শ্রাবণ মাস পাট ঃ যেহেতু পাট কেটে আমনধান রোপণ করতে হবে, তাই জমি ফাঁকা করতে শ্রাবণ মাসের মধ্যে পাট কাটার কাজ শেষ করতে হবে। পাট বোনার ১০০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে গাছে ফল আসার আগেই পাট কেটে নিতে হয়। পাট কেটে জাগ দেওয়ারও উপযুক্ত সময় শ্রাবণ। বেছে নিন পাট পচানোর উপযুক্ত জলাশয়। জাগ দেওয়ার ৩-৪ দিন আগে পাটের আঁটিগুলির গোড়া ৬০ সেন্টিমিটার গভীরতার জলে দাঁড় করিয়ে রাখতে হবে। কারণ পাটের গোড়া পচতে সময় লাগে। জাগ দেবার সময় পাটগাছের বাণ্ডিলের ডগাগুলি একই দিকে রাখতে হবে। সম্ভব হলে আগে থাকতে আঁটিগুলিতে কয়েকটি শন বা ধঞ্চের গাছ রাখুন, তাতে পাটের পচন দ্রুত হবে।
পাটতন্তুর গুণগত মান বাড়াতে হলে জলের গভীরতা এমন হবে না যে পাট মাটি স্পর্শ করে যায়, জাগ দেওয়া পাটগাছের আঁটিগুলি যেন জলতল থেকে ১৫-২০ সেন্টিমিটার উপরে থাকে এবং জাগ-স্তরের উপরে আরও ১৫ সেন্টিমিটার জল রয়ে যায়। পাট ভালোভাবে পচানোর জন্যই এটি দরকার। তন্তুর রঙে উজ্জ্বলতা আনতে হলে চাপ দেওয়ার জন্য কলাগাছ ব্যবহার করা যাবে না, মাটিও ব্যবহার করতে হবে পলিথিন ব্যাগের মধ্যে ভরে, বড় বড় পাথর বা ঢেলা/আধলা ইটের টুকরো ভাল চাপের কাজ করবে। অনেক সময় দেখা যায় পাট পচনের পরও তন্তুর গোড়াতে বাকল অংশ রয়ে যায়, সেক্ষেত্রে বাজারে তন্তুর দাম বেশি পাওয়া যায় না। এই বাকল সরিয়ে দিলে গুণমানে উন্নত তন্তু পাওয়া যায়। এরজন্য অনেক চাষী ‘ছত্রাক কালচার’ ব্যবহার করেন। দুই কুইন্টাল কাঁচা পাটের গোছর বাকল সরাতে একটি প্যাকেটই যথেষ্ট। আঁশ ছাড়িয়ে রাখা ভিজে পাট পরতে পরতে ‘বিড়ে করে’ সাজিয়ে নিতে হবে। ছত্রাক কালচার জলে মিশিয়ে ঝাঁঝরি দিয়ে তার উপর সিঞ্চন করে ত্রিপল দিয়ে বা বস্তা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। বজায় রাখতে হবে তার স্যাতসেঁতে ভাব। এভাবে দু-তিন দিনের মধ্যে গোড়ার বাকল অংশ সরে যাবে। তারপর তা ভালকরে জলে ধুয়ে নিতে হবে। উৎকৃষ্ট তন্তু পেতে হলে মাটিতে বা রাস্তায় পাট শুকানো চলবে না।
ভালো মানের পাট পেতে গেলে বাঁশ টাঙ্গিয়ে ‘ভেড়ি’ করে তার উপর ভেজা পাট শুকোতে হবে। অনেক চাষী প্রতি ১০০ লিটার জলে ২ কেজি ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট এবং ২ কেজি চিটে গুড় মিশিয়ে তা পাটের বিড়েতে সিঞ্চন করেন। তাতেও কয়েক ঘণ্টা ভেজা থাকলে বাকল অংশ দূরীভূত হয়। ১০০ কেজি যদি এমন মিশ্রণ তৈরি করা যায় তো প্রায় ৩০০ কেজি ভেজাপাট বাকলমুক্ত হবে। অনেকে আবার জলের অভাবে স্বল্পজলে পাট পটানোর জন্য ‘জুট রিবনার’ যন্ত্র ব্যবহার করেন। এতে সুবিধা হল পাট পচাতে জায়গা লাগে কম। তন্তুর মান উন্নত হয়, আর উপজাত পাটকাঠি শিল্প সামগ্রী তৈরিতে কাজে লেগে যায়। এ বিষয়ে বিশদে জানতে হলে নিকটবর্তী উপ কৃষি অধিকর্তা (ADA)-র সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
আমন ধান ঃ শ্রাবণ মাসের মধ্যে মূল জমি তৈরি করে আমন ধানের চারা রোয়ার কাজ শেষ করে ফেলুন। জমি তৈরি করতে শেষ চাষের সময় বিঘা প্রতি কমপক্ষে ১০ কুইন্টাল জৈবসার ব্যবহার করতে হবে। পারলে বিঘা প্রতি আরও দু’চার কুইন্টাল জৈবসার দিলেও মন্দ হয় না। আর দিন রাসায়নিক সার, বিঘা প্রতি ৩.৫ কেজি নাইট্রোজেন বা ৭.৭ কেজি ইউরিয়া, ৫.৩ কেজি ফসফেট বা ৩২.৩ কেজি সিঙ্গল সুপার ফসফেট এবং ৫.২ কেজি পটাশ বা ৮.৫ কেজি মিউরিয়েট অব পটাশ, সঙ্গে দিন ৩ কেজি জিঙ্ক সালফেট, ১ কেজি ব্লু-গ্রীন অ্যালগী (জীবাণু সার) এবং ২৫০ গ্রাম অ্যাজোটোব্যাক্টর (জীবাণু সার), মাটিতে গন্ধকের অভাব থাকলে এছাড়াও দেবেন বিঘাতে আড়াই কেজি পরিমাণ গন্ধক। আমন ধানের চারা লাগাবেন সারি থেকে সারি ২০ সেন্টিমিটার দূরত্বে এবং সারির মধ্যে গুছি থেকে গুছি ১০ সেন্টিমিটার দুরত্বে। চারা রোয়ার সময় কাদানে মাটি মাখা মাখা ভেজা থাকলেই চলবে, ছিপছিপে জল না হলেও চলে।
আম ঃ শ্রাবণ মাসের বর্ষায় আমগাছে ছত্রাকঘটিত পিঙ্ক রোগ পরিলক্ষিত হয়। ছত্রাকের সাদা আস্তরণ সরু ডালের ডগায় চোখে পড়ে। তাতে পাতাগুলি হয়ে যায় ফ্যাকাসে হলুদ, তারপর তা শুকিয়ে যায়। পিঙ্ক রোগ দেখা গেলে আক্রান্ত ডালগুলি মসৃণভাবে কাট-ছাঁট করে তাতে তামাঘটিত ছত্রাকনাশকের পরত লাগাতে হবে। তারপরও দু-একবার কপার অক্সিক্লোরাইডের সিঞ্চন (লিটারে ৩ গ্রাম) ভালো কাজ দেয়। এই মাসে খেয়াল রাখতে হবে নার্সারিতে বা ছোটো গাছে কচি পাতায় কেড়ি পোকার আক্রমণ দেখা যাচ্ছে কিনা। কাঁচি দিয়ে কাটার মত করে কচি পাতা বোঁটার কাছ থেকে আড়াআড়িভাবে কেটে দেয় এই কীট। শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে কচি পাতা নির্গত হলে একদম ছোটো চারার গোড়ায় দানাদার কীটনাশক যেমন ফোরেট ১০ জি কয়েক গ্রাম ছিটিয়ে দিলে সুফল পাওয়া যায়। কচি পাতা বেরোনোর সময় প্রতি লিটার জলে ১ মিলি ডাইক্লোরোভস বা আড়াই গ্রাম কার্বারিল গুলে দিলেও কাজ হবে।
এই সময় আমগাছে পাতা ও ডগা ঝলসা রোগ লাগে। এটি একপ্রকার ছত্রাকঘটিত রোগ। এই রোগের আক্রমণে কচি পাতাসমেত ডগা অংশটি গাঢ় বাদামী ও ক্রমে কালচে হয়ে ঝলসে যায়। এমন আক্রান্ত ডগাগুলি কেটে একসঙ্গে পুড়িয়ে ফেললে এবং বাগান সার্বিকভাবে আগাছা মুক্ত রাখতে পারলে রোগের লক্ষণ কমে। তাছাড়া ছত্রাকনাশক ক্লোরোথ্যালোনিল (২ গ্রাম), প্রপিনেব (২ গ্রাম), কার্বেণ্ডাজিম (১ গ্রাম) বা থায়োফেনেট মিথাইল (১গ্রাম) – এদের যে কোনো একটি ওষুধ প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করলে কাজ হবে।
এই সময় কচিপাতা ও ডগায় অ্যানথ্রাকনোজ রোগের লক্ষণ চোখে পড়লে বৃষ্টিবিহীন দিনে ১৫ দিন অন্তর ২ বার কপার অক্সিক্লোরাইড (যেমন ব্লাইটক্স) ৪ গ্রাম অথবা সাফ (কার্বেণ্ডাজিম + ম্যানকোজেব মিশ্রণ) ২ গ্রাম আঠাসহ গুলে স্প্রে করতে হবে। শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে আম পাতায় শৈবালের আক্রমণে লাল মরচে রঙের উঁচু দাগ দেখা যায়। আঠা মিশিয়ে প্রতি লিটার জলে ৩ গ্রাম কপার অক্সিক্লোরাইড স্প্রে করলে কাজ হবে।
আষাঢ় থেকে শুরু করে শ্রাবণ মাসের মধ্যে আমগাছে প্রথম দফায় সার প্রয়োগ করতে হবে। পূর্ণ ফলনশীল গাছ প্রতি ১০০ কেজি গোবর সার, ৫০০ গ্রাম নাইট্রোজেন, ২৫০ গ্রাম থেকে ৩৭৫ গ্রাম ফসফেট আর ৩৭৫ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম পটাশ দিতে হবে। সারগুলির মাত্রা হিসেব করে ইউরিয়া, সিঙ্গল সুপার ফসফেট ও মিউরিয়েট অব পটাশ সার জমিতে প্রয়োগ করুন। গোবর সার বাদ দিয়ে একই পরিমাণ সার বর্ষার শেষেও আমগাছে দিন।
যারা আমের নতুন বাগান তৈরি করবেন তারা সংকর জাত হিসাবে আম্রপালি বা মল্লিকা লাগাতে পারেন। এগুলি নিয়মিত ও প্রচুর ফলন দেয়, ফলের গুণগত মানও উন্নত। এছাড়া স্থানীয় অর্থকরী জাত হিমসাগর, ল্যাংড়া, বোম্বাই এবং মালদার জন্য ফজলী লাগাতে পারেন। আম্রপালি ও মল্লিকাকে ৫মিটার * ৫ মিটার দূরত্বে লাগানো যায়। অন্য জাতগুলি দ্বি-বেড়া সারি করে লাগান। সাধারণত ১০ মিটার ১০ মিটার দূরত্বে চারা লাগানোর নিয়ম। এই পদ্ধতিতে ১০ মিটার দূরত্ব অন্তর ৫মিটার * ৫ মিটার দূরত্বে দুই সারি চারা লাগান। এতে প্রায় ২২২ শতাংশ বেশি চারা লাগাতে পারবেন। ফলে একই জমি থেকে ফলন ও লাভ বেশি হবে।
পেয়ারা : বর্ষাকালে পেয়ারার ফলের মাছি বা ফুট-ফ্লাইয়ের উপদ্রব বাড়ে। মাছির শুককীট পেয়ারার শাঁস খায়, তাতে কচি ফল পচে ঝরে পড়ে। মাছির জন্য বিষটোপ বা ফঁদ ব্যবহার করে মোকাবিলাটাই সহজ ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি। প্লাস্টিক পাত্রের ভিতর তুলো ভিজিয়ে মিথাইল ইউজিনল ফাঁদ তৈরি করতে হবে। এই রসায়নের প্রভাবে রাশি রাশি মাছি আকৃষ্ট হয়ে ধেয়ে আসবে এবং মারা পড়বে। তুলোটি মাঝে মাঝে পুনরায় ওই রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হবে, তবে তার কার্যকারিতা বজায় থাকবে। এছাড়াও ফলের মাছির জন্য বিষটোপ হিসাবে দুই লিটার জলে ২০০ গ্রাম চিটে গুড় ও সঙ্গে ৫০ মিলিলিটার ম্যালাথিয়ন মিশিয়ে একটি দ্রবণ বানিয়ে তার সামান্য পরিমাণ কয়েকটি মাটির ভাঁড়ে রেখে তা বাগানের বিভিন্ন অংশে ঝুলিয়ে দিতে হবে। মাছি তাতে আকৃষ্ট হয়ে ফলে ডিম না পেড়ে এখানে ডিম পাড়বে এবং তা অকার্যকরী হবে। অনেক মাছি মারাও পড়বে।
এই সময় পেয়ারায় ফলপচা রোগ দেখা যায়। এটি একটি ছত্রাক ঘটিত রোগ। এতে ফলগুলি প্রথম হলুদ হয়ে পচে ঝরে যায়। আক্রান্ত ফলগুলি কুড়িয়ে, জমির বাইরে নিয়ে গিয়ে নষ্ট করে ফেলা উচিত, তাতে পরবর্তী রোগের আক্রমণ কমে। এই রোগের মোকাবিলায় মেটালাক্সিল ম্যানকোজের মিশ্রণ প্রতি লিটার জলে ২.৫ গ্রাম মিশিয়ে, আঠা দিয়ে স্প্রে করতে হবে।
এই সময় পেয়ারায় ক্যাঙ্কার বা খোস রোগও দেখা যায়। এতে ফলের গায়ে বাদামি বা কালচে রঙের খসখসে দাগ হয় এবং ফল শক্ত হয়ে ওঠে। ক্ষত রোগে ফলের ত্বকে গর্তযুক্ত বাদামি রঙের ক্ষত চোখে পড়ে। এই রোগের মোকাবিলায় একপক্ষ অন্তর দু-তিন বার আঠাসহ কার্বেণ্ডাজিম (প্রতি লিটারে ১ গ্রাম) বা থায়োফেনেট মিথাইল (১গ্রাম) স্প্রে করলে কাজ হবে। শ্রাবণ মাসের বর্ষার সময় যাতে পেয়ারা বাগান সঠিকভাবে আগাছামুক্ত থাকে তা নজর রাখুন। রোগাক্রান্ত ডালপালা ছেঁটে কর্তিত অংশে ব্লাইটক্সের ঘন প্রলেপ লাগিয়ে দিন।
কাজুবাদাম ঃ এই সময় খেয়াল রাখতে হবে কাজুবাদামের চারাগাছে যেন জল না জমে। জল নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। নানান রোগের মোকাবিলায় ১ শতাংশ বোর্দো মিশ্রণ প্রতি লিটার জলে দেড় মিলিমিটার হারে স্প্রে করা উচিত। অন্যথায় তামাঘটিত ওষুধ স্প্রে করলেও চলবে। এই সময় কাজু বাদামে জোড়কলম করা যায়। বৈশাখমাসে উৎকৃষ্ট কাজুর বীজ সংগ্রহ করে যে এলাগাছ তৈরি হবে তাতে এমাসে কলম করা সবচাইতে ভালো। জোড়কলম বাঁধতে হবে গোড়া থেকে ১৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায়। জোড়ার আগে পরশাখীর পরিচর্যা জরুরী, তা সাতদিন আগে থেকে শুরু করতে হবে। পাতার বোঁটাগুলি রেখে বাকী অংশ কেটে ফেলতে হয়। এদিকে এলাগাছের অধিকাংশ পাতাই ফেলে দিতে হয়। পরশাখীর ১০ সেন্টিমিটার মত ডাল V আকৃতিতে কেটে নিয়ে এলাগাছে জুড়তে হবে। তারপর পলিথিন টেপ জড়িয়ে বাঁধতে হবে।
কলা : শ্রাবণমাসে কলায় ছত্রাক-ঘটিত সিগাটোকা রোগের লক্ষণ দেখা যায়। তাতে কলাপাতার কিনারে লম্বাটে হলুদ দাগ হয়। এইসময় আক্রান্ত পাতাগুলি সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে স্প্রে করতে হবে কপার অক্সিক্লোরাইড (প্রতি লিটার জলে ৩ গ্রাম), রোগের তীব্রতা বাড়লে প্রপিকোনাজোল বা টেবুকোনাজোল প্রতি লিটার জলে ১ মিলিলিটার গুলে স্প্রে করতে হবে।
চন্দ্রমল্লিকা : শ্রাবণ থেকে আশ্বিনের মধ্যে চন্দ্রমল্লিকার চারা বসাতে হবে। জমির মাটি লাঙ্গল দিয়ে ঝুরুঝুরু করে নিতে হবে, শেষ চাষের সময় দিতে হবে বিঘায় সোওয়া দুই টন গোবর সার, ২০ কেজি ইউরিয়া, ৮০ কেজি সিঙ্গল সুপার ফসফেট এবং ২০ কেজি মিউরিয়েট অব পটাশ, ১০ কেজি নিমখোল, ১০ কেজি সরষের খোল। চন্দ্রমল্লিকার জন্য এক একটি বেড বানানো হবে যার মাপ হবে ৯০ সেন্টিমিটার চওড়া, ১৫ সেন্টিমিটার উঁচু এবং জমির আকার অনুযায়ী লম্বা। দুটি বেডের মাঝখানে ৩০ সেন্টিমিটার ফাঁক পরিখা রাখা হবে। প্রতি বেডে দুটি করে গাছের সারি থাকবে। সেক্ষেত্রে গাছের দূরত্ব হবে ৪৫x৪৫ সেন্টিমিটার। বড় কাট ফ্লাওয়ারের জন্য একটি বেডে ৩-৪টি সারি রাখা হয়। সেক্ষেত্রে দূরত্ব হবে ৩০x২০ সেন্টিমিটার।
পটল ঃ শ্রাবণমাসে পটলের হাজা-রোগ বা ফল ও ডাঁটা পচা রোগের আক্রমণ বাড়ে। এটি ছত্রাকঘটিত রোগ ও এতে ডাঁটা ও ফল পচে গিয়ে তাতে সাদা ছত্রাকের আস্তরণ ফুটে উঠে। দেখা যায় মাটি সংলগ্ন পটলের ফলে পচন বেশি। রোগাক্রান্ত ফল ও ডাঁটা সংগ্রহ করে তা নষ্ট করে ফেলা দরকার। দেখা গেছে নিকাশি বন্দোবস্তুকৃত জমিতে হাজা-রোগের আক্রমণ কম, কম মাচার পটলে, কম কচুরিপানার মালচিং ব্যবহার করলে জমিতে বিঘা প্রতি ১ কেজি পরিমাণ ট্রাইকোডারমা জীবাণু সার জৈবসারের সঙ্গে মিশিয়ে কয়েকদিন বাদে প্রয়োগ করতে হবে। হাজারোগ দমনে লিটার প্রতি জলে ৩-৪ গ্রাম কপার অক্সিক্লোরাইড অথবা ২.৫ গ্রাম মেটালাক্সