রাজ্যের কৃষি ব্যবস্থা কে খাদের অতল গহ্বরে তলিয়ে দিচ্ছে অনুপ্রাণিত রাজ্য সরকার।

বাম আমলে এ রাজ্যে বিকৃত সাম্য প্রতিষ্ঠার তাগিদ থেকে কৃষিজমি গুলিকে টুকরো টুকরো করে প্রচুর মালিক সৃষ্টি করার মাধ্যমে সার্বিকভাবে উৎপাদন দক্ষতা, প্রতিযোগিতা এবং উৎপাদনশীলতা সুচারুভাবে হ্রাস করার স্বাভাবিক ফলস্রুতিতেই অত্যন্ত সামান্য সম্বল নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে কৃষক ভাইদের কাজ চালাতে হয়। তাছাড়া করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে শিল্প-কলকারখানা, ব্যবসা-বানিজ্যের মত জীবিকার্জনের অন্যান্য পথ অবরুদ্ধ হওয়ার কারনে কৃষিকার্যে জনসংখ্যার অতিরিক্ত ভিড় স্বাভাবিকভাবেই কৃষিকে অলাভজনক করে তুলছে। কৃষকদের ক্রয় ক্ষমতা ক্রমশ তলানিতে এসে ঠেকেছে। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি এরাজ্যের কৃষকদের এই নিদারুণ ক্ষতে প্রলেপ লাগাতে পারতো কিন্তু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর তুঘলকি আচরণ, দম্ভ ও অপরিনামদর্শী রাজনীতি এই ক্ষত মেরামতের সমস্ত সুযোগ নষ্ট করে রাজ্যের অন্নদাতা কৃষক সমাজের ভবিষ্যৎ কে অন্ধকারের অতল গহ্বরে তলিয়ে দিচ্ছে। নতুন প্রণীত কৃষি আইনের বিরোধিতার নামে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার অত্যন্ত সুকৌশলে বিগত দশ বছর ধরে কৃষি ক্ষেত্রে হয়ে চলা পাহাড় প্রমাণ দূর্নীতি থেকে সমাজের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে চাইছে। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে এবং অপরিসীম তোলাবাজি, স্বজনপোষণ ও কাটমানি সংস্কৃতির আরাধনা করে কৃষি দপ্তর কে আক্ষরিক অর্থেই দূর্নীতির বাস্তুঘুঘু তে পরিনত করা হয়েছে।

বর্তমানে রাজ্যের সেচ সেবিত এলাকা, চাষযোগ্য এলাকার প্রায় ৭৫% কাগজে-কলমে দেখানো হয়। বাস্তবে এই সেচব্যবস্থা চাষযোগ্য জমির ৫০ শতাংশেরও কম। খুব কম করে হলেও গোটা রাজ্যে খারিফ মরশুমের তুলনায় শীতকালীন মরশুমে অন্তত এক তৃতীয়াংশ এলাকায় চাষ কম হয়। নতুন সেচ ব্যবস্থার কোনো রকম পরিকল্পনা বা সদিচ্ছাই তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের নেই। কেন্দ্রীয় প্রকল্পে নির্মিত deep tube-well গুলির বেশিরভাগই খারাপ হয়ে রয়েছে এবং একইসাথে রিভার লিফট ইরিগেশন গুলির প্রায় সবকটি শাসকদলের তল্পিবাহকদের মাথায় রেখে গঠিত হওয়া বেনিফিসিয়ারি কমিটি কে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখানেও কোনরকম রক্ষণাবেক্ষণ নেই। কেন্দ্রীয় প্রকল্পে তৈরি বড় বড় সেচ ব্যবস্থা গুলি কে ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করে দিয়ে কৃষকদের ছোট পাম্প-সেট কিনতে বাধ্য করার মাধ্যমে ব্যবসায়িক দুর্নীতি শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছেছে।

ওয়েস্টবেঙ্গল এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে এবং বাকি সমস্ত কৃষি উপকরণ যেমন বীজ, সার, অনুখাদ্য, কীটনাশক ইত্যাদি সরবরাহ করে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট সিড কর্পোরেশন। বিপুল অর্থের বিনিময়ে উপরওয়ালা কে তুষ্ট করে WBSSC এ নাম এনলিস্ট করতে হয়। এরপর আসে টেন্ডারে অংশ গ্রহণের পালা। সেখানেও আবার প্রচুর পরিমাণ কাটমানি। কেউ একজন সিলেক্টেড হ’লে তার থেকে উপকরণটি নিয়ে ব্লকে ব্লকে পৌঁছে দেওয়ার কথা WBSSC’র কিন্তু অত্যন্ত দেরি হয় বলে কোম্পানি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজের দায়িত্বে উপকরণ ব্লকে ব্লকে পৌঁছে দেয়। অথচ অদ্ভুতভাবে দেখা যায় WBSSC যখন বিল জমা দেয় তখন লোডিং আনলোডিং বাবদ মূল দামের উপর আরো কুড়ি শতাংশ দাবি করে বসে। ফলে খোলাবাজারে কৃষি যন্ত্রপাতি বা অন্যান্য কৃষি উপকরণ যে মূল্যে পাওয়া যায় তার থেকে এই দুটি সংস্থা হ’তে প্রাপ্ত যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য কৃষি উপকরণের দাম অনেক বেশি। দীর্ঘদিন ধরে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট সিড কর্পোরেশনের ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজারের পদ গুলিতে আলাদাভাবে নিয়োগ না করে অদ্ভুতভাবে কৃষি দপ্তর থেকে বেছে বেছে চূড়ান্ত দুর্নীতিগ্রস্ত আধিকারিকদের বহাল করা হচ্ছে তোলাবাজি সিস্টেমের স্বার্থে।

রাজ্যের কৃষকদের বাৎসরিক গড় আয় ভারতবর্ষের কৃষকদের গড় বার্ষিক আয়ের প্রায় আড়াই থেকে তিন গুন বেশি দেখানো হয় যা অত্যন্ত হাস্যকর। বিকৃত মানসিকতা নিয়ে মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ফসলের এলাকা এবং ফসলের ফলন, এই দুটি বিষয় অত্যন্ত বেশি করে দেখানো হয়। এই নির্লজ্জ মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে পাওয়া কৃষিকর্মণ পুরস্কারের জন্য পরোক্ষভাবে আমাদের রাজ্যের কৃষক ভাইয়েরা বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

অনেকগুলি কেন্দ্রীয় প্রকল্প যেমন এন এফ এস এম, বি জি আর ই আই, আর কে ভি ওয়াই, এস এম এ এম প্রভৃতি থেকে কৃষি যন্ত্রপাতির অংশটি অর্থসহ আলাদা করে নিয়ে একসাথে করে নিজেদের নামে রাজ্য সরকার সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে এফ এস এস এম (ফিনান্সসিয়াল সাপোর্ট স্কীমস্ ফর ফার্ম মেকানাইজেশন) নামে একটি নতুন প্রকল্প চালু করে। এই প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী কৃষক অনলাইনে কৃষি যন্ত্রপাতির জন্য আবেদন করেন এবং পুরো অর্থ দিয়ে আবেদনপত্র অনুযায়ী যন্ত্রটি ডিলারের থেকে কিনতে হয়। এরপর যন্ত্রটির geo-tagging সম্পন্ন হওয়ার পর কৃষকের ব্যাংক একাউন্টে সাবসিডির টাকা পাঠানো হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় সাবসিডির অর্থ কৃষকের ব্যাংক একাউন্টে ঢোকার পর খরিদকৃত কৃষি যন্ত্র টি পুনরায় ডিলারের কাছে ফেরত চলে যায় এবং সাবসিডি’র টাকা কৃষক, ডিলার এবং তৃণমূলের জনপ্রতিনিধির মধ্যে ভাগবাটোয়ারা হয়ে যায়। দূর্নীতিবাজ তৃণমূল সরকারের প্রত্যক্ষ যোগসাজশে দিনের পর দিন এইভাবে সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকা নয়ছয় হয়ে চলেছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের এন এফ এস এম প্রকল্প এবং বি জি আর ই আই নামক প্রকল্প দুটিতে কৃষকদের জন্য বহুবিধ সুবিধা প্রদান করা হয়। বিশেষত এই প্রকল্প দুটির মাধ্যমে ৫০ হেক্টর বা ১০০ হেক্টর এলাকা নিয়ে কয়েকটি করে ধান, গম, ডাল বা তৈলবীজের প্রদর্শনী ক্ষেত্র প্রতিটি ব্লকে বরাদ্দ করা হয়। এই প্রদর্শনী ক্ষেত্রের জন্য বীজ, সার, অনুখাদ্য, রোগ পোকার ঔষধ সব কিছুই বিনামুল্যে সরকার থেকে দেওয়া হয়। আমাদের রাজ্যে ভূমি সংস্কারের কারণে ক্ষুদ্র প্রান্তিক কৃষকের সংখ্যা বেশি হওয়ার দরুণ এক জায়গায় ৫০ বা ১০০ হেক্টর জমি পাওয়া অসুবিধাজনক। সে কারণে পূর্বে স্থানীয় পঞ্চায়েতের সঙ্গে কথা বলে সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতে এই সমস্ত সুবিধা ভাগ করে দেওয়া হ’ত। আগে কৃষকেরা অফিসে এসে সই করে উপকরণ গুলি নিয়ে যেতেন। কিন্তু বর্তমানে তিন চার জন স্থানীয় তৃণমূলের নেতা এসে পুরো গ্রাম পঞ্চায়েতের উপকরণ নিয়ে যান। পরবর্তীকালে ফিল্ড ভিজিটে গিয়ে মাঠে কোন কিছুরই হদিস মেলে না। অর্থাৎ সব উপকরণ গুলি খোলা বাজারে বিক্রি হয়ে যায়।

পশ্চিমবঙ্গের প্রায় তিন লক্ষ আবেদনকারী কৃষক যারা বুলবুলের তান্ডবে প্রকৃত অর্থেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, তারা আজও বুলবুলের ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। অথচ একই ব্যক্তি শাসকদলের অনুপ্রেরণায় একাধিকবার আবেদন করে এই টাকা পেয়েছেন এবং বাস্তবে দেখা গেছে প্রচুর মানুষ যারা কৃষিকাজের সাথে আদৌ যুক্ত নন তারাও বুলবুলে আবেদন করে ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন।

সয়েল হেলথ ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পটির দিকে তাকালেও সেই একই চিত্র। এই প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হ’ল মাটিতে গাছের প্রয়োজনীয় উপাদান গুলি কি কি পরিমাণে আছে তা নির্ণয় করা এবং তার ভিত্তিতে রাসায়নিক সারের পরিমাণ নির্ধারণ করা। প্রতিটি জেলার পরীক্ষাগারে মাটির নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানোর পরে মাটির রাসায়নিক পরীক্ষা করা হয় কিন্তু অদ্ভুতভাবে সেই রিপোর্ট চাষীদেরকে সরাসরি দেওয়ার অধিকার পরীক্ষাগারের হাতে নেই। এই রিপোর্ট কোলকাতায় প্রেরিত হয়। ইন-গ্রীনস্ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা সেই রিপোর্ট টি কালার প্রিন্টারে প্রিন্ট করে পুনরায় জেলায় পাঠিয়ে দেয়। সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয়টি হ’ল মাটির নমুনা সংগ্রহ করা থেকে রাসায়নিক বিভিন্ন পরীক্ষা করা পর্যন্ত প্রতিটি নমুনা পিছু সরকারি বরাদ্দ মাত্র চল্লিশ টাকা অথচ রিপোর্ট কালার প্রিন্টারে প্রিন্ট করে জেলায় পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য ইন-গ্রীনস্ সংস্থা নমুনা পিছু পায় পঞ্চাশ টাকা করে। প্রতিটি জেলা থেকে মাত্র ১ লক্ষ করে নমুনা পরীক্ষা করা হ’লে এই বেসরকারি সংস্থা টি কত পরিমাণ অর্থ পেতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যেতে পারে।

সিঙ্গেল উইন্ডো সিস্টেম তৈরির মাধ্যমে এগ্রিকালচার এক্সটেনশন সার্ভিস প্রতিটি কৃষকের কাছে যথার্থভাবে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি নামক কেন্দ্রীয় প্রকল্প থেকে টাকা রাজ্যের কাছে আসে এবং রাজ্য থেকে সেই অর্থ জেলায় জেলায় বরাদ্দ করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় ব্লক টেকনোলজি ম্যানেজার, এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি ম্যানেজার এবং কৃষক বন্ধু পদে নিয়োগের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল বিটিএম, এটিএম পদে যাদের নিয়োগ করা হয়েছে তাদের প্রতি মাসে সঠিক সময়ে মাস মাইনে দেওয়া হয় না; উপরন্তু তারা পুজোর বোনাস পান না। কৃষক বন্ধু পদে যাদের নেওয়া হয়েছিল জেলায় জেলায় বা গ্রামে গ্রামে, তাদের নিয়োগপত্র কোন অজানা কারণে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। মেলা-খেলা-মোচ্ছবের এই তৃণমূলি সরকার কেন কৃষক বন্ধু দের নিয়োগ বাতিল করল; আজও তার সদুত্তর পাওয়া গেল না।

দেশের অন্যান্য রাজ্যের আদলে একই কায়দায় আমাদের রাজ্যের কৃষকদের ফসল বিক্রির সুবিধার জন্য প্রায় ১৭৭ টি কিষাণ মান্ডি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি নীল সাদা রঙের মান্ডি পিছু খরচ প্রায় ৫ কোটি টাকা। মূলতঃ কেন্দ্রীয় সরকারের আর কে ভি ওয়াই প্রকল্পের অ্যাসেট বিল্ডিংয়ের টাকা আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যেই এই পরিকল্পনা রাজ্যে বাস্তবায়িত করা হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের ২০১১ সালের নির্বাচনী ইস্তেহারে সরকারি কৃষি খামার গুলির উন্নতিসাধন ও স্বয়ংসম্পূর্ণ করার কথা বলা হয়েছিল। অথচ বাস্তবে আমরা দেখলাম রাজ্যের কৃষি খামার গুলির উর্বর কৃষি জমি নষ্ট করে এবং সমস্ত রকম নিয়োগ বন্ধ রেখে সেখানে নীল সাদা রংয়ের কিষাণ মান্ডি তৈরি করা হ’ল। বেশিরভাগ কিষাণ মান্ডি গুলি মূল বাজার থেকে অনেক দূরে অবস্থিত, সেখানে যাতায়াতের রাস্তাও ভীষণ খারাপ, পরিকাঠামো অত্যন্ত শোচনীয়। ফলতঃ কৃষকেরা এখানে যেতে চান না। রাজ্যের প্রায় প্রতিটি কিষাণ মান্ডিতে বর্তমানে কিছু সরকারি অফিস ভাড়া দেওয়া হয়েছে। কৃষি-খামার গুলির উর্বর কৃষিজমি শুধুমাত্র কিষাণ মান্ডি করেই নষ্ট করা হয়নি সেখানে বিভিন্ন জায়গায় আইটিআই কলেজ, কর্মতীর্থ প্রভৃতি নাম দিয়ে কিছু বিল্ডিং সম্পূর্ণ পরিকল্পনাহীন ভাবে যত্রতত্র নির্মাণ করে কৃষি খামার গুলির সর্বনাশ করা হয়েছে। কৃষি খামারের এই উর্বর কৃষিজমি গুলি সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্ত ছাড়াই খাম-খেয়ালি ভাবে অন্যান্য দপ্তরকেও হস্তান্তর করা হয়েছে।

পার্টির তোলাবাজ লবির প্রত্যক্ষ মদতে রাজ্যের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দুটিতে দলীয় অন্তর্কলহ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বিশ্ববিদ্যালয় দুটিতে পঠন-পাঠন, গবেষণা প্রায় সম্পূর্ণভাবে স্তব্ধ। সেখানে উন্নয়নের নামে কাটমানি শিল্পের রমরমা চলছে। প্রতিবাদী আধিকারিক এবং শিক্ষকদের অনৈতিকভাবে প্রমোশন বন্ধ রেখে দেওয়া, চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দেওয়া এবং কোনরকম কারণ ছাড়াই দূরে দূরে বদলি করা রোজকার রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা-খামার গুলির জমিও বলপূর্বক বিক্রি করে দেওয়ার বন্দোবস্ত চলছে। এখানেই না থেমে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু জমি কাটমানিখোর স্থানীয় নেতাদের মদতে জবরদখল করে সেখানে জমির পাট্টা বিলি পর্যন্ত করা হয়েছে। গড়ে উঠছে হঠাৎ কলোনি।

কৃষি মেলা ও মাটি উৎসব, তৃণমূল সরকারের মস্তিষ্কপ্রসূত নির্লজ্জতার আরো একটি প্রকৃষ্ট নিদর্শন। রাজ্যে যেখানে কর্মসংস্থান প্রায় তলানিতে, সারাদেশে যখন আমাদের রাজ্য পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যায় প্রথম স্থান অধিকার করে বসে আছে (সংখ্যায় প্রায় ৪২ লক্ষ), সেখানে কর্মসংস্থানের বদলে প্রতিবছর কৃষি মেলা ও মাটি উৎসবের নামে কোটি কোটি টাকার নয়ছয় চলছে। এই মেলা এবং উৎসবে সন্ধ্যার সময় নাচ-গান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে সাধারণ মানুষের যে জমায়েত হয়, আধিকারিকরা বাধ্য হয় সেই সংখ্যাকে কৃষকের সংখ্যা বলে দপ্তরে রিপোর্ট দিতে! নির্লজ্জতার সমস্ত সীমা-পরিসীমা অতিক্রম করেছে এই সরকার।

প্রকৃতপক্ষে সম্পূর্ণরূপে রাজনৈতিক আদর্শ রহিত এবং শুধুমাত্র মিথ্যা, ছলচাতুরী ও কাটমানি সংস্কৃতি কে আধার করে পথ চলা একটি আঞ্চলিক দলের থেকে এর থেকে ভালো কিছু আশা করাটা আত্মপ্রবঞ্চনার-ই সামিল। অনতিবিলম্বে এই নোংরা সংস্কৃতির সমূলে বিনাশ ঘটুক; ভয় মুক্ত গণতান্ত্রিক প্রতিরোধের মাধ্যমে ভেসে যাক সব কলুষতা। বাংলার কৃষি সহ প্রতিটি ক্ষেত্র এবং সমাজ-মননে নতুন প্রাণ সঞ্চার হউক।

ডঃ তরুণ মজুমদার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.