Parshwanath temple

প্রতিমা, শালভঞ্জিকা কিছু কথা প্রথম পর্ব

প্রথম পর্ব

সুপ্রাচীন সনাতনী ভারতবর্ষে সেই সুপ্রাচীন কাল হতে  প্রতিমা নিৰ্মাণ হত গর্বের সঙ্গে। নানা প্রাচীন গ্রন্থ , রচনা, সাহিত্য হতেই তার প্রমাণ প্রাপ্ত হয় । প্রতিমার উপাদান রূপে ধাতু ,প্রস্তর , মৃত্তিকা , গজদন্ত , তৃণ , কাষ্ঠ , বস্ত্র প্রভৃতি গৃহীত হত।  উপাদানের এবং প্রয়োজনের পার্থক্য অনুসারে মূর্তি বা প্রতিমার নানা প্রকার শ্রেণীবিভাগ দেখা যায় । অমরকোষে – প্রতিমান প্রতিবিম্ব, প্রতিমা , প্রতিযাতনা, প্রতিকৃতি , অর্চা, প্রতিনিধি এই কয়টি শব্দ প্রতিমা অর্থে প্রযুক্ত হয়েছে। যদিও এই কয়টি শব্দ আপাততঃ সমানার্থ বলে প্রতিভাত হয় , তথাপি ব্যুৎপত্তিগত অর্থে এবং শাস্ত্রোক্ত প্রয়োগে , এদের অর্থগত পার্থক্যের পরিচয় পাওয়া যায়। 

Kopeshwar temple. Khidrapur, Kolhapur, Maharashtra, India


প্রতিমান শব্দের নিরুক্তি যার দ্বারা প্রকৃত বস্তু উপমিত অর্থাৎ অনুকৃত হয়, এই ব্যুৎপত্তি অনুসারে দেবতা , মনুষ্য , পশু প্রভৃতি যাবতীয় মূর্তবস্তুর কৃত্রিম প্রতিবিম্বই প্রতিমা শব্দের প্রতিপাদ্য হতে পারে, প্রতিবিম্ব প্রভৃতি শব্দের নিরুক্তিলভ্য অর্থও এরই অনুরূপ। কিন্তু অর্চাশব্দের ব্যুৎপত্তি লভ্য অর্থ যাকে পূজা করা হয় …
“অৰ্চাতে কর্মণি অঙ্ প্রত্যয়”


সুতরাং , কেবল দেবতার প্রতিকৃতিই অর্চা শব্দের প্রতিপাদ্য ; মনুষ্যাদির প্রতিকৃতি অর্চা হতে পারে না । অমরসিংহ লাঘবতঃ পূজ্য অপূজ্য উভয় প্রতিকৃতির একত্র উল্লেখ করেছেন। অথবা , কেবল পূজ্য প্রতিমাই তাঁর অভিপ্রেত , তা নিশ্চয় অনুমান করা যায় না।
স্মৃতির বচনে অর্চা শব্দ পূজ্য প্রতিমা অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। যথা- 
কেশবর্চা গৃহে যস্য ন তিষ্ঠতি দুরাত্মন।

তস্যান্নং নৈব ভোক্তব্যং অভক্ষ‍্য্যেণ সমং স্মৃতম্।। ( আহ্নিকতত্ত্ব)

FIGURE OF NAGINI, RAMAPPA TEMPLE, PALAMPET, ANDHRA PRADESH, INDIA


ভাগবতের ১১ শ স্কন্ধে পূজ্য প্রতিমার  আট প্রকার ভেদ দেখতে পাওয়া যায় । যথা – শিলাময়ী , দারুময়ী, লৌহময়ী, লেপ্যা , লেখ্যা, বালুকাময়ী , মনোময়ী ও মণিময়ী। শুক্রনীতিসারেও আট প্রকার প্রতিমা কথিত হয়েছে । তবে তাদের ভেদ ভাগবত হতে কিঞ্চিৎ স্বতন্ত্র দেখা যায় । যথা – সৈকতী , পৈষ্টী, লেখ্যা, লেপ্যা, মৃন্ময়ী , কাষ্ঠময়ী , পাষাণময়ী ও ধাতুময়ী। এরা উত্তরোত্তর স্থিরতররূপে জ্ঞাতব্য ।
প্রতিমা সৈকতী পৈষ্টী লেখ্যা লেপ্যাচ মৃন্ময়ীবাক্ষী

