জৈব কৃষির প্রয়োজনীয়তা
স্বাধীনতা পরবর্তী সময় যতই এগিয়েছে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি কৃষি ও কৃষিজ- উৎপাদনে ভারতবর্ষ ভাল উন্নতি করেছে। এক বিপুলসংখ্যক মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেবার জন্য, শস্যের চাহিদা পূরণের জন্য এবং কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য রাসায়নিক সার, কীটনাশকসহ নানান কৃষি উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছিল। আমাদের দেশে ১৯৫২ সালে ৫২ মিলিয়ন টন খাদ্য শস্য উৎপাদন হয়। তার জন্য বরাদ্দ ছিল মাত্র ৭০ হাজার টন রাসায়নিক সার।
এদিকে উৎপাদিত ফসল মাটি থেকে তুলে নেয় অনেক প্রয়োজনীয় খাদ্যোপাদান। এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি যে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়। অনেক বেশি মাত্রায় এবং সঠিক নিয়ম না মেনে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়। বিগত কয়েক বছর ধরে দেখেছি কৃষি ক্ষেত্রে বিভিন্ন ফসল চাষের জন্য রাসায়নিক সারের ব্যবহার অনেক গুণ বেড়েছে। সেই সাথে জৈবসার ব্যবহার অনেক কমে গেছে। বর্তমানে শস্য নিবিড়তা অনেক বেড়ে গেছে, গোচারণ ক্ষেত্র অনেক কমেছে এবং শস্যাবশেষ, গোবর-গোমুত্র ইত্যাদির ব্যবহার কৃষি কাজে কমেছে। এর ফলে কৃষি-জমিতে জৈব পদার্থের (organic matter) পরিমাণ কমে যাচ্ছে, মাটির উর্বরা শক্তি (Soil fertility) কমে যাচ্ছে, মাটির স্বাস্থ্য (soil health) নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে কৃষক বন্ধুরা প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক সার ব্যবহার করছেন। কিন্তু ফলন খুব বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। বেশি রাসায়নিক সার, আগাছা নাশক, কীটনাশক প্রভৃতি ব্যবহার হচ্ছে কৃষিকার্যে। ফলে মাটির স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মাটি হারিয়ে ফেলছে তার স্বাভাবিক গঠন, গ্রথন, জল ধারণ ক্ষমতা ইত্যাদি। কোথাও মাটি হয়ে যাচ্ছে বেশি অ্যাসিডিক (অম্ল), আবার কোথাও মাটি হচ্ছে বেশি ক্ষারীয়। মাটিতে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন অণুখাদ্যের, যেমন- জিঙ্ক, বোরন ও মলিবডিনাম ইত্যাদি। মাটিতে উপকারী জীবাণুর সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। ধীরে ধীরে মাটি তার উর্বরা শক্তি হারিয়ে বন্ধ্যা হয়ে পড়ছে। উৎপন্ন ফসলে পাওয়া যাচ্ছে রাসায়নিক বিষ। পরিবেশ দুষণ অনেক মাত্রায় বেড়েছে। এই অবস্থায় কৃষি কাজে বিকল্প পদ্ধতি ও প্রযুক্তির দরকার, তার জন্যই জৈব কৃষি। সবার জন্য খাদের প্রয়োজন, সবার জন্য পুষ্টি ও দূষণ মুক্ত পরিবেশ দরকার। তাই খাদ্য যোগানের মূল ধারক ও মানব জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ আধার ‘মাটি’-কে রক্ষা ও উর্বরা করা দরকার।
_জৈব কৃষির সূচনা ও তার ক্রমবিকাশ_
কয়েক হাজার বছর আগে কৃষির সূচনা হয়েছিল। সেই কৃষির সূচনা কালে জৈবকৃষি কাজই শুরু হয়। প্রাচীন সভ্যতায় যে কৃষির সন্ধান পাওয়া যায় তা হল জৈব কৃষি। নিয়োলিথিক যুগে, আজ থেকে প্রায় ১০,০০০ বছর আগে মেসোপটেমিয়া ও হয়াং হো অববাহিকাতে যে কৃষিকার্যের সূচনা হয়েছিল তাও ছিল জৈব কৃষি। ‘ঋক্ বেদ’-এর যুগে আমরা জৈব কৃষির উল্লেখ পেয়েছি। সেখানে সবুজ সার, খামার জাত সার, জৈব সার প্রভৃতির উল্লেখ রয়েছে। ফসলের উজ্জ্বল স্বাস্থ্যের জন্য জমিতে গরু, ভেড়ার মল- মূত্র প্রয়োগ করা হত। বরাহ মিহিরের সংহিতাতেও বিভিন্ন ফসলে জৈবসারের সঠিক নির্বাচন এবং তার ব্যবহার বিধির কথা উল্লেখ রয়েছে। ৬০০ খ্রিস্ট-পূর্বাব্দে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে প্রাণীর মলমূত্র, বিভিন্ন ফসলের খোল সহ নানা জৈবসারের উল্লেখ পাওয়া যায়।
_জৈব কৃষি_
জৈব উপকরণের সমন্বয়ে যে কৃষি কাজ তাকে বলে জৈব কৃষি। জৈব কৃষিতে শিল্পজাত উপকরণ, রাসায়নিক উপকরণ এবং জিন পরিবর্তিত ফসল প্রভৃতি ব্যবহার করা হয় না। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রযুক্তি এবং সহজে পাওয়া উপকরণগুলি ব্যবহার করে বহমান উৎপাদন (Production system) ব্যবস্থা বজায় রাখা হয়। ফসল কেটে নেওয়ার পর অর্থনৈতিক অংশ বাদ দিয়ে বাকি জৈব বস্তুর পুনরায় ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষিকাজই হচ্ছে এর অন্যতম নীতি। জৈব বৈচিত্র্য, জৈব চক্র, কৃষি বাস্তুতন্ত্রের স্বাভাবিক গতি বজায় রাখা, জীবন্ত বস্তুর ক্রিয়া-বিক্রিয়া মাটির মধ্যে বজায় রাখা; ফসল সুরক্ষায় পরিচর্যাগত (management) পদ্ধতি অনুসরণ, যান্ত্রিক (mechanical) দমন বিধি, এবং জৈবিক পদ্ধতি (biological) ও প্রযুক্তির সুসংহত সমন্বয় ঘটানোর (integrated way) মধ্যেই এর রূপায়ণ। মিশ্র খামার পদ্ধতি (mixed farming) অর্থাৎ একই সঙ্গে কৃষিকাজ, প্রাণী পালন, মাছ চাষ, প্রভৃতির সমন্বয় ঘটানো এবং মাটির স্বাস্থ্য বজায় রাখা, প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখা ও সেই সাথে কৃষকের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটানোও এর লক্ষ্য। অর্থাৎ জৈব কৃষির গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল জৈব বস্তু গুলির কার্যকরী ব্যবহার ও পুনরাবর্তন করা।
_জৈব কৃষির বৈশিষ্ট্য_
১) কৃষি ক্ষেত্র ও চারপাশের ফসল ও শস্যের জৈব বৈচিত্র্য রক্ষা করা।
২) মাটির মধ্যে জৈব পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং উপকারী জীবাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি ও তাদের সক্রিয়তা বৃদ্ধি।
৩) রাসায়নিক সার, রাসায়নিক কীটনাশক/আগাছানাশক/রোগনাশক এবং জিন পরিবর্তিত বস্তু ব্যবহার না করা।
৪) মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি ও বজায় রাখা।
৫) ফসলের উৎপাদনশীলতা বজায় রাখা।
৬) অতি গুণমান যুক্ত খাদ্যশস্য ও ফসল উৎপাদন।
৭) স্থানীয় ও পুনরাবর্তনযোগ্য উপকরণের ওপর প্রাথমিক ভাবে নির্ভর করা।
৮) মাটি, বায়ু ও জলদূষণ কমানো এবং স্বাস্থ্যকর অবস্থা বজায় রাখা, মানুষ ও পশুপাখির স্বাস্থ্য ভাল রাখা।
৯) জৈব বৈচিত্র্য, জৈব চক্র ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা।
১০) সুসংহত পদ্ধতি অবলম্বন করে কৃষিকাজ করা।
_জৈবকৃষিতে করণীয় পদক্ষেপ_
১) রাসায়নিক সার, কীটনাশক, রোগ নাশক, আগাছা নাশক অর্থাৎ রাসায়নিক কৃষি বিষের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে ও ধীরে ধীরে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
২) ফসলের সুসংহত পরিচর্যার মাধ্যমে (integrated crop management) ফসলের গুণমান ও সুস্বাস্থ্য বজায় রেখে ফলন বৃদ্ধি করতে হবে।
৩) সুসংহত উপায়ে রোগ-পোকা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে, পরিচর্যাগত ও জৈবিক পদ্ধতি গুলি যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।
৪) রোগ পোকা-আগাছা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে রাসায়নিক কৃষি বিষ প্রয়োগ ছাড়াই।
৫) জৈব কৃষিতে সমস্ত উপকরণ হবে জৈবিক। অর্থাৎ খামারজাত সার, আবর্জনা সার, গৃহপালিত পশুর মল-মূত্র, ফসলের অবশিষ্টাংশ, কেঁচো সার (vermi compost), প্রভৃতি জৈবসার অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে গুণমান যুক্ত ফসল উৎপাদনের জন্য।
৬) উদ্ভিদ জাতীয়, জীবাণুজাত কীটনাশক শস্য রক্ষাতে ব্যবহার করতে হবে।
৭) শস্য- ফসল, প্রাণী সম্পদ, কৃষি ও বনের সুসংহত মেল বন্ধন ঘটিয়ে প্রকৃত জৈব কৃষি করতে হবে।
_জৈব কৃষির কিছু করনীয় বিষয়_
১) মাটিতে উদ্ভিদের খাদ্য ও অণু-খাদ্য বৃদ্ধি করে-মাটিকে উর্বর করতে হবে।
২) সৌর শক্তিকে কৃষি ও কৃষিজ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে হবে।
৩) বৃষ্টির জলকে সংরক্ষণ করে তা কৃষি কাজে ব্যবহার করতে হবে।
৪) মৃত্তিকা সংরক্ষণ করতেই হবে।
৫) করতে হবে বন্ধু পোকা-মাকড়ের সংরক্ষণ ও তার যথাযথ ব্যবহার।
৬) উপকারী জীবাণু ও পোকার ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে হবে।
৭) কৃষির বিভিন্ন উপকরণ তৈরিতে স্বনির্ভর হতে হবে।
৮) ঘরোয়া পদ্ধতিতে বিভিন্ন গাছ-গাছড়ার ব্যবহারের মাধ্যমে শস্য- ফসলের সুরক্ষা চেষ্টা করতে হবে।
৯) মাটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
১০) ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনার সুযোগ বাড়াতে হবে।
_গ্রামীণ অর্থনীতিতে জৈব কৃষির ভূমিকা_
১) জৈব কৃষির ফলে উৎপাদিত জৈব পণ্য মানব স্বাস্থের পক্ষে সম্পূর্ণ নিরাপদ। এছাড়া প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষেত্রেও তা উত্তম।
২) সবুজ সার, কেঁচো সার, খামার জাত সার প্রভৃতি জৈব সার ও জীবাণু সার (bio-fertilizer) ব্যবহার করে চাষ করলে- মাটিতে উপকারী জীবাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ও মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। মাটিতে ও ফসলে রাসায়নিক দূষণ ঘটে না।
৩) কৃষি কাজে রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে এর অপচয় অনেক বেশি হয়। মাটি ও ভূগর্ভস্থ জলের সাথে মিশে তা দূষণ ঘটায়।
৪) রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও আগাছা নাশক প্রভৃতি মিলে মাটিতে ও ফসলের বিভিন্ন ক্ষতিকারক যৌগ তৈরি করে।
৫) পড়ে থাকা পতিত জমি, বন-জঙ্গল বা চাষের যোগ্য পতিত জমিতে খুব সহজেই জৈব কৃষির কাজ করা যাবে।
৬) প্রথাগত চাষের জমিকে ধীরে ধীরে জৈব কৃষির আওতায় আনা যাবে।
৭) বৈচিত্রময় জৈব সম্পদের সুরক্ষা সম্ভব হয়।
৮) জৈব কৃষির ফলে রোগ- পোকা- আগাছা জনিত সমস্যা কমে যায়।
৯) মানব সম্পদ ও প্রাণী সম্পদ সুরক্ষিত ও সমৃদ্ধ হয়।
১০) মাটির উর্বরতা শক্তিকে ধরে রাখার জন্য একমাত্র বিকল্প হল জৈব কৃষি।
১১) গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে জৈব কৃষির গুরুত্ব তাই অপরিসীম।
_জৈব কৃষির ও তণ্ডুল বা দানা শস্যের চাষ_
কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্যের প্রধান উৎস হল তণ্ডুল চাষ বা দানা শস্য চাষ। ইংরাজিতে তণ্ডুল শস্যকে বলা হয় ‘cereals’। ধান, গম, ভুট্টা ও যব ইত্যাদি হল তণ্ডুল বা দানা শস্য জাতীয় ফসল।
_বীজ শোধনঃ_ বীজ বপনের আগে বীজ শোধন অবশ্যই করতে হবে। সেক্ষেত্রে জৈব ছত্রাক নাশক হিসাবে ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি @ ৪-৫ গ্রাম প্রতি কেজি বীজের সাথে ভালো করে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে। এছাড়া জৈব ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা যায়। এভাবেই দানা জাতীয় শস্যের ঢলে পড়া রোগ, শিকড় পচা রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। এছাড়া বীজ শোধনের জন্য পঞ্চগব্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
_মাটিতে উদ্ভিদ খাদ্য ও অনুখাদ্য সমৃদ্ধ করা_
১) রাসায়নিক সার ব্যবহার ধীরে ধীরে বন্ধ করতে হবে।
২) জৈব সার ও জীবাণু সার ব্যবহার করতে হবে
৩) ফসলের অবশিষ্টাংশ জমিতে আচ্ছাদন (mulching) হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
৪) জমিতে ফসলের পর্যায়ক্রমিক চাষ ও একাধিক ফসলের চাষ করতে হবে।
৫) মাটির উপর সবুজ আচ্ছাদন বজায় রাখতে হবে।
৬) অধিক কর্ষণ বন্ধ করতে হবে।
_জৈব সার ব্যবহারের সদর্থক দিক_
১) উদ্ভিদ খাদ্যপ্রাণ ও অণুখাদ্যগুলি ধীরে ধীরে মুক্ত হয় এবং গাছের গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।
২) মাটির গঠন, গ্রথন, জল ধারণ ও বায়ু চলাচল ক্ষমতার উন্নতি ঘটে।
৩) মাটিতে উপকারী জীবাণু সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
৪) মাটির প্রাণ হিউমাস গঠিত হয়।
৫) জৈব সার হল প্রাকৃতিক সুষম সার এবং এতে প্রায় সব ধরনের খাদ্যপ্রাণ অল্পবিস্তর থাকে।
৬) জৈব আচ্ছাদন (organic mulching) হিসাবে ধানের খড়, তূষ, কচুরিপানা প্রভৃতি ব্যবহার করা যায়।
৭) গোবর সার (F.Y.M), কেঁচো সার (Vermi-compost), খোল/ খইল, পোলট্রি সার,খামার জাত সার, কম্পোস্ট সার, সবুজ সার, পাতা পচা সার, আবর্জনা সার, হাড় গুড়ো, শিং গুড়ো প্রভৃতি প্রয়োগ করা হয়।
_কেঁচো সার_
নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম এর শতাংশ হিসাবে কেঁচোসারে নাইট্রোজেন- ১.৫-২.০ %, ফসফরাস- ০.৫-১.০%, পটাশিয়াম- ০.৫-১.০% থাকে। এছাড়া জৈব কার্বন থাকে ২০-২৫ শতাংশ। তাই কেঁচো সার জমিতে প্রয়োগ করলে মাটির স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। কেঁচোসার বা ভার্মি কম্পোস্টের মধ্যে বিভিন্ন খাদ্য উপাদান যেমন Zn, Cu, Fe, Ca, S এবং Mg প্রভৃতিও উচ্চমানে থাকে।
_ভার্মি কম্পোস্ট তৈরিতে জৈব আবর্জনা_
শিম্ব গোত্রীয় গাছের পাতা, সজনে পাতা, ধঞ্চে পাতা, ফল ও সব্জির অব্যবহৃত অংশ বিশেষত ফুলকপি, বাঁধা কপি, আলু, টম্যাটো প্রভৃতির আবর্জনা, পাট-পাতা, গোবর, বিভিন্ন ঘাস, ধান- গম- ভুট্টার খড়, কাঠের গুঁড়ো, কচুরিপানা ও ধানের তূষ প্রভৃতি ব্যবহার করা যায়।
_জমিতে কেঁচোসার প্রয়োগের উপকারী দিক_
১) মাটিতে বায়ু চলাচল বৃদ্ধি পায়।
২) এতে জলে দ্রবণীয় খাদ্যোপাদান (N,P,K,Ca,Mg,S) থাকে। যা উদ্ভিদ সহজে গ্রহণ করতে পারে।
৩) এর মধ্যে অণুখাদ্য (micronutrients) থাকে যা সহজে গাছে সরবরাহ হয় এবং উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, ফলন বাড়িয়ে দেয়।
৪) এর মাধ্যমে মাটিতে জৈব পদাথ যোগ হয়। মাটির স্বাস্থের উন্নতি ঘটায়।
৫) কেঁচোসারে উপকারী জীবাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি করে।
৬) উদ্ভিদের রোগ- পোকার প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৭) এর মধ্যে জিব্বারেলিক অ্যাসিড থাকে, যা উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
_কেঁচো সার প্রয়োগের পরিমাণ_
দানা শস্য চাষের জন্য বিশেষ করে ধান চাষের জন্য কেঁচো সার @ ২.৫-৩.০ টন প্রতি হেক্টর (৭.৫ বিঘা) জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। কেঁচো সার সাধারণত জমিতে ফসল লাগানোর পূর্বে ছড়িয়ে দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হয় অথবা গাছ যখন দুই থেকে তিনটি পাতা যুক্ত হয়, তখন মাটিতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
_ধান-জমিতে নীলাভ সবুজ শৈবাল (Blue-Green-Algea) প্রয়োগ_
ধান রোঁয়ার পাঁচ সাত দিন পর এটি প্রয়োগ করা যাবে। শুকনো নীলাভ সবুজ শৈবাল @ ১০ কেজি প্রতি হেক্টর, এই পরিমাণে প্রয়োগ করা হয়। প্রয়োগের সুবিধার জন্য প্রতি হেক্টরের জন্য ২০ কেজি বালি, ১০ কেজি কালচারের সঙ্গে মিশিয়ে নেওয়া হয়। তা প্রয়োগের পরে এদের বৃদ্ধি এমন ভাবে হয় যে, প্রায় ৩০ কেজি নাইট্রোজেন প্রয়োগের সমতুল্য হয়ে দাঁড়ায়। নীলাভ সবুজ শৈবাল ক্ষার ও লবণাক্ত মাটি সংশোধন করতে সাহায্য করে।
_ধানের জমিতে অ্যাজোলা (Azolla ) ব্যবহার_
অ্যাজোলার পাতায় বিশেষ পত্ররন্ধের মধ্যে নীলাভ সবুজ শৈবাল মিথোজীবি হিসাবে বসবাস করে। এই নীলাভ- সবুজ শৈবাল বায়ু মণ্ডল থেকে নাইট্রোজেন আবদ্ধ করে। জমিতে ধান রোয়ার কয়েকদিনের মধ্যে অ্যাজোলা প্রয়োগ করা যাবে। অ্যাজোলা প্রয়োগের ২০-২৫ দিনের মধ্যে এক হেক্টর জমিতে ২০-৪০ কেজি নাইট্রোজেন সারের জোগান হয়ে যায়। আবার জমি থেকে জল বের করে মাটির ভিতর অ্যাজলা প্রবেশ করালে মাটির জৈব কার্বনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়; নাইট্রোজেন স্থিতিকারী, ফসফেট,পটাশ দ্রাবক,সালফেট দ্রাবক সহ নানা ধরনের জীবাণুসার প্রয়োগে মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি করা যাবে।
_আজোস্পাইরিলাম প্রয়োগ_
এটি উচ্চমানের মুক্তজীবি নাইট্রোজেন স্থিতিকারী জীবাণু। এই জীবাণু বাতাসের মুক্ত নাইট্রোজেন ধান গাছের শিকড়ে বা মাটিতে আবদ্ধ করে গ্রহণযোগ্য অবস্থায় নিয়ে আসে। এর কালচার @২ কেজি প্রতি হেক্টর (৭.৫ বিঘা) — এই হারে জমিতে প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভালো করে মিশিয়ে দিতে হয়।
_অ্যাজোটোব্যাক্টর প্রয়োগ_
এটি এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া, যার বেঁচে থাকার জন্য, নাইট্রোজেন স্থিতিকরণের জন্য কোনও উদ্ভিদের দরকার হয় না। এটি স্বাধীনজীবি ব্যাকটেরিয়া। এই জীবাণু প্রায় ১৫-২০ কেজি নাইট্রোজেন প্রতি হেক্টর জমিতে যুক্ত করতে পারে এক একটি মরশুমে। এটি ধানের জমিতেও কাজ করে। কারণ এই জীবাণুটি মুক্ত বায়ুজীবী। আর ধানের জমিতে শ্যাওলা উপস্থিত থাকে। ওরা জলের মধ্যে অক্সিজেন মুক্ত করে। এই জীবাণু সম্ভবত ওই অক্সিজেন গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। অ্যাজোটোব্যাক্টর @২ কেজি প্রতি হেক্টর জমিতে প্রয়োগ করলে ধানের ফলন বৃদ্ধি পায়। কারণ এই জীবাণু ব্যাকটেরিয়া নাশক ও ছত্রাক নাশক ক্ষরণ উৎপাদন করে, যার ফলে ক্ষতিকারক ছত্রাক, যেমন হেলমিন্হোস্পোরিয়াম দমন হয়। এছাড়া ইনডোল অ্যাসিটিক অ্যাসিড (IAA), জিব্বারেলিক অ্যাসিড প্রভৃতি ক্ষরণকে প্রভাবিত করে। এইভাবে ফসলের পুষ্টিতে সহায়তা করে এবং বৃদ্ধি বাড়িয়ে তোলে। জমির মাটিতে নাইট্রোজেন যোগ করার ব্যাপারে এই জীবাণুর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। এই জীবাণুসার ব্যবহার করার ফলে ধানে ১৫ শতাংশ, গমে ১৫.১ শতাংশ ও ভুট্টায় ১৯.৫ শতাংশ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। জমিতে জল জমে গেলে এই জীবাণুর কার্যকারিতা কমে যায়। মাটি স্যাঁতস্যাঁতে থাকলে এটি খুব ভালোভাবে কাজ করে। কারণ, এমতবস্থায় এই জীবাণুর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
_অ্যাজোটোব্যাক্টরের বাবহার_
_বীজ শোধন:_ এক্ষত্রে ২০-২৫ গ্রাম এই জীবাণু সার প্রতি কেজি বীজের জন্য ব্যবহার করতে পারি। ২০০-২৫০ গ্রাম জীবাণু সার ৩৫০-৪০০ মিলি জলের সাথে ভালো করে মিশিয়ে দ্রবণটি তৈরি করতে হবে। তারপর ১০ কেজি বীজ ওই জীবাণু মিশ্রিত দ্রবণে খুব ভালো করে মেশাতে হবে। প্রতিটি বীজের গায়ে যেন জীবাণু সার লেগে থাকে। তারপর ওই বীজ ছায়াতে প্রায় ১ থেকে ২ ঘণ্টা রেখে ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে।
_চারা শোধন:_ ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি জীবাণু সার ১০ থেকে ১৫ লিটার জলে ভালো করে গুলে দ্রবণ তৈরি করতে হবে। এরপর চারার শিকড়ে লেগে থাকা মাটি ভালো করে ধুয়ে নিয়ে চারাগুলি বান্ডিল সমেত ২০ থেকে ২৫ মিনিট তাতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। তারপর জল ঝরিয়ে জমিতে রোপণ করতে হবে।
_ফসফরাস-দ্রাবক জীবাণু সার (PSB)-এর প্রয়োগ_
ফসফো ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগে মাটিতে অবস্থিত অদ্রবণীয় ফসফরাস গাছের গ্রহণযোগ্য অবস্থায় আসে। PSB @ ২ কেজি প্রতি হেক্টর জমিতে প্রয়োগ করে ভালো করে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে। এটি ব্যবহার করে বীজ শোধনও করা যায়। সেক্ষেত্রে জীবাণু সার প্রতি কেজি বীজের জন্য ১০ থেকে ১৫ গ্রাম ব্যবহার করতে হবে।
_পটাশ-দ্রাবক জীবাণু সারের প্রয়োগ_
_ফ্রাটুরিয়া অরানশিয়া_ নামক জীবাণু মাটিতে অবস্থিত অ-দ্রবণীয় পটাশকে গাছের গ্রহণযোগ্য অবস্থায় এনে দেয়। এই জীবাণুর বাণিজ্যিক ব্যবহার খুব বেশি না হলেও আগামী দিনে উজ্জ্বল সম্ভবনা রয়েছে।
_সবুজ সার (green manure)_
সবুজ সারের চাষ করে ৩০-৪০ দিন বয়সী গাছ মাটির সাথে মিশিয়ে দিলে প্রচুর পরিমাণ জৈব পদার্থ যোগ করে দেয়। তাছাড়া ২০- ৩০ কেজি নাইট্রোজেন মাটিতে যুক্ত হয়, যেমন সবুজ সার হিসাবে ধইঞ্চা চাষ করলে প্রতি একর জমিতে সত্তর কুইন্টাল জৈব সার ও ২০ থেকে ২৫ কেজি নাইট্রোজেন যুক্ত হয়। এছাড়া সবুজ সার হিসাবে শন, মুগ, বরবটি, কলাই প্রভৃতির চাষ করা যায়।
এখানে বোরো ধান চাষের জন্য জৈব-জীবাণু সার প্রয়োগের হিসাব দেওয়া হল-
বোরো ধান (৪০-২০-২০ কেজি না. ফ. প/ একরে)
জৈব সারের
নাম
পরিমাণ (কেজি)
নাইট্রোজেন(কেজি)
ফসফেট(কেজি)
পটাশ(কেজি)
খামারের সার
১০ কুইঃ
১০
৪
৪
সবুজ সার (১ বিঘা)
———–
৫
০
০
জীবাণু সার
২
৮
৮
০
নিম খইল
১০০
৮
২
৪
হাড়ের গুড়ো
১০
০
২
০
কেঁচো সার
১৬০
২.৪
৪
২
কচুরিপানা সার
৪০০
৮
৪
১২
মোট
৪১.৪
২৪
২২
_জৈব আচ্ছাদন (organic mulching)_
খড়, তূষ, কচুরিপানা ইত্যাদি জৈব আচ্ছাদন হিসাবে ব্যবহার করা যায়। এখানে বিভিন্ন সব্জি সহ তৈলবীজ, ডাল শস্য ইত্যাদি ফসল চাষে সার ও সেচের সাশ্রয় হবে। এছাড়া ওই জৈব আচ্ছাদন ধীরে ধীরে পচে মাটির সাথে মিশে জৈব পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। জৈব আচ্ছাদনের ফলে জমিতে আগাছা নিয়ন্ত্রণ হয়, জলের অপচয় রোধ হয় এবং ফলন বেশি পাওয়া যায়, চাষের খরচ কমে।
_তরল সার প্রয়োগ_
জৈব কৃষিতে তরল সারের (liquid fertilizer) ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সার উদ্ভিদ খুব সহজেই গ্রহণ করতে পারে। প্রতিটি ফসলে একর প্রতি ২০০ লিটার করে তরল সার ৩-৪ বার করে সেচ বা বৃষ্টির পরে প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া, গরুর মূত্র ও ভার্মিওয়াশ প্রতিটি ফসলে দুই থেকে ৩ বার স্প্রে করা হয়। এখানে সুপারিশকৃত কয়েকটি তরল সার নিয়ে আলোচনা করা হল।
১) _পঞ্চগব্য-_ চার কেজি গোবর গোলা, এক কেজি টাটকা গোবর, তিন লিটার গো-মূত্র, দুই লিটার গরুর দুধ, দুই লিটার দই, এক কেজি মাখন-ওয়েল মিশিয়ে সাত দিন আবদ্ধ পাত্রে পচানো হয়। প্রতিদিন দুই বার করে নাড়ান হয়। ২০ লিটার পঞ্চগব্য জলে গুলে মিশ্রণ ১ একরে স্প্রে করা হয়। বীজ শোধনের জন্য এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
২) _সমৃদ্ধ পঞ্চগব্যঃ_ ১ কেজি টাটকা গোবর, ৩ লিটার গো-মূত্র, দুই লিটার গরুর দুধ, দুই লিটার দই, এক কেজি দেশি ঘি, তিন লিটার আখের রস, ১২ টি কলা একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে আবদ্ধ পাত্রে সাত দিন পচানো হয়। ২০ লিটার এই মিশ্রণ ৬৫০ লিটার জলে গুলে এক একর জমিতে স্প্রে করে সেচ দেওয়া হয়।
৩) _জিবাস্রুতঃ_ ১০ কেজি গোবর, ১০ লিটার গো- মূত্র, ২ কেজি ঝোলা গুড়, ২ কেজি গমের ময়দা ও ২ কেজি জীবন্ত বস্তুযুক্ত মাটি ২০০ লিটার জলে গুলে পাচ থেকে সাত দিন পচানো হয়। পচানোর সময় প্রতিদিন ৩ বার করে নাড়ান হয়। ওই মিশ্রণ সেচের জলের সঙ্গে মিশিয়ে এক একরে প্রয়োগ করা হয়। একটি ফসলে মোট তিনবার প্রয়োগ করা দরকার। প্রথমবার বীজ বোনার আগে, দ্বিতীয়বার বীজ বোনার ২০ দিন পর এবং তৃতীয়বার অর্থাৎ শেষবার ৪৫ দিন বয়সে।
৪) _সঞ্জীবকঃ_ ২০ কেজি গোবর , ১০ লিটার গোমূত্র, ৫০০ গ্রাম ঝোলা গুড়, ৩০ লিটার জলে গুলে আবদ্ধ ড্রামে ১০ দিন পচানো হয় তারপর ওই মিশ্রণ জলে মিশিয়ে ২০ গুণ বৃদ্ধি করে মাটিতে বা সেচের সঙ্গে প্রয়োগ করা হয় এক একর জমিতে।
_রোগপোকার নিয়ন্ত্রণ_
ফসলে বিভিন্ন রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অনেক দিন ধরে বিভিন্ন রাসায়নিক কীটনাশক রোগনাশক ব্যবহার করায় রোগপোকার মধ্যে গড়ে উঠেছে প্রতিরোধ ক্ষমতা। উৎপাদিত ফসল ও পণ্যের মধ্যে থাকছে ক্ষতিকারক রাসায়নিক অবশেষ। পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ওই ফসল থেকে মানুষ ও গবাদি পশু বিভিন্ন রোগব্যাধির শিকার হচ্ছে। এমনকি আক্রান্ত মায়ের বুকের দুধে ও গরুর দুধেও ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থের অবশেষ পাওয়া গিয়েছে। তাই রাসায়নিক প্রয়োগে রোগ-পোকা নিয়ন্ত্রনের একমাত্র বিকল্প পথ হল জৈবিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণ। তাই পরিচর্যা ও যান্ত্রিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি জোর দিতে হবে জৈবিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণের উপর।
_পরিচর্যার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা_
১) শস্য পর্যায় অবলম্বন করতে হবে, একই ফসল ও জাত বার বার একই জমিতে চাষ করা যাবে না।
২) জমিতে গ্রীষ্মকালীন চাষ/কর্ষণ করতে হবে। আল ছাঁটতে হবে, ধান গাছের নাড়াগুলো এক জায়গায় জমা করে নষ্ট করতে হবে।
৩) বোনার আগে জৈব ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করতে হবে
৪) চারা শোধন করলে খুব ভালো হয়।
৫) মাটি পরীক্ষা করে জমির মাটির গুণাগুণ জেনে নেবার দরকার।
৬) জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। জমিতে ধান চাষের আগে সবুজ সার হিসাবে ধৈঞ্চা চাষ করার প্রয়োজন। ধান চাষের সাথে অ্যাজোলা চাষ করা দরকার।
৭) মূল জমিতে কাদা করার সময় আগাছা ভালো করে পচিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
৮) বাদামী শোষক পোকা (BPH) উপদ্রুত এলাকায় ৮ সারি অন্তর এক সারি ফাঁকা রাখুন। উত্তর থেকে দক্ষিণে সারি করুন।
৯) ধানের চারা রোপণ করার ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে মাঝে মাঝে জমি থেকে জল বের করে মাটি ঘেঁটে দিলে ভালো হয়।
১০) বাদামী শোষক পোকার আক্রমণ বেশি দেখা দিলে জল বের করে জমি শুকিয়ে দেবার দরকার। পাশ ঠেলা দিয়ে জমিতে আলো বাতাস বেশি মাত্রায় প্রবেশ করাতে হবে। নিয়মিত জমিতে নেমে পরিদর্শন করতে হবে।
১১) ধানের ক্ষতিকারক পোকা ও বন্ধু পোকার সংখ্যাও দেখতে হবে।
১২) শতকরা ৮০ ভাগ ধান পেকে গেলে কেটে নিতে হবে।
_যান্ত্রিক ও ভৌতিক অবলম্বন করে নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা_
১) আক্রান্ত গাছ তুলে নষ্ট করে দিতে হবে।
২) শত্রু পোকার ডিমের বা পোকার গাদা তুলে নিয়ে হবে
৩) ফসলের জমিতে পাখি বসার জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি বাঁশের খাঁচা লাগাতে হবে।
৪) চুঙ্গি পোকা, পাতা মোড়া পোকা, পামরি পোকার আক্রমণের প্রকোপ কমানোর জন্য কেরোসিন মাখানো দড়ি ধান গাছের উপর দিয়ে টানতে হবে।
৫) ঝলসা রোগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ভোর বেলায় শুধুমাত্র দড়ি ধান গাছের উপর দিয়ে টেনে পাতার শিশির ঝরিয়ে ফেলতে হবে।
_ফেরোমান ফাঁদ ও অন্যান্য ব্যবস্থা_
ফসলের জমিতে ফেরোমন ফাঁদ পেতে নিতে হবে এবং ওতে নির্দিষ্ট কীট শত্রুর ‘লিওর’ লাগিয়ে দিতে হয়। এর ফলে কীটশত্রুর সংখ্যা গণনা করা যায় এবং ফসলের ক্ষতিকারক পোকাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আলোক ফাঁদ, মিশ্রচাষ, ফাঁদ ফসলের চাষ, বেড়া ফসলের চাষ, হলুদ রঙ এর ড্রাম বা বোর্ড আঠালো পদার্থ মাখিয়ে লাগানো ইত্যাদির মাধ্যমে খুব সহজেই ক্ষতিকারক পোকা ও রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
_ঘরোয়া গাছ গাছড়ার ব্যবহারের মাধ্যমে ফসল সুরক্ষা_
তিতা পাটের বীজ, তামাক পাতা, রসুন, নিম, নিশিন্দা, করঞ্জা, আতাপাতা, ভাটি পাতা ইত্যাদি ফসলের নানা রকম রোগ পোকা নিয়ন্ত্রণে অন্যতম ভূমিকা পালন করে। ফলে পরিবেশের কোন ক্ষতি হয় না। এমনকি জৈব কৃষি পণ্যে অবশিষ্ট বিষক্রিয়া পাওয়া যায় না।
_বন্ধু পোকার সংরক্ষণ_
ফসলের জমিতে যেমন ক্ষতিকারক পোকা রয়েছে, তেমনি আছে বন্ধু পোকা – যারা ফসলের ক্ষতি করে না। যেমন, বন্ধু পোকা মাকড়, মাকড়শা, বোলতা, টিপ পোকা, বড় ফড়িং, লম্বা শুঁড় ঘাস ফড়িং, ঝিঝি পোকা, জলের পোকা, বোলতা পোকা ইত্যাদি। রাসায়নিক কীটনাশক প্রয়োগ না করে এই বন্ধু পোকাদের সংরক্ষণ করলেই প্রাকৃতিক নিয়মেই রোগ- পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
জৈবিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা_
শস্য- ফসলের ক্ষতিকর রোগ- পোকা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অতি মাত্রায় রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে ও উৎপাদিত কৃষি পণ্যের মধ্যে অবশিষ্ট বিষক্রিয়া (residual toxicity) পাওয়া গিয়েছে। অর্থাৎ উৎপন্ন ফসলে গুণমান কমে যায় আর সেই সঙ্গে রোগ-পোকার মধ্যে গড়ে উঠেছে প্রতিরোধ ক্ষমতা। রাসায়নিক প্রয়োগের ফলে যেমন দূষিত হচ্ছে বায়ুমণ্ডল, তেমনি কেঁচো জাতীয় প্রাণীকূলও আজ বিলুপ্তপ্রায়। তাই রাসায়নিক প্রয়োগে রোগ-পোকা নিয়ন্ত্রণের একমাত্র বিকল্প হলো জৈবিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণ। তবে পরিচর্যা ও যান্ত্রিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি জোর দিতে হবে জৈবিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণ।
ধানের জমিতে রয়েছে বিভিন্ন ক্ষতিকারক পোকামাকড়, ঠিক তেমনি রয়েছে তাদের বিভিন্ন প্রাকৃতিক শত্রু, যেমন পরভোজী ও পরজীবী পোকা, মাকড়শা, এবং রোগ জীবাণু। অর্থাৎ ওই সব রোগ- পোকার শত্রু রোগ-পোকার অভাব নেই। স্বাভাবিক নিয়মে প্রকৃতির মধ্যে ওই সব রোগ- পোকার শত্রু আছে। এই প্রাকৃতিক শত্রুরা ফসলের ক্ষতিকারক পোকাকে আক্রমণ করে তাদেরকে খেয়ে ফেলে বা তাদের থেকে খাদ্যগ্রহণ করে তাদের মেরে ফেলে। ধান জমিতে পোকা মাকড় দমনের জন্য এই সমস্ত প্রাকৃতিক শত্রুরা অতি উপকারি। এদের বন্ধু পোকা বা মিত্র পোকা বলে। এরাই আমাদের ফসলকে শত্রু-পোকার হাত থেকে রক্ষা করবে। জমিতে বন্ধু পোকার সংখ্যা শত্রু পোকার থেকে বহুগুণ বেশি। এরাই নিঃশব্দে আমাদের ফসলকে শত্রু পোকার হাত থেকে রক্ষা করে চলেছে। তাই ভালো ভাবে চিনে নিয়ে এই সমস্ত বন্ধু রোগ পোকার সুরক্ষা, বংশ বৃদ্ধি ও ব্যবহারই জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মূল কথা।
ধানের ক্ষতিকারক পোকা হল মাজরা, পামরি, ভেঁপু, শোষক, চুঙ্গি, পাতা মোড়া, শ্যামা, ও ল্যাদা পোকা ইত্যাদি। এই সমস্ত পোকা গুলির শত্রু পোকা গুলি হল বিটল, মাছি, বোলতা, মাকড়সা, মিরিড বাগ, লম্বা শুঁড় ঘাস ফড়িং ইত্যাদি। এদের সংখ্যা প্রকৃতিতে অনেক বেশি। এদের তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা পরভোজী, পরজীবী এবং রোগ জীবাণু।
_পরভোজীঃ_ এরা ফসলের ক্ষতিকারক পোকার জীবন চক্রের যে কোন দশাকেই খেয়ে ধ্বংস করে। পরভোজী পোকারা সারাজীবন বেঁচে থাকার জন্য শিকার করে পূর্ণবয়স্ক পোকা, তাদের কীড়া ও ডিম। ধানের জমিতে পরভোজী পোকারা হল বিভিন্ন প্রকার মাকড়সা, ফড়িং, টিপ পোকা, সুন্দরী ফড়িং, মিরিড বাগ পোকা ইত্যাদি। এরা মাজরা পোকা, পাতা মোড়া পোকা, ল্যাদা পোকা, শ্যামা পোকা, শোষক ইত্যাদির পূর্ণাঙ্গ বা বাচ্চা বা ডিম ইত্যাদি খেয়ে জীবণ ধারন করে বা এদের ধ্বংস করে। এদেরকে ভালো করে চিনে নিন এবং অন্যান্য কৃষক বন্ধুদের চেনান এবং সংরক্ষণ করুন।
_পরজীবীঃ_ পরজীবীরা সাধারণত শত্রুপোকার জীবনের যে কোন দশাতে নিজেদের জীবনের ডিম, শূককীট বা কীড়া বা মূককীট দশা অতিক্রম করে। এইভাবে শত্রু পোকা পরোক্ষভাবে ধ্বংস হয়। নিজেদের জীবনচক্র অতিবাহিত করে তাদের ধ্বংস করে পুষ্ট হয়। এর ফলে শত্রু পোকা মারা যায়। উদাহরণ- বিভিন্ন ধরনের বোলতা ও মাছি।
_উপকারী রোগ ও জীবাণু:_ ধান জমিতে কিছু কিছু ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, কৃমি ইত্যাদি আছে যারা শত্রু পোকাকে জীবদ্দশায় আক্রমণ করে, তাদের মধ্যে রোগ সৃষ্টি করে এবং আমাদের উপকার করে।
১) _ছত্রাক গোষ্ঠীভূক্ত উপকারী জীবাণু:_ হিরসুটেল্লা, মিটারহিজায়াম জাতীয় ছত্রাকগুলি বাদামী শোষক পোকা (BPH), সাদা-পিঠ শোষক পোকা (WBPH), শ্যামাপোকা, গন্ধী পোকা বিভিন্ন শত্রু পোকাকে আক্রমণ করে এবং বিউভেরিয়া, নিমুরিয়া জাতীয় ছত্রাকগুলি মাজরা, ল্যাদা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, চুঙ্গি পোকা ইত্যাদি পোকাকে ধ্বংস করে ফেলে।
_ট্রাইকোডারমা ভিরিডি বা হারজেনিয়াম (ছত্রাক)_
গার্ড ইকো ফিট, নিরপট, ইকোডারমা, ট্রাইকোডারমিন, কেসানা ইত্যাদি নামে বাজারে (বাণিজ্যিক নাম) পাওয়া যায়।
বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক ঘটিত রোগ, চারা ঢলে পড়া, গোড়া পচা, ঝিমানো, মূল ও কাণ্ড ইত্যাদির নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
_বীজ শোধনঃ_ ৪-৫ গ্রাম/ কেজি বীজ
_চারা শোধন-_ ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম ট্রা.ভি. (ট্রাইকোডারমা ভিরিডি) গুঁড়ো ১০- ১৫ লিটার জলে গুলে চারার শিকড় ৩০ মিনিট ডুবিয়ে রেখে ছায়াতে জল ঝরিয়ে নিতে হবে।
_২) ব্যাকটেরিয়া গোষ্ঠীভুক্ত উপকারী জীবাণু_
ব্যাসিলাস থুরিনজিয়েনসিস্ এক ধরনের মৃত্তিকা-ব্যাকটেরিয়া যা বিভিন্ন ল্যাদা পোকা বা কীড়াকে যেমন মাজরা, পাতা মোড়া ও ল্যাদা পোকাকে আক্রমণ করে বিনাশ করে।
_ব্যাসিলাস থুরিনজিয়েনসিস্ (ব্যাকটেরিয়া)_
হিল বিটি-কে, বায়োলেপ, ডেলফিন, বায়োভিট, হল্ট, ফাইটার, ডাইপেল, ইত্যাদি নামে বাজারে (বাণিজ্যিক নাম) পাওয়া যায়। পাতা খেকো পোকা, ল্যাদা পোকা, ফুল ও ছিদ্রকারি পোকা, প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
চারা তোলার ৭ দিন আগে বীজ তলায় এবং চারা লাগানোর ২৫ দিন পর থেকে ১৫ দিন অন্তর ২-৩ বার @১ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
_৩) ভাইরাস গোষ্ঠীভুক্ত উপকারী জীবাণু:_
নিউক্লিয়ার পলিহাইড্রোসিস ভাইরাস, গ্রানুলোসিস ভাইরাস ধানের বিভিন্ন ল্যাদা জাতীয় পোকাকে আক্রমণ করে এবং সংক্রমণ করে থাকে। শেষে আক্রান্ত পোকা মারা যায়। এদের থেকে আবার অন্য ল্যাদা পোকারা আক্রান্ত হয়।
_এন. পি.ভ. (নিউক্লিয়ার পলিহেড্রেসিস ভাইরাস)-_ হেলি হিলি সাইড ১০০ এল.ই. বায়োভাইরাস- এইচ ইত্যাদি নামে বাজারে পাওয়া যায়। ধানের ল্যাদা পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
ফুল আসার ৭-১০ দিন আগে ৩/৪ বার ১০-১৫ দিন অন্তর @১ মিলি/লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
_এন.পি.ডি.- স্পোডো_
এন.পি.ডি.- স্পোডো, বায়োভাইরাস- এস ইত্যাদি নামে বাজারে পাওয়া যায়। ধানের জমিতে প্রয়োগ করা যায়। পাতা খেয়ে এবং ফুল ও কাণ্ড ফুটো করে ফসলের ক্ষতি করে এই ধরনের স্পোডোপটেরা গোত্রীয় ল্যাদা পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
চারা লাগানোর ২৫-৩০ দিন পর থেকে ১২-১৫ দিন অন্তর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে।
_সিউডোমনাস ফ্লুরোসেন্স্_
আর্মি, সিউডো গার্ড ইত্যাদি নামে বাজারে পাওয়া যায়। ধানের জমিতে ঢলে পড়া, কাণ্ড পচা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
বীজ শোধন ও জমির মাটি শোধনে ব্যবহৃত হয়।
_অ্যাজাডাইরেক্টিন বা নিমতেল -_
ইকোসিস , নিমাজল, নিমারিন, নিমগোল্ড ইত্যাদি নামে বাজারে পাওয়া যায়। ল্যাদাপকা, শোষক পোকা, সাদা মাছি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। অ্যাজা ১% @ ৩ মিলি/ লিটার বা অ্যাজা ৫% @ ১ মিলি/ লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
বর্তমানে রাসায়নিক কীটনাশকের নানা রকম ক্ষতিকারক প্রভাব পাওয়া গেছে। তাই উদ্ভিদ জাত কীটনাশক প্রয়োগ করে ফসলের ক্ষতিকারক পোকাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তামাক, ধুতুরা, রসুন, করঞ্চা, জোয়ার প্রভৃতি গাছের নির্যাস থেকে কীটনাশক তৈরি হয়। জৈব রোগ- পোকা নাশক হল পরিবেশের পক্ষে স্বাস্থ্যকর। এছাড়া এর জন্য খরচ কম লাগে ও অধিক লাভ পাওয়া যায়।
_বহুমুখী ফসল ও ফসল চক্র_
জৈব কৃষিতে শুধু একটিমাত্র ফসল চাষের কোন সুযোগ নেই। প্রতিটি কৃষি খামারে ৮-১০ রকমের ফসল চাষ করতে হবে। প্রতিটি জমিতে ২-৩ রকম ফসল চাষ করা উচিত। এর মধ্যে জমিতে একটি সময়ে ডাল জাতীয় শস্যের চাষ করা উচিত। এমনকি উচ্চ খাদ্য চাহিদার আখ, ডাল শস্যও সব্জি সাথী ফসল হিসাবে পাওয়া যায়।
_তণ্ডুল অর্থাৎ দানা শস্য ও ডাল শস্যের যৌথ চাষঃ_
আমন ধান, আউশ ধান, গম, ভুট্টা, প্রভৃতি দানা শস্যের সাথে ডাল জাতীয় ফসল যেমন মুসুর, ছোলা, খেসারি, মুগ, কালো কলাই, অড়হর ইত্যাদির চাষ করা দরকার। মূল জমির ৬০ শতাংশ জমিতে দানা শস্য ও ৪০ শতাংশ জমিতে ২টি ডালজাতীয় শস্য লাগাতে হবে। ১৫-২০ কুইন্টাল কম্পোস্ট, ৫০০ কেজি কেঁচোসার ও ১০০ কেজি রক ফসফেট প্রতি একর জমির মাটিতে মিশাতে হবে। জীবাণুসার বীজ ও মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে। আগের ফসলের অবশিষ্টাংশ তরল সার মাখিয়ে বীজ বোনার পর মাটির উপর আচ্ছাদন দিতে হবে। এই জৈব আচ্ছাদন ক্রমে ক্রমে পচে মাটির সাথে মিশে যাবে। ফলে মাটিতে জৈব পদার্থের জোগান বৃদ্ধি পাবে এবং ফসল অল্প হলেই খাদ্য- উপাদান সংগ্রহ করতে পারবে।
[ লেখক পরিচিতি: ড. কল্যাণ জানা (Dr. Kalyan Jana) একজন কৃষি বিশেষজ্ঞ ও ভারতীয় কিষান সঙ্ঘের প্রান্ত কার্যকারিণী সদস্য ]
প্রস্তুত প্রবন্ধটি ‘ভারতীয় কিষান বার্তা’-র জৈবকৃষি বিশেষ সংখ্যার অন্তর্গত। ১ লা ডিসেম্বর, ২০২০। সম্পাদক ড. কল্যাণ চক্রবর্তী। (Bharatiya Kishan Barta, Organic Farming Special Issue, 1 December, 2020, Editor: Dr. Kalyan Chakraborti)
ড. কল্যাণ জানা