সেই শ্বেত শুভ্র কোমল সুন্দর শিল্পের কথা – পঞ্চম পর্ব

পঞ্চম পর্ব

বৈশ্য সমাজে প্রচলিত নৌকাপূজার জন্য বাণিজ্যের প্রতীক হিসাবে চিত্রিত এবং রঞ্জিত শোলার নৌকা প্রস্তুত হয়। শীতলা , মনসা ইত্যাদি পূজার জন্য কাগজের দোলা , নৌকা প্রভৃতি সামগ্রী মালাকারগণ প্রস্তুত করেন। প্রথমে বাঁশের বাতা দিয়ে কাঠামো প্রস্তুত করা হয় , তারপর ওই কাঠামোতে কাগজ সাঁটা হয়। কাগজে কখনো কখনো ছবি আঁকার প্রবণতা দেখা যায়। কাগজের নির্মিত দোলা ও নৌকার মধ্যে সাদা শোলার বিভিন্ন টুকরো দিয়ে নকশা করা হয়।

 অন্যান্য উল্লেখযোগ্য চিত্রিত শোলার জিনিষের মধ্যে করন্ডি বা মনসার মেড় নিয়ে পূর্বেই আলোচনা করেছি। উত্তর ও পূর্ববাংলায় মনসাপূজার অপরিহার্য বস্তু হল এই করন্ডি। মনসার মাধস বা মেড় সর্প পূজার অঙ্গ হিসাবে রাজশাহী অঞ্চলে ব্যাপক ভাবে প্রচলিত আছে। এতে মনসাদেবীর অপটু হাতের ছবি আঁকা থাকে।  শোলা দিয়ে গড়া সাপও মাধসের মধ্যে থাকে। এছাড়া শোলা দিয়ে মুখোশ তৈরি হয়। 
নানা  সময় নৃত্যের ক্ষেত্রে মুখোশের ব্যবহার এক প্রাচীন প্রথা। সে পুরুলিয়ার ছৌ হোক বা মালদা জেলায় গম্ভীরা উৎসবের গম্ভীরা নৃত্যের সময় গম্ভীরা মুখোশ, অথবা দক্ষিণের কথাকলি বা তৈয়ম নৃত্য বা উত্তরের লে লাদাখ , ভুটান, নেপাল, তিব্বত, কম্বোডিয়া, আফ্রিকার নানা লোক নৃত্য বা দৈবিক কাল্ট সংক্রান্ত নৃত্য হোক, সব ক্ষেত্রেই মুখোশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । পৌরাণিক চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে ও লোকসংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে মুখোশের ব্যবহার হয়।

পুরুলিয়া ছৌ নাচে মুখোশের ব্যবহার পুরুলিয়া ছৌ কে এক অন্য মাত্রা দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের লোকশিল্পের অংশ হিসেবে ছৌ মুখোশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুরুলিয়ার ছৌ মুখোশ পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক স্বীকৃতি পেয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলায় গম্ভীরা উৎসবে মুখোশ পরে একক বা দলবদ্ধ নৃত্য পরিবেশিত হয়। গম্ভীরা নৃত্যের মুখোশ বিভিন্ন ধরণের মুখোশ ব্যবহৃত হয়।  পৌরাণিক চরিত্রের বাণ, কালী, নরসিংহী, বাশুলী, গৃধিনীবিশাল, চামুণ্ডা, উগ্রচণ্ডা, ঝাঁটাকালী, মহিষমর্দিনী, লক্ষ্মী-সরস্বতী, হিরণ্যকশিপুবধ, তাড়কাবধ, শুম্ভনিশুম্ভ বধ ইত্যাদির মুখোশ ব্যবহৃত হয়। এই মুখোশের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় নরসিংহী মুখোশ।
শিবের মুখোশ নবদ্বীপের লৌকিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অংশ। চৈত্র মাসে শিবপার্বতীর বিয়ের সময় এই মুখোস তৈরি করা হয়। লৌকিক শৈব সংস্কৃতির সাথে এই মুখোশ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটিকে মুখোশ বলা হলেও আসলে এটি মাটি দিয়ে তৈরি মূর্তি। বহুবর্ণশোভিত এই মুখোসটি লৌকিক শিল্পের অন্যতম নিদর্শন। 

‘মুখোশ’- মুখের সঙ্গে মিলেমিশেই একাত্ম হয়ে উঠেছে। ছদ্মবেশে সুরক্ষা, প্রদর্শন, বিনোদনে মুখোশের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। সুদূর অতীত থেকেই পৃথিবীব্যাপী মুখোশের প্রচলন দেখা যায়। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ভিন্ন ধরণের মুখোশ তৈরি হয়।

মানুষের ব্যক্তি চরিত্রকে অন্য এক সত্ত্বায় রূপ দেয় মুখোশ। আদিম সমাজে অশরীরী আধিভৌতিক জগতের সঙ্গে ব্যক্তির সংযোগ ঘটাতে মুখোশের ব্যবহার হতো। প্রচলিত আছে ঈশ্বর, জীবিত এবং মৃত মানুষের যোগসূত্র ঘটাতে মুখোশ রহস্য ও গুপ্তবিদ্যার হাতিয়ার। আদিকাল থেকেই ধর্মীয় রীতি, উৎসব, পার্বন থেকে শুরু করে আত্মরক্ষায় মুখোশের ব্যবহার করা হত। মাটি, কাঠ, বাঁশ, কাগজ দিয়ে বানানো হয় মুখোশ। পৃথিবীর সর্বত্রই রয়েছে মুখোশের ব্যবহার। 

শোলার মুখোশ নিৰ্মাণ হয় প্রধানত পুজোকেন্দ্রিক কর্মে। উজ্জ্বল বর্ণময় এই মুখোশ তৈরিতে প্রথমে পুকুর বা জলা থেকে শোলা সংগ্রহ করা হয়। এরপর লম্বা লম্বা শোলার পাত কাটা হয়। এগুলিই আঠা ও প্রয়োজনমতো কাগজের সাহায্যে মুখোশের রূপ দেওয়া হয়। বাজার থেকে কেনা রং ব্যবহার করা হয়। কালী আর মাশান এর শোলার মুখোশ লাগে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে।

মুখোশচিত্র, বাংলার লোক কারুশিল্পের ঐতিহ্যের এক অনন্য শৈল্পিক অংশ। বাংলার সামাজিক ইতিহাসের একটি মূল্যবান সম্পদও বটে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘দেশের লোকসংস্কৃতির মধ্যে অতীত যুগের সংস্কৃতির বহু নিদর্শন আজ সংযুক্ত আছে, মুখোশচিত্র শিল্প সেগুলোর অন্যতম। এটি আমাদের জাতির পূর্ণাঙ্গ লোকসংস্কৃতির মূল্যবান উপকরণ’। মানব সমাজের মুখোশচিত্র সম্পর্কিত শিক্ষার তথ্য ও তত্ত্ব সংবলিত বিষয়কে সাধারণ অর্থে মুখোশচিত্রের ইতিহাস বলা হয়। মুখোশচিত্র গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের সৃষ্টি। চরিত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত মুখোশ মুখে লাগিয়ে মঞ্চে অভিনয় ও পূজা-পার্বণে নৃত্য পরিবেশিত হয়। যে কোনো অনুষ্ঠানে নৃত্য-অভিনয়ের সঙ্গে মুখোশের আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে নানাভাবে মুখোশের আবির্ভাব ঘটে। বাংলাদেশের গ্রামের বিভিন্ন মেলায় বা যাত্রানুষ্ঠানে, চৈত্রসংক্রান্তিতে নৃত্যের আয়োজন হতো, সেই মেলায় বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পসরা সাজানো হতো নানা ধরনের মুখোশ দিয়ে। অনেক ধরনের মুখোশ আছে যেগুলোকে খেলনা জাতীয় মুখোশ বলা যেতে পারে। আবার অনেক মুখোশ আছে যা নৃত্য, অভিনয় এবং পূজা-পার্বণে ব্যবহার করা হয়। মুখোশচিত্রের প্রতিটি শিল্পীই তাদের তৈরি মুখোশকে সামান্য রদবদল করে বিভিন্ন চরিত্র সৃষ্টি করে। যেমন- বাঘ, ভালুক, বানর, দেবদেবী ইত্যাদি। আর এসবই শিল্পীর হাতের সৃষ্ট কলাকৌশল।

তবে কিনা, দেবী মূর্তির পিছনে যে রঙিন কাগজ চিটানো হয় তাকেও গম্ভীরা বলেন। আরও আছে, যেমন – শিবের টোপর । শিবের গাজন এবং শিবরাত্রির সময় এই শিবের টোপর অনেক জায়গায় ব্যবহার হয়। কাগজ দিয়ে চোঙাকৃতি কাঠামো প্রস্তুত করে তার উপর শোলার কারুকার্য করা হয়। এই টোপর শিবের মাথায় পড়ানো হয় । দেব মূর্তি বা শিব লিঙ্গের দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থের উপর টোপরের আকার নির্ভর করে। 
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় শোলা শিল্পের কেন্দ্রগুলি বিদ্যমান। হাওড়া জেলার বালি হল অন্যতম বৃহৎ ও বিখ্যাত শোলা শিল্পকেন্দ্র। এখানে শোলার গায়ে অপূর্ব নক্সী কাজ করা হয়। কার্তিক , অগ্রহায়ণ মাসে বালি ব্যারাকপুর এবং ২৪ পরগনার খড়দহে রাসের উৎসবে ও মেলায় সর্বোৎকৃষ্ট শোলার অলঙ্করণ দেখতে পাওয়া যায়। হাওড়ার আমতা, রামেশ্বরপুর , থুরুট, বসন্তপুর, ডোমজুর এবং জয়নগরে শোলার কাজ হয়। 

হুগলী জেলার ডানকুনি , উত্তরপাড়া, চুঁচুড়া , শ্রীরামপুর , জনাই, শিয়াখালা, চন্দননগর ,কোন্নগর, নবাবপুর ও বেগমপুরের শোলাশিল্প কেন্দ্রগুলি অন্যতম। ২৪ পরগনার আগরপাড়া, আড়িয়াদহ , খড়দহ ও বরানগরে শোলার কাজ হয়। কলকাতার নূতন বাজার, জোড়াসাঁকো, কুমারটুলি, বাগবাজার প্রভৃতি অঞ্চলে শোলাশিল্প কেন্দ্রগুলিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। 

অপরাপর যে সব অঞ্চল ওই শিল্পের জন্য উল্লেখযোগ্য সেগুলি হলো মেদিনীপুরের তমলুক, মেদিনীপুর শহর, গড়বেতা ইত্যাদি। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর , বাঁকুড়া শহর, মালিয়ারা, জগন্নাথপুর , রাণিয়ারা, সোনামুখী , পাত্রসায়র প্রভৃতি অঞ্চল। বর্ধমান জেলার বর্ধমান শহর, কাটোয়া , পাটুলি, ডোমহানি , মদনপুর, আসানসোল , বক্তার নগর , বুজুদিহা , পানাগড় , কুরমুন , নবগ্রাম, হাট গোবিন্দপুর , নিজাম , ভাতার ইত্যাদি। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য , প্রতিমার সব থেকে সুন্দর শোলার কাজ দেখা যেত কলকাতার জানবাজারে রাণী রাসমণির বাড়িতে দুর্গা পূজায়। পূর্বে বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলীর অন্তর্গত পাটুলি থেকে মালাকারেরা এসে প্রতিবার শোলার সাজ করতেন। বর্ধমানের সেই শিল্প ঐতিহ্য আজও দীপ্যমান। বর্ধমানের বনকাপাসী আর আশেপাশে কয়েকটি গ্রামে ডাকের সাজ, শোলার সাজ এবং অন্যান্য শোলার কাজ উৎকর্ষের সীমানায় পৌঁছেছে। 

নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর , কালীগঞ্জ, মতিয়ারি, নবদ্বীপ ও শান্তিপুরে এখনো শোলা শিল্পের চর্চা আছে। নদীয়ার মালাকারেরা শোলার টুপি তৈরি করেন। মুর্শিদাবাদে বহরমপুর , বেলডাঙ্গা, বেগুনবাড়ি শোলা শিল্পের জন্য বিখ্যাত। বীরভূমের বালিজুড়ি, পাইকর, মাহুলা, নিচিন্তা ,দুবরাজ , সিউড়ি, রাজনগর অঞ্চলে শোলাশিল্পের কেন্দ্র আছে। উত্তরবঙ্গের কুচবিহার জেলা শোলাশিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ। 

পূর্ববঙ্গের খুলনার চিতলমারীতে শোলার কাজ হতো। সেখানের সুতোয় ঝোলানো শোলার পুতুল গুরুসদয় দত্ত মহাশয়ের সংগ্রহ শালায় আছে। ওই অঞ্চলে পুতুলই অধিক তৈরি হতো। কারন ওই স্থানের মালাকার গোষ্ঠীর অন্যতম বৃত্তি ছিল পুতুল নাচ দেখানো। বরিশালের শোলার নক্সী কাজ একসময় বিখ্যাত ছিল। কিন্তু দেশভাগ , দাঙ্গা ও গণহত্যার ফলে সব ধ্বংস হয়ে গেছে। 

শোলার নক্সী কাজে বঙ্গের মলাকারেরা তুলনা রহিত। মাল্য রচিয়তাই মালাকার। তাঁদের শিল্পী হিসাবে প্রধান পরিচয় অনবদ্য শোলার নক্সা ও অলঙ্করণে। সর্বশ্ৰী অনন্ত মালাকার, বনকাপাসী গ্রামের আদিত্য মালাকার ও তাঁর মা , রবীন মালাকার এবং অমৃতলাল ঘোষ প্রমুখরা শোলা শিল্পী হিসাবে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছেন।  আদিত্য মালাকার ১৯৭৪ সালে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার লাভ করেন। অনন্ত মালাকারের নির্মিত শোলার অনবদ্য দুর্গা প্রতিমা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ সংগ্রহশালার বিশেষ মূল্যবান সম্পদ।

সেই যে প্রথম পর্বে বলেছিলাম , বঙ্গে আচার্যি ব্রাহ্মণরাও শোলার কাজ করতেন। ২৪ পরগণার মগরাহাটের আচার্যি শিল্পীরা এখনো ব্যাপক হারে শোলার কাজ করে থাকেন।
কথিত আছে, , পশ্চিমবঙ্গে কৃষ্ণনগরের নিকট প্রথম ডাকের সাজের সূত্রপাত হয়। সেই স্থানের নাম #বীরনগর। বীরনগরে যে সব শিল্পী ডাক এবং শোলার সাজ তৈরি করেন ,তাঁদের মধ্যে প্রথম দুজন হলেন পালিত পাড়ার আচার্যি শিল্পী নীলমণি আচার্য এবং কানাইলাল আচার্য।

ক্রমশ সমাজে মানুষের রুচি ও অর্থনৈতিক , সামাজিক ইত্যাদি পরিবর্তনের সঙ্গে এই শোলা শিল্প , ডাকের সাজ, শোলার সাজ ইত্যাদি ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকল। এর কতকগুলি কারন ছিল – 
১. কাঁচামালের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি

২. মানুষের রুচির পরিবর্তন

৩. শোলা শিল্পের আঙ্গিকতার পরিবর্তন

৪. জনবিন্যাসের পরিবর্তন

৫. শোলা শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল যেমন আঠা বা বিরজার আঠা, মোম , খুব মোটা সাদা কাগজ , এলমুনিয়াম ফয়েল, গোটা ও কাটা গুটি , সরু তার, নানা রঙের বার্নিস কাগজ, বসমা, টিস্যু কাগজ, চুমকি, জরি, অভ্রগুড়ি, অভ্র চাকতি ইত্যাদি জিনিসপত্র। সেগুলির দাম অপেক্ষাকৃত অধিক। পূর্বে এই কাঁচামালের অধিকাংশই আসত বিদেশ থেকে , এখন আমাদের দেশে তৈরি হলেও শোলার জিনিস সৌখিন মানুষরা ক্রয় করে না। ফলত, শিল্পের রুগ্ণ অবস্থা সৃষ্টি হয়। 

৬. শোলার উপর কাজ খুবই পরিশ্রমের। ফলে, বর্তমান প্রজন্ম তেমন ভাবে আগ্রহী নয়।যদিও এই কাজে বাড়ির মেয়েরা , কিশোর কিশোরীরা অবসর সময় অনায়াসে হাত লাগাতে পারে। 

৭. শোলা অপেক্ষাকৃত কমদামি ও সহজলভ্য এবং সহজে পরিবহণ যোগ্য। গ্রামের খাল বিলে জন্মাত বলে একরকম বিনা পয়সায় সংগ্রহ করা সম্ভব হতো , এমন কি হাটে বাজারে এবং কোনো স্থানীয় মেলায় বিক্রি হতো। প্রসঙ্গত স্মরণ যোগ্য যে বীরভূম জেলার মহেশপুরে কালীতলার মেলায় গাড়ি গাড়ি শোলা আমদানি হতো। এ অঞ্চলে প্রবাদ প্রচলিত আছে , ” মহেশপুরের মেলা, কলা আর শোলা “। বর্তমানে এর অপ্রতুলতা চোখে পড়ে।

 ৮. তাছাড়া এখন থিম পুজোর যুগে সাবেকি শোলার বা ডাকের সাজের প্রতিমা কেবল বনেদি পুজো ছাড়া অন্যত্র দেখা যায় না। 

বঙ্গের অপরাপর ঐতিহ্যবাহী শোলা শিল্পের চর্চা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে। এই অতিমারীকালে তো আরো ভয়াল অবস্থা শিল্পীদের। আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। বর্তমানে তাঁদের মধ্যে বংশগত পেশা ত্যাগ করে অন্য জীবিকার সন্ধান করার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। তাছাড়াও সারাবছর তো আর শোলার কাজ হয় না এখন। লোকে শোলার জিনিস কেনে কম। তার উপরে চীনে মালের বাড়বাড়ন্ত। ফলে , একটা নির্দিষ্ট সময়ের বছরের অন্য সময়ে কাজও থাকে না। বেকার হয়ে বসে থাকতে হয়। 

তবে চরম নিরাশার মধ্যে আশার কথা যে পশ্চিমবঙ্গে সাবেকি পুজোগুলি ডাকের সাজ বা শোলার সাজকে ত্যাগ করে নি। তাছাড়াও লক্ষ্মী পূজা, শ্যামা পূজা, সরস্বতী পূজা ইত্যাদি গুলিতেও ডাকের সাজকেই এখন প্রাধান্য দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাপক জাঁকজমক করে দেবী র শোলা বা ডাকের নিখুঁত আভরণকে ব্যবহার করা হয়। এমনকি চালচিত্রগুলিও থাকে নিখুঁত। ডাক ও শোলার আল্পনা এখন গৃহ সজ্জায় ক্রমশঃ আদৃত হচ্ছে। এমন চলতে থাকলে হয়তো শোলাশিল্পীরা বেঁচে যাবেন।


সমাপ্ত 
©দূর্গেশনন্দিনী
তথ্যঃ ১. অনবদ্য শোলা শিল্প

২. শোলা শিল্প : ডঃ বাদল চন্দ্র সাহা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.