পাষাণ – ধাতুত্থা  স্থিরাজ্ঞেয়া যতোত্তরা।।


বালুকা নির্মিত প্রতিমা বা মূর্তি মৃন্ময়ী হলেও রা স্বতন্ত্র রূপে নির্দিষ্ট হয়েছে। এই কারণ মৃন্ময়ী প্রতিমা নির্মাণে খড়, পাট , কঞ্চি ইত্যাদি নানা পৃথক উপাদানের আবশ্যক হয়। সৈকতী উপাদান কেবলই বালুকা। পিষ্ট পদার্থের পিটালু প্রভৃতির দ্বারা নির্মিত পৈষ্টীনামে অভিহিত হয়েছে। যা চিত্রে অঙ্কিত হয়, তার নাম লেখ্যা। মৃন্ময়ী প্রতিমার মুখ ছাঁচে এবং অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হস্ত ব্যাপারে নিষ্পন্ন হয়। বার্খী , পাষাণময়ী এবং ধাতুময়ী প্রতিমা বৃক্ষ , প্রস্তর ও বিবিধ ধাতু এই সকল পদার্থ হতে উৎকীর্ন হয়ে থাকে। ধাতু গলিয়ে ছাঁচে ঢেলে ও ধাতু মূর্তি বা প্রতিমা প্রস্তুত করা হতো। 

যেহেতু আমি পুতুল নিয়ে লিখব তাই আর একটু প্রতিমা বা মূর্তি নিয়ে বলব এই পর্বে । এটার ব্যাখ্যা না দিলে পূজ্য ও অপূজ্য মূর্তি বা প্রতিমা কি তা বোঝা যাবে না। তাহলে পুতুল নিয়ে বলাটাই আমার বৃথা হয়ে হয়ে যাবে । 

Warrior women holding double swords from a Jain Temple, Jaisalmer


 ভারতের কালিবঙ্গান হোক বা হোৎকা বা হরপ্পা বা সিন্ধু সভ্যতার  প্রস্তর ও তাম্র প্রস্তর যুগীয় মাতৃ মূর্তি অথবা হোক অস্ট্রিয়ার ভিলেডর্ফে প্রাপ্ত প্রত্ন প্রস্তর যুগীয় মাতৃ মূর্তি  হোক অথবা প্রাচীন প্যালেস্তানীয় সংস্কৃতিতে প্রচলিত পূর্ব পুরুষদের প্রতিমূর্তি বা রাঢ় বাঙ্গালার বীর স্তম্ভ , নানা টোটেম হল ধর্মবিশ্বাসের আদিম ,প্রাচীন এবং সনাতনী জায়গা।

 
প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যে পুতুল শব্দটি অন্বেষণ করে বের করা খুবই কঠিন ব্যাপার। তবে কিনা , #পুততুলম্ শব্দটিকে আদি ধরে নিয়ে স্নিক প্রত্যয় করে পৌত্তলিক শব্দটি আমাদের মানে এই সাধারণ মানুষের তৈরি। অর্থাৎ কিনা মূর্তি উপাসনা বা কোনো প্রাকৃতিক উপাসনা হল ব্রম্ভের উপাসনা বা নিরাকার শক্তির সাকার উপাসনা । তা কোনো ভাবেই পৌত্তলিকতা নয়। যদিও সূচনায় পুতুল শব্দের ব্যাখ্যা করেছি তবুও  আরেকটু বলি। মূর্তি নির্মাণের মধ্যে দিয়ে প্রাচীন কাল হতে সনাতনী মানুষের কেবল আপন শিল্প সত্তাই প্রকাশিত হয় নি। প্রকাশিত হয়েছিল আপন হৃদয়ের বাৎসল্য ভাব , স্নেহ,  মমতা ,প্রেম ইত্যাদি অভিব্যক্তিও।

Apsara using lipstick. Rani ki Vav, Patan, Gujarat.

 
লৌহ প্রতিমা বা মূর্তি সূর্মী ,স্থূণা  ও অয়ঃপ্রতিমা নামে অভিহিত হয়। 
সূৰ্মী স্থূণায়ঃ প্রতিমা।
সূৰ্মীর অভ্যন্তর স্বছিদ্র থাকত। তাতে অগ্নি প্রবেশিত হয়ে দগ্ধ করত। বোধ হয় এটি মল শোধনের উপায় রূপে বিবেচিত হতো । এই পদ্ধতি পোড়ামাটি দ্রব্য ,পোড়া মাটির পুতুল, পোড়া মাটির প্রতিমা বা পোড়ামাটির মূর্তি ইত্যাদি নির্মাণের সময়ও দেখা যায়।  যার নাম আরেক নাম হল টেরাকোটা।  মহাভাষ্যধৃত একটি মন্ত্রে সূৰ্মী এবং তাতে অগ্নিপ্রবেশের পরিচয় পাওয়া যায়। 

সুদেব অসি বরুণ যস্য তে সপ্তসিন্ধবঃ

অনুক্ষরিত কাকুদং সূৰ্মীং সুষিরামিব।।


” হে বরুণ ! তুমি সুদেব অর্থাৎ সত্যদেব হও, অগ্নি যেমন স্বছিদ্র সূৰ্মীর মধ্যে প্রবিষ্ট হয়ে দহন করে, সেরূপ  তোমার সপ্তসিন্ধু অর্থাৎ সাতবিভক্তি তালুকে প্রকাশিত হয়। “

Sculptures of Apsarās and other Celestial Women at Rani ki Vav


 ব্যাকরণেও পূজ্য ও  অপূজ্য এই দ্বিবিধ প্রতিকৃতি অর্থেই অর্চা শব্দ  প্রয়োগ করা হয়েছে। বিক্রেয় এবং অবিক্রেয় ( যা দেবলকদিগের তাদের জীবিকা রূপে ব্যবহৃত হয়)  এই  উভয় বিধ প্রতিমার সংজ্ঞাগত পার্থক্যও বিবেচিত হয়েছে।  পাণিনির কয়েকটি সূত্র এই বিষয়ে প্রমাণ রূপে উপন্যস্ত হতে পারে । যথা – ইবে প্রতিকৃতৌ। ইব অর্থাৎ সদৃশ অর্থে প্রতিপাদিকের উত্তর কন্ প্রত্যয় হয়, প্রতিকৃতি বুঝালেই এই প্রত্যয় হবে,  অন্যত্র হবে না। যথা –  অশ্বের প্রতিকৃতি অশ্বক, উষ্ট্রের প্রতিকৃতি উষ্ট্রক ইত্যাদি । 

Beautiful sculpture of Rani ki Vav (stepwell/temple), Patan, Gujarat, BHARAT (India)

“জীবিকার্থে  চাপণ্যে”- যা জীবিকার জন্য ব্যবহৃত হয় অথচ বিক্রেয় নয়। সেইরূপ প্রতিকৃতিকে বোঝালে ইবার্থে বিহিত কন্ প্রত্যয়ের লোপ হয় । যেমন – মহাদেব ,স্কন্ধ ,বাসুদেব ,বিষ্ণু , আদিত্য ইত্যাদি। উদাহৃত বাসুদেব প্রভৃতি শব্দে দেবলক প্রভৃতির জীবিকা স্বরূপ -দেব প্রতিমা অভিহিত হয়ে থাকে।  
কাশিকায় উল্লিখিত দেবলক শব্দের অর্থনক প্রসঙ্গের পদমঞ্জরী টীকাকার হরদত্ত বলেছেন – ” যে প্রতিমা গ্রহণ করে গৃহে গৃহে ভিক্ষা করে বেড়ায় , সেই প্রতিমা বাসুদেব শিব প্রভৃতি শব্দে অভিহিত হয়েছে এবং তাদৃশ ভিক্ষুকগণই দেবলক শব্দের প্রতিপাদ্য। ” যাহা মঙ্গল কামনায় অথবা মুক্তিকামনায় গৃহাদিতে স্থাপিত এবং পূজিত হয় , তাদৃশ প্রতিমা বোঝালে ” অর্চানুপূজার্থাসু” ইত্যাদি বক্ষ‍্য‍মাণ অনুশাসনানুসারে প্রত্যয়ের লোপ হয়। 
বাসুদেবঃ শিব ইতি যাঃ প্রতিমাঃ প্রতিগৃহ্য  গৃহাদ্ গৃহং ভিক্ষামাণা অটন্তি , তা এব মুচ্যন্তে। তাহি জীবিকার্থা ভবন্তি দেবলকা অপি ত এব ভিক্ষবোহভিপ্রেতাঃ। যাস্ত্ত্বায়তনেস্বভ্যুদয়নিশ্রেয় সার্থং প্রতিষ্ঠাপ্যন্তে পূজ্যন্তেচ তান্বর্চাসু পূজার্থাস্বিতি বক্ষ‍্য‍মানেন লুগ্ ভবতী। “

 বিক্রেয় প্রতিমা বোঝালে হস্তিক, রথ, অশ্বক  নানাপ্রকার খেলনা পুতুল এইরূপ হয়ে থাকে। 
দেব পথাদিভ্যশ্চ
প্রতিকৃতি বোঝালে ইবার্থে এবং সংজ্ঞার্থে দেব পথদি শব্দের পর বিহিত কন্ প্রত্যয়ের লোপ হয়। বৃত্তিকার কর্তৃক এই সূত্রের অভিপ্রায় বিশদরূপে কারিকাকারে বিবৃত হয়েছে। 
অর্চাসু পূজনার্থাসু চিত্রকর্ম – ধ্বজেষু চ।

ইবে প্রতিকৃতৌ লোপঃ কনো দেবপথাদিষু ।।
পূজনার্থ অর্চা, চিত্রকর্ম এবং ধ্বজ এই সকল অভিহিত হলে সদৃশ প্রতিকৃতি অর্থে কন্ প্রত্যয় লোপ হয়।পূজনীয় অর্চা অর্থে শিব , বিষ্ণু , চিত্র অর্থে অর্জুন , দুর্যোধন , ধ্বজ অর্থে কপি , গরুড় ইত্যাদি প্রয়োগ হয় । 


প্রাচীন যুগে যে সকল কার্যে প্রতিমার প্রয়োজন হত , বর্তমান কালে অনেক স্থানেই তার বিপর্যয় ঘটেছে। বর্তমান সময়ে আভ্যুদায়িক কার্যে গৌরী প্রভৃতি মাতৃকা পূজায় প্রতিমার ব্যবহার দেখা যায় না , যব পুঞ্জেই অর্চনা হয়ে থাকে। কিন্তু পুরাকালে শুভ্র প্রতিমাতেও এই পূজা সম্পন্ন হতো। 
প্রতিমার অভাবে পট এবং পটের অভাবে  যবপুঞ্জের ব্যবস্থা দেখা যায়। 
কর্মাদিযুচ সর্বেষু মাতরঃ সগণাধিপাঃ

 পূজনীয়াঃ প্রযত্নেন পূজিতাঃ পূজয়ন্তি তাঃ।।

প্রতিমাসুচ শুভ্রাষু লিখিত্বা বা পটাদিষু –

 অপি বাহক্ষত – পুঞ্জেষু নৈবেদ্যৈশ্চ পৃথগবিধৈ।।


বর্তমান যুগে গ্রহযোগ বিলুপ্ত হয়ে নাই।  কিন্তু সেই সুপ্রাচীন যুগের নির্দিষ্ট  বিভিন্ন উপাদান – ঘটিত তাদৃশ গ্রহপ্রতিমা আজ কয়স্থলে দেখা যায় ? মহর্ষি যাজ্ঞব্ল্ক‍্য‍ বলেছেন যে, তাম্র, স্ফটিক , রক্তচন্দন এই তিন উপাদানের দ্বারা যথাক্রমে সূর্য, চন্দ্র এবং মঙ্গল এই তিন গ্রহের মূর্তি প্রস্তুত করতে হবে। স্বর্ণের দ্বারা বুধ ও বৃহস্পতির মূর্তি , রজত, লৌহ , সীসা ও কাংস্য এই চারি ধাতুর দ্বারা যথাক্রমে শুক্র , শনি , রাহু ও কেতু এই চারি গ্রহের মূর্তি প্রস্তুত করতে হবে । 


সূর্যঃ সোমো মহীপুত্রঃ সোমপুত্রো বৃহস্পতিঃ

শুক্র শৈনশ্চরো রাহুঃ কেতুশ্চেতি নবগ্রহাঃ।।

তাম্রকাৎ স্ফটিকদ্রক্ত -চন্দনাৎ স্বর্ণকাদুভৌ

রজতাদয়সঃ সীসাৎ কাংস্যাৎ কার্যা গ্রহাঃ ক্রমাৎ।।


পত্নীর সাহিত্য ব্যতীত যজ্ঞকার্যে অধিকার নেই। পত্নীর অভাবে তাঁর প্রতিকৃতি প্রস্তুত করে তাঁকে প্রতিনিধি রূপ কল্পনা করে যজ্ঞে ব্রতী হবারই রীতি ছিল অতিপ্রাচীন।


রামোহপি কৃত্বা সৌবর্ণীং সীতাং পত্নীং যশস্বিনী

 ঈষৈ যজ্ঞৈর্বহুবিধঃ সহভ্রাতৃভিরর্চিতৈঃ।।

Seven idols, apparently panchaloha, and other pooja accessories were unearthed in Kandiyanallur village, Vandavasi taluk


যে প্রতিকৃতি ক্রীড়া প্রভৃতি প্রয়োজনে ব্যবহৃত হতো , তা পাঞ্চালিকা বা পুত্রিকা নামে সুপরিচিত ছিল। পুত্রিকা বা পুত্তলি থেকে পুতুল শব্দের উৎপত্তি। এর অর্থ হল , শিশু বা বালক বালিকাদের খেলনা / ক্রীড়নক; ভিন্নভাবে বলা চলে যে মনুষ্য ও প্রাণীর ক্ষুদ্রাকার প্রতিমূর্তি প্রধানত মৃত্তিকা , কাষ্ঠ, কাঁচ ইত্যাদি উপাদানে নির্মিত দেবদেবী, নরনারী ,প্রাণী প্রভৃতির প্রতিমূর্তি। 
পুতুল, প্রকৃতার্থে শিশুদের খেলনার বা খেলার উপাদান স্বরূপ। ফলে,  আকার অবয়ব পাঁচ -সাত- দশ -বারো  সেমি থেকে বড়ো জোর একশো পঁচিশ – ত্রিশ সেমি উচ্চতা হয় । 


অমর সিংহ এই পুত্রিকা বা পুত্তলিকা বস্ত্র – দন্তাদি উপাদানে নির্মিত হত বলে উল্লেখ করেছেন। 


পাঞ্চালিকা পুত্রিকা স্যাদ্বস্ত্রদন্তাদিভিঃ কৃতা।
এই স্থলে ভানুদীক্ষিত – সম্মত পাঠ পাঞ্চালিকা , তিনি ব্যুৎপত্তি দেখিয়েছেন , ” যাহা পাঁচ প্রকার বর্ণের দ্বারা ভূষিত হয়। ” 
পঞ্চভিবর্ণৈরল্যতে  ঘঞ্ ।
তিনি পক্ষান্তরে পাঞ্চলিকা পাঠ গ্রহণ করে তার নিরুক্তি দেখিয়েছেন – ” পঞ্চাল ভব এই অর্থে পাঞ্চালিকা হতে পারে। ” 
পাঞ্চালিকা স্ত্রিয়াং বস্ত্র – পুত্রিকা – গীতি -ভেদয়োঃ। 

মেদিনীকোষে কেবল বস্ত্রনির্মিত পুত্তলিকাকেই পাঞ্চালিকা বলা হয়েছে।  মেদিনীর এই উক্তিতে বোধহয় , তাঁর সময়ে পুতুল নির্মাণে কেবলমাত্র বস্ত্রই উপাদান রূপে গৃহিত হতো। আচার্য হেমচন্দ্র পাঞ্চালিকার পর্যায়ে শালভঞ্জিকা শব্দের পাঠ করিয়েছেন। 

This is one of the most soothing #murti of #Vishnu from Hoyasala period. Here Vishnu is depicted as sturdy yet calm…


শালভঞ্জী পাঞ্চালিকা চ পুত্রিকা।
জটাধরের  মতে কেবল কাষ্ঠনির্মিত পুত্তলিকা শালভঞ্জিকা নামে অভিহিতহয়েছে। শালভঞ্জিকার উপাদান যাই হোক না কেন, এর বর্ণনায় সংস্কৃত সাহিত্য পরিপূর্ণ এবং এর বর্ণনে সেকালের শিল্প – নৈপূণ্যের পরিচয় পাওয়া যায় ।
বিদর্ভ নগরের বর্ণনায় শ্রীহর্ষ লিখেছেন  , ” যে নগরে নানারূপ শালভঞ্জিকার মুখচন্দ্রস্থিত কলঙ্করূপ মৃগগুলির যেন অনেক প্রাসাদের উপরিস্থিত সিংহ কর্তৃক ভক্ষিত হয়েছে। ” এই উক্তিতে উপলব্ধি করা যায় , পুতুলের মুখগুলি কলঙ্ক রহিত চন্দ্রের ন্যায় প্রতিভাত হতো। 
বহুরূপক – শালভঞ্জিকা মুখচন্দ্রেষু কলঙ্করঙ্কবঃ।

যদনেকক – সৌধকন্ধরা – হরিভিঃ কুক্ষিগতী- কৃতা ইব।।

probably Harihar(or Nilakantha of Nilakantha-Dharini) holding Akshamala, lotus and Kamandalu

ক্রমশঃ

©দুর্গেশনন্দিনী
(প্রবন্ধটি ঋতম বাংলায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত)
তথ্যঃ প্রাচীন শিল্প পরিচয় : গিরীশচন্দ্র বেদান্ততীর্থ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.