পাঞ্জাব সরকারের আধিকারিকদের মতে, উত্তরপ্রদেশ এবং বিহার থেকে প্রচুর ধান অবৈধভাবে রাজ্যে আনা হয়েছে এবং তা এখানকার মান্ডীগুলোতে বেশী দামে বিক্রি করা হবে।
গত কয়েক বছর ধরে, পাঞ্জাবের ম্যান্ডিগুলি রাষ্ট্রের উৎপাদনের তুলনায় ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে (এমএসপি) বেশী ধান (বাসমতি ছাড়া) কিনছে। কারণ উত্তরপ্রদেশ এবং বিহার থেকে প্রচুর ধান অবৈধভাবে পাঞ্জাবে আনা হয়, বেশী দামে বিক্রি করার জন্য যা এখানকার মান্ডিগুলিতে পাওয়া যায়।
এই প্রথাটির বিরুদ্ধে বর্তমান ক্রয় সহ সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সরকারের এই পদক্ষেপটি সাধারণত কয়েকটি ট্রাক বাজেয়াপ্ত করাসহ কয়েক হাজার টন ধান নিয়ে যাওয়া এবং কিছু মামলা দায়ের করার পরে শেষ হয়েছে।
অবৈধ বাণিজ্য অবশ্য কয়েক হাজার টন ধানেরও বেশি। গত তিন বছরে পাঞ্জাবের মোট উত্পাদন ও মোট ক্রয়ের বিষয়টি যদি বিবেচনায় নেওয়া হয় তবে অবৈধভাবে বিক্রি হওয়া ধানের সংখ্যা কয়েক মিলিয়ন টন। কীভাবে? সেটাই আজ ব্যাখ্যা করা হবে।
এই বছরগুলিতে সরকার কত ধান কিনেছিল?
কৃষকদের দ্বারা মান্ডিতে আনা প্রায় সমস্ত ফসল সরকার কিনে নেয়। ভারতের খাদ্য কর্পোরেশন (এফসিআই) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পাঞ্জাবের সরকারি সংস্থাগুলি ২০১৯-২০, ২০১৮-১৯ এবং ২০১৭-১৮ সালে যথাক্রমে ১৬৩.৮২ লক্ষ টন (এলটি), ১৭০.৪৬ এল টি এবং ১৭৯..৫৬ এল টি ধান কিনেছে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জন্য।
এই তিন বছরে পাঞ্জাবের ধানের আবাদ কত ছিল?
পাঞ্জাব কৃষি বিভাগের রেকর্ড থেকে জানা যায় যে, ২০১৯-২০২০ সালে ধানের আবাদ ছিল ২২.৯১ লক্ষ হেক্টর জমিতে, ২০১৮-১৯ সালে ছিল ২৫.৯৪ লক্ষ হেক্টর এবং ২০১৭-১৮ সালে ২৫.১৯ লক্ষ হেক্টর ছিল।
রাজ্যের গড় ধানের ফলন কত ছিল?
রাজ্য কৃষি বিভাগ সূত্রে পাঞ্জাবের ধানের মোট গড় ফলন রেকর্ড করা হয়েছিল। ২০১৯-২০ সালে হেক্টর প্রতি ৬,৬৩৫কেজি (৬.৬ টন), ২০১৮-১৯ সালে ৬,৫৩২ কেজি (৬.৫ টন) এবং ২০১৭-১৮ সালে ৬,৫১৬ কেজি (৬.৫টন)।
এই সময়ের মধ্যে পাঞ্জাবের মোট ধানের উৎপাদন কত হওয়া উচিত?
রাজ্য কৃষি বিভাগের হিসেব অনুযায়ী পুরো পাঞ্জাবের ফসলের ফলন হওয়া উচিৎ এইরকম :
২০১৯-২০ সালে মোট উৎপাদন হবে ১৫২ লক্ষ টন (১৫.২ মিলিয়ন টন), ২০১৮-১৯ সালে ১৬৯.৪৪ এলটি (১৬.৯ মিলিয়ন টন) এবং ২০১৭-১৮ সালে ১৬৪.১৪এলটি (১৬.৪মিলিয়ন টন) । এইভাবে, তিন বছরেই সরকারী সংস্থাগুলি গড় ফলন অনুযায়ী পাঞ্জাবের মোট উৎপাদনের চেয়ে বেশি ধান কিনেছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে আমরা যদি প্রকৃত গড় ফলনের তুলনায় ১% বা ২% বেশি গ্রহণ করি (যদিও সরকারের অনুমানগুলি প্রকৃতের তুলনায় আরও বেশী বা প্রায় সমান) তবুও মান্ডি গুলিতে ধান আসার পরিমাণ এখনও অনেক বেশি রয়েছে।
উপরন্তু, কৃষকরা তাদের পুরো ফসল মান্ডিতে আনে না—তারা কিছুটা নিজেদের-ব্যবহারের জন্য এবং বীজের জন্য রাখে।
ভারতের খাদ্য কর্পোরেশন (এফসিআই) এর একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে: “তারা যদি নিজেদের ব্যবহারের জন্য ফসলের ২-৩ মিলিয়ন টন রেখে দেয়, তবুও বিহার এবং ইউপি থেকে পাঞ্জাবে অতিরিক্ত কতটা ধানের পাঠানো হচ্ছে তা কেউ কল্পনাও করতে পারেবে না ”
মোট উৎপাদন এবং মোট ক্রয়ের মধ্যে পার্থক্য
২০১৯-২০২০ সালে, রাজ্যে উৎপাদনের তুলনায় পাঞ্জাবের মান্ডিতে ১১.৮২ লক্ষ টন (১.২ মিলিয়ন টন) ধান বিক্রি হয়েছিল। ২০১৮-১৯ সালে এই সংখ্যাটি প্রায় ১.০২ লক্ষ টন এবং ২০১৭-১৮ সালে এটি ছিল প্রায় ১৫.৪২ লক্ষ টন (১.৫মিলিয়ন টন)।
“যদি পাঞ্জাবের কৃষকরা সেখানের উৎপাদিত ধান নিজের কাজে খরচ করে তবুও অন্যান্য রাজ্য থেকে প্রতি বছর আমদানি করা ধানের পরিমাণ ৪-৫ মিলিয়ন টন (৪০ থেকে ৫০ লাখ টন) এর চেয়ে কম নয়”— বলেছেন রাজ্যের কৃষি বিভাগের একজন প্রবীণ অফিসার?
এই লভ্যাংশ কে ভোগ করছে?
ইউপি এবং বিহার থেকে সরকার খুবই কম পরিমাণে ধান সংগ্রহ করে এবং তা এমএসপির নীচে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি হয়।
কর্মকর্তাদের মতে, বেশ কয়েকটি চাল মিলের শ্রমিক এবং বিপুল সংখ্যক চাল রপ্তানিকারী, কিছু ক্রয় সংস্থার আধিকারিকের সাথে যুক্ত হয়ে পাঞ্জাবের রকেটে জড়িত আছে।
তারা ইউপি এবং বিহার থেকে উচ্চ গুনমানের ধান প্রতি কুইন্টাল ৯০০ টাকা থেকে ১,২০০ টাকা দরে বিক্রি করে। মিলিং এবং পরিবহন চার্জ যুক্ত করে এর দাম গিয়ে দাঁড়ায় কুইন্টাল প্রতি ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। পাঞ্জাবে তারা রাজ্যের কৃষকদের নামে অবৈধভাবে এমএসপি-র আরও বেশি দামে প্রতি কুইন্টাল১,৮৮৮টাকা দরে বিক্রি করে।
একজন কর্মকর্তা বলেছেন, দিল্লিতে বসে ব্যবসায়ীরা ইউপি এবং বিহারের বাজারগুলি নিয়ন্ত্রণ করছে এবং পাঞ্জাবের মিলারদের সহায়তা করছে এবং পাঞ্জাবে এই জাতীয় মিলাররা সরকারের কাছ থেকে ধান বিক্রি করে প্রতি কুইন্টাল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা উপার্জন করছে।