্রের কী কী সম্পত্তি বেসরকারি সংস্থাকে কাজে লাগাতে দেওয়া হবে, সোমবার তার বিশদ পরিকল্পনা (ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পাইপলাইন) ঘোষণা করবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, এক দিকে এয়ার ইন্ডিয়া, ভারত পেট্রোলিয়ামের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণের মাধ্যমে রাজকোষে টাকা আনার চেষ্টা হচ্ছে। অন্য দিকে, সরকারি সম্পত্তি বেসরকারি সংস্থার হাতে তাদের পরিকল্পনামাফিক ব্যবহারের জন্য তুলে দিয়েও (অ্যাসেট মনিটাইজেশন) রাজকোষ ভরতে চাইছে কেন্দ্র।
নীতি আয়োগের সুপারিশ অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সচিবদের একটি কোর গ্রুপ প্রায় ৩০টি ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করেছে। তাদের প্রায় ১০০টি সম্পত্তি বেসরকারি ব্যবহারের পথ খুলে দেওয়া হবে। এর মধ্যে যেমন বিভিন্ন সরকারি সংস্থার অব্যবহৃত জমি, বাড়ি রয়েছে, তেমনই রয়েছে জাতীয় সড়ক, রেলের প্রকল্পও।
অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “অ্যাসেট মনিটাইজেশনে বেসরকারিকরণের মতো সরকার নিজের সম্পত্তি বিক্রি করছে না। তা থেকে আরও আয় বাড়ানোর চেষ্টা করছে। জাতীয় সড়কের কিছু অংশ টোল-অপারেট-ট্রান্সফারের ভিত্তিতে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হবে। আরও কিছু ট্রেন বেসরকারি সংস্থা চালাবে। বেসরকারি সংস্থাগুলি রেলস্টেশন ‘হাতে নিয়ে’ সেগুলিকে নতুন করে ঢেলে সাজাবে। সেখানে আয়ের নতুন পথ তৈরি হবে।”
সূত্রের খবর, দিল্লি মেট্রোর কিছু রুট, রেলের ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর, কলকাতা মেট্রোর কিছু পরিকাঠামো এই তালিকায় রয়েছে। জাতীয় সড়কের ১২টি অংশও (দৈর্ঘ্য প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার) চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৫০টি যাত্রিবাহী ট্রেন, নয়াদিল্লি, মুম্বই-সহ ৫০টি রেলস্টেশন এই তালিকায় আছে। ইন্ডিয়ান অয়েল, গেল-এর পাইপলাইন, পাওয়ার গ্রিডের বিদ্যুৎ পরিবহণ লাইনও বেসরকারি সংস্থাকে ব্যবহার করতে দেওয়ার সম্ভাবনা।
বিএসএনএল, এমটিএনএল-এর টেলিকম টাওয়ার, ফাইবার নেটওয়ার্ক বেসরকারি সংস্থাকে ব্যবহার করতে দিয়েও টাকা আয় করতে চাইছে কেন্দ্র। দার্জিলিংয়ের টয়-ট্রনের মতো রেলের পর্যটন-পরিকাঠামোও বেসরকারি সংস্থাকে পরিচালনার জন্য ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।
বিমান পরিবহণ মন্ত্রক আগেই ছ’টি বিমানবন্দর পরিচালনার কাজ বেসরকারি সংস্থাকে দেবে বলে ঠিক করেছে। চলতি বছরে আরও ১২টি বিমানবন্দর এই তালিকায় যোগ হতে পারে। দিল্লির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামও তালিকায় রয়েছে। সোমবার এই তালিকা প্রকাশ হলে, বিনিয়োগকারীদের পক্ষেও লগ্নির পরিকল্পনা করতে সুবিধা হবে বলে মনে করছে শিল্পমহলের একাংশ। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের ব্যাখ্যা, বাজেটে চলতি অর্থবর্ষে বিলগ্নিকরণ খাতে ১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্য রাখা হয়েছে। কিন্তু অ্যাসেট মনিটাইজেশন থেকে আরও বেশি আয়ের সম্ভাবনা। ২০২১-২২ থেকে ২০২৪-২৫, এই চার বছরে প্রায় ৬ লক্ষ কোটি টাকা ঘরে আসতে পারে। বিরোধীদের অভিযোগ, মোদী সরকার ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে সরকারি সম্পত্তি হয় বিক্রি করে, নয়তো ভাড়া দিয়ে প্রচারের টাকা জোগাড় করছে।