আই সি সি আর এর ‘কলাবিশ্ব’ উৎসবে বিবেকানন্দ যোগ অনুসন্ধান সংস্থান এর নিবেদন ‘সাংস্কৃতিক যোগ কলা’

গীতায় শ্রীভগবান বলছেন, তপস্বিভ্যোহধিকো যোগী জ্ঞানীভ্যোহপি মতোহধিকঃ।
কর্মিভ্যশ্চাধি কা যোগী তস্মাদ যোগী ভবার্জুনঃ।।

যিনি যোগী, তিনি তপঃপরায়ন সাধুগণ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, এমন কি যারা জ্ঞানমার্গে অথবা কর্মমার্গের সাধক, তাঁদের অপেক্ষাও শ্রেষ্ঠ, অতএব হে অর্জুন তুমি যোগী হও।

যোগ ভারতীয় সভ্যতা সংস্কৃতির এক আদিম অনুশীলন। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “জ্ঞানী ব্যক্তিই স্বাধীন ও সুন্দর। তাঁর চিন্তার মধ্যে থাকে সীমাহীন বিস্তৃতি। কিন্তু, তাঁর এই বিশাল স্বাধীনতা অন্তর্ভূক্ত থাকে প্রাকৃতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মের মধ্যে। ব্যক্তি একা কোনোদিন স্বাধীন হতে পারে না। তাঁর মুক্তি সম্ভব হয় যখন সে অপরের সঙ্গে সংযোগ তৈরী করতে পারে”।

মহামণ্ডলে শেখানো হয় মনঃসংযোগ। এর অর্থ মন লাগানো। আমরা কোনো কাজ ই করতে পারি না, যদি না তাতে মন না লাগে! যিনি রান্না করছেন, তিনি যদি রান্নায় মন না দেন, রান্না ভালো হবে না। কেউ পড়াশোনা করছেন বা চাষবাস বা অন্য কিছু। যদি তিনি নিজের কাজে মন না দেন, তাহলে তাঁর করা জিনিসটাই বৃথা যাবে।

যোগ আমাদের সেই মনঃসংযোগ ঘটায় বা মনোযোগ বৃদ্ধি করে। যোগাভ্যাস ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রাচীন অনুশীলনের অন্যতম।
তাই উপনিষদে বলা হয়েছে,
এতদালম্বনং শ্রেষ্ঠং এতদালম্বনং পরম।
এতদালম্বনং জ্ঞাত্বা ব্রহ্মলোকে মহিয়তে।।

যে সমস্ত উপায় অবলম্বন করে ব্রহ্মজ্ঞান লাভ হয়, তারমধ্যে ‘ওমকার’ অবলম্বনই শ্রেষ্ঠ। পতঞ্জলির যোগ দর্শন অনুযায়ী ‘ওম’ শব্দটি ব্রহ্মের প্রতীক।
গীতায় ‘ওম’কারের ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে

ওমিত্যেকাক্ষরণ ব্রহ্ম ব্যহরণ মা মনুস্মরণ।
য প্র্য়াতি ত্যজেন দেহং স জাতি পরমাং গতি।।

ব্রহ্মের প্রতীক “ওম” শব্দটিকে সঠিক জেনে আত্মাকে (নিজেকে) স্মরণ করিতে করিতে যে দেহত্যাগ করিতে পারে সেই মোক্ষ (পরমগতি) লাভ করে। এই প্রতীকের উপাসনার দ্বারাই ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করা যায়।

কেন্দ্রীয় সরকারের ইণ্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেসন্স, আই সি সি আর স্থাপিত হয়েছিল ভারত ও বহির্বিশ্বের দেশগুলির সঙ্গে সাংস্কৃতিক আদান প্রদানের উদ্দেশ্যে। অতি সম্প্রতি শেষ হল তাদের ‘কলাবিশ্ব’ উৎসবের। কোভিড পরিস্থিতিতে ডিজিটাল উপস্থানার মাধ্যমে আই সি সি আর তুলে ধরেছে ভারতীয় সভ্যতা-সংস্কৃতির নানা বিষয় ও ভাবনাকে।

এমনই এক অভিনব ভাবনায় উপস্থাপনা- বিবেকানন্দ যোগ অনুসন্ধান সংস্থান ‘র
“সাংস্কৃতিক যোগকলা” বা ” Cultural Yoga Event” র।

কোলকাতাস্থিত সর্বভারতীয় এই সংগঠনের অধিকর্তা ডক্টর অভিজিৎ ঘোষ একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন যোগ শিক্ষক। তাঁরই তত্বাবধানে সংস্থায় প্রতিনিয়ত হয়ে চলেছে যোগ প্রশিক্ষণ ও অনুসন্ধানের কাজ।

যোগ যেমন মনঃসংযোগ বৃদ্ধি ঘটায়, তেমন ই মানসিক স্বাস্থ্যবিকাশের মাধ্যমে আত্মোন্নতি ঘটে। যোগাসন মন ও ঈশ্বরের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে সেতুবন্ধনের কাজ করে। নিয়মিত যোগাসন অভ্যাস সুস্থাস্থ্য তৈরির কারিগর। ঈশ্বর অনুসন্ধানে স্বাস্থ্যই সম্পদ। উন্নত কার্য সম্পাদন সুস্বাস্থ্য বিহীন কখনোই হতে পারে না।

প্রাচীন ভারত, মনঃসংযোগ এবং মনঃপ্রসারণের জন্য সুর ও তালের অনুশীলন করতো।

‘কলাবিশ্ব’ ‘র এই উৎসবে বিবেকানন্দ যোগ অনুসন্ধান সংস্থান এর কলাকুশলীরা সুর ও তাল ও ছন্দে অনুশীলন করেছেন যোগকলার।

অখিল ভারতীয় কলা সাধক প্রতিষ্ঠান- ‘সংস্কার ভারতী’র সহযোগিতায়, বিবেকানন্দ যোগ অনুসন্ধান সংস্থান এর শিক্ষার্থি, ‘নিকিতা শর্মা, শ্রাবণী মাখাল, স্নেহলতা মহাপাত্র, আরতী কুমারী, কস্তুরি কাশ্যপ এবং পূরবী মণ্ডল এক এক করে প্রদর্শন করেছেন বিভিন্ন যোগকলা। বেহাগ ও ধ্রুপদের সুরে কন্ঠ দিয়েছেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী অধ্যাপিকা মুনমুন রায়। অরিজিত দাস, শ্রীজিত মাজি, অনির্বাণ দাস, সম্রাট পাত্রর যন্ত্র সঙ্গীতের মূর্ছনা অনুষ্ঠানের অন্য মাত্রা যোগ করে।
সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটি মালায় গ্রথিত করেছেন রিয়া বাহদুর। তাঁর কণ্ঠস্বরের মাধুর্য ও বাক্যবিন্যাসে বিশ্বের বহু মানুষের কাছে এটির ভাবার্থ পৌঁছে দিতে তিনি সক্ষম হয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.