“চারাগাছকে প্রথমে বেড়া দিয়ে রক্ষা করতে হয়, না-হলে ছাগল-গোরু এসে তাকে নষ্ট করে ফেলে। গাছ একবার বড়ো হলে আর সে ভয় থাকে না, তখন শত-শত গোরু-ছাগল এসে তার তলায় আশ্রয় নেয় ও তার পাতায় পেট ভরায়। সাধনার প্রথম অবস্থায় আপনাকে কুসঙ্গ, বিষয়বুদ্ধি ও সংসার ইত্যাদি থেকে রক্ষা করতে হবে, না-করলে সমুদয় ধর্মভাব নষ্ট করে ফেলবে। কিন্তু একবার সিদ্ধ হলে আর কোনো ভয় নেই। হাজার-হাজার সংসার ও কুসঙ্গ তখন তোমায় নষ্ট করতে পারবে না, বরং অনেকে তোমার কাছে এসে শান্তি পাবে।” — শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত
সাধক রামপ্রসাদ বেড়া বাঁধছেন, আর মা-কালী তার সঙ্গী হয়েছেন। রামপ্রসাদী গানে রয়েছে —
“মন রে কৃষিকাজ জান না |
এমন মানব জনম রইল পতিত, আবাদ করলে ফলত সোনা ||
কালী নামে দেওরে বেড়া, ফসলে তছরুপ হবে না |
সে যে মুক্তকেশীর (মন রে আমার) শক্ত বেড়া তার কাছেতে যম ঘেঁষে না ||”
ভারতবর্ষও বৃহত্তর অর্থে একটি বাগান, মালঞ্চ, কুসুমোদ্যান। প্রকৃত ভারতীয়রা তার কুসুম-কোমল জীবন-বৃক্ষ। ভারতবর্ষের সকল মানুষকে বাঁচাতে তাই রাষ্ট্রীয় বেড়া দিতে হবে। যখন ভারতবর্ষ নিরাপত্তার বেড়ার মধ্যে থেকে, বৈদেশিক আক্রমণ থেকে বেঁচে, দেশের মানুষের সার্বিক বিকাশ ঘটবে, তখনই এদেশ এবং ভারতবাসী বিশ্বের সকল শোষিত ও নিঃস্ব মানুষকে মুক্তির পথ দেখাতে সক্ষম হবে। বিশ্বের কল্যাণের জন্যই ভারতবর্ষের বাগান রক্ষা করতে হবে। বিশ্বের মঙ্গলের জন্যই রাষ্ট্রীয় বেড়া দিতে হবে। কারণ ভারতীয় দর্শন সারা বিশ্বের মানুষকে ‘অমৃতের পুত্র’ বলে সম্বোধন করে, কাউকে ‘পাপী’ বা ‘কাফের’ বলে শাস্তি দেয় না। আগে দেশ ও মানুষ বাঁচুক, তবে বিশ্ব বাঁচাবে! আগে ভারতবর্ষ আপন সৌকর্যে পথ চলুক, তবে সে হাঁটা-পথে বিশ্ববাসী চলবে।