১* .
*কিষান সঙ্ঘে জৈবচাষের প্রচেষ্টা*
_অনিল চন্দ্র রায়_
সংগঠনের বিস্তার যখন হচ্ছে, বাংলার বহু কৃষককে সংগঠনের কথা বলতে গেলে, তারা জিজ্ঞেস করতেন, আমরা সংগঠন করে কী পাবো? সংগঠন আমাদের কী দেবে? তখন সংগঠন ঠিক করলো, আমরা কার্যকর্তা ও সদস্যকে কৃষির নানান বিষয়ে প্রশিক্ষিত করতে পারি, যাতে তারা জীবন জীবিকায় নতুন পথ দেখতে সক্ষম হন এবং স্বনির্ভর-কৃষিকাজে আয় বৃদ্ধি করতে পারেন।
সেই সময় জলপাইগুড়ি জেলার কার্যকর্তা তথা প্রান্ত সমিতির সহ-সভাপতি শ্রী নগেন্দ্র নাথ বর্মন প্রত্যক্ষ ভাবে জৈবচাষ করতেন। ঐ সময় অর্থাৎ ২০০৩ সালে দিনাজপুর বিভাগের প্রচারক শ্রী গোবিন্দ ঘোষের প্রেরণায় দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা থেকে প্রথম দুইজন কৃষককে জৈব প্রশিক্ষণ নিতে জলপাইগুড়ি পাঠানো হল। তারপর থেকেই শুরু হল জৈবকৃষিতে প্রশিক্ষণ দেবার বার্ষিক আয়োজন। এইভাবে বছরে দু’বার করে প্রশিক্ষণের কাজ চলতে লাগলো। বর্তমানে জেলা ভিত্তিক নিয়মিত প্রশিক্ষণের কাজ চলছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের নারায়ণপুরে স্থায়ী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে। সারা বাংলায় এই মুহূর্তে ভারতীয় কিষান সঙ্ঘের দেড় হাজারের বেশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কার্যকর্তা ও কৃষক রয়েছেন। উত্তরবঙ্গের জেলগুলির অধিকাংশ কার্যকর্তাই আজ জৈবচাষে প্রশিক্ষিত। তারা নিজের জমিতে চাষ করেন শুধু নয়, অন্যদেরও আস্থাভাজন, দৃষ্টান্তকারী।
একটি প্রচলিত প্রবাদ হল, “দেখাদেখির চাষ ও পাশাপাশির বাস।” কৃষক তার প্রতিবেশীর কাছ থেকে দেখে তা অনুকরণের মাধ্যমে তার সদর্থক দিকটি সবসময় প্রয়োগ করতে চান। এভাবে নতুন কৃষিদর্শন ছড়িয়ে যায়। সমস্ত কৃষকই আজ বুঝতে সক্ষম হয়েছেন যে, কৃষি-বিষ আসলে দীর্ঘমেয়াদে কৃষকবান্ধব নয়। তা কৃষকের স্বাস্থ্যহানি করে, পরিবেশে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে। জৈবচাষ করাটা যে একটি টেকসই পদ্ধতি, তা কৃষক আজ উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন। জৈবচাষের মাধ্যমেও আর্থিক লাভবান হওয়া যায়, তা বুঝতে পেরেছেন কৃষক সমাজ। তাতে গ্রামীণ স্বাস্থ্যের উন্নতিও সম্ভব।
ভারতীয় কিষান সঙ্ঘ পরিচালিত জৈবকৃষির প্রশিক্ষণ সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তেই প্রথম পরিচালিত হয়। আজ সারা ভারতবর্ষেই নির্ধারিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করেছে কিষান সঙ্ঘ। সব প্রান্তেই চেষ্টা চলছে, আগামী দিনেও হবে। সেজন্য ‘জৈবিক ক্ষেতি’ বিষয়ক নতুন আয়াম গঠিত হয়েছে, ‘জৈব প্রমুখ’ নামক নতুন দায়িত্বে এসেছেন অখিল ভারতীয় স্তর থেকে বিকাশ খণ্ড পর্যন্ত কার্যকর্তারা। গ্রাম সমিতি পর্যন্ত জৈবকৃষির ধারা পৌঁছে যাক, চাইছে ভারতীয় কিষান সঙ্ঘ। গো-আধারিত জৈবচাষ অনেক গ্রামে শুরু হয়েছে, আগামী দিনে তার ব্যাপকতা বাড়বে। ২০২০ সালের মার্চ মাসে জৈব প্রশিক্ষণ বর্গ অনুষ্ঠিত হয় হুগলি, বাঁকুড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। এতে প্রায় ১০০ জন কৃষক অংশগ্রহণ করেছেন। এই সমস্ত বর্গে প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন প্রান্ত জৈব-প্রমুখ এবং অখিল ভারতীয় কার্যকারিণী সদস্য শ্রী ভানু থাপা।
[ *লেখক পরিচিতি: শ্রী অনিল চন্দ্র রায় ভারতীয় কিষান সঙ্ঘের প্রান্ত সংগঠন সম্পাদক* ]
*২.*
*জৈবকৃষির প্রশিক্ষণ শিবির*
_ভানু থাপা_
ভারতীয় কিষান সঙ্ঘ, পশ্চিমবঙ্গ প্রান্তের লাগোয়া উত্তর বিহার প্রান্ত। সেখানে সঙ্ঘের জৈবকৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ শিবিরে প্রশিক্ষক রূপে আমন্ত্রিত হয়ে গিয়েছিলেন প্রান্তের জৈবিক প্রমুখ তথা অখিল ভারতীয় কার্যকারিণী সদস্য শ্রী ভানু থাপা। গত ১৪-১৬শে ফেব্রুয়ারী, ২০২০ তে বৈশালী জেলার জনদহ ব্লকে এবং ১৮-১৯শে ফেব্রুয়ারী গয়া জেলার কঞ্চ উৎরাইন ব্লকে অনুষ্ঠিত হয় শিবির দুটি। প্রায় ৪০ জন করে কৃষক শিবির দুটিতে জৈবকৃষি ও ভার্মি-কম্পোস্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন।
১২ ই জুন, ২০২০ তে কালিম্পং জেলার গাঁওধ্বজ রামতেই গ্রাম সমিতির আয়োজনে জৈবকৃষি, স্থানীয় জাতের বীজ ব্যবহার এবং স্থানীয় প্রাণীসম্পদ সংরক্ষণ বিষয়ে এক সচেতনতা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। ৪ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২০-তে কালিম্পং-এর পেমলিং বনবাসী কল্যাণ আশ্রমের আহ্বানে জৈবকৃষি বিষয়ে অপর একটি সভার আয়োজন ছিল। ভারতীয় কিষান সঙ্ঘের পক্ষে শ্রী ভানু থাপা সভায় বক্তব্য রাখেন।
গত ৬ ই অক্টোবর, ২০২০-তে আত্মনির্ভর অভিযানের অঙ্গ হিসাবে কালিম্পং জেলার হিমালি কম্পোস্ট ফার্মে প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করে জেলা কিষান সঙ্ঘ। এটি রামতেই দেবীধারা গাঁওয়ে অবস্থিত। সেখানে পরম্পরাগত পদ্ধতিতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈবিক সব্জি ও ফল ব্যবহার করে দেশী আচার, চাটনি তৈরি করা শেখান দার্জিলিং কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের হোম সায়েন্স বিজ্ঞানী শ্রীমতী আকৃতি প্রধান।
কালিম্পং জেলায় জৈবকৃষি সচেতনতা বিষয়ে বিগত দুই মাসে বেশ কয়েকটি সভা আয়োজিত হয়। সভাগুলি আয়োজন করেন কোনোটি প্রান্ত যুব-প্রমুখ শ্রী মহেশ দাহাল, কোনোটি কালিম্পং জেলা সচিব শ্রী পঙ্কজ সাপকোটা। সভাগুলি অনুষ্ঠিত হয় ৯ই অক্টোবর ভান্ডারীগাঁও, বংবস্তিতে; ১২ই অক্টোবর ইচ্ছেয় বস্তি, সাংডুং-এ; ৮ই নভেম্বর বাহুন গাঁওয়ে এবং দলাপচাঁদে; ৯ই নভেম্বর দেওরালী কবিগাঁও ও গোপীগাঁও-এ। সভায় বক্তব্য রাখেন অখিল ভারতীয় কার্যকারিণী সদস্য শ্রী ভানু থাপা। উপস্থিত কৃষকদের প্রয়োজনীয় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাও করানো হয়, দেওয়া হয় মাস্ক।
*[লেখক পরিচিত: ভানু থাপা, অখিল ভারতীয় কার্যকর্তা, ভারতীয় কিষান সঙ্ঘ।]*
_প্রস্তুত প্রবন্ধটি ‘ভারতীয় কিষান বার্তা’-র জৈবকৃষি বিশেষ সংখ্যার অন্তর্গত। ১ লা ডিসেম্বর, ২০২০। সম্পাদক ড. কল্যাণ চক্রবর্তী।_ ( _Bharatiya Kishan Barta, Organic Farming Special Issue, 1 December, 2020, Editor: Dr. Kalyan Chakraborti)_
(এখানে লিখেছেন শ্রী অনিল চন্দ্র রায় এবং শ্রী ভানু থাপা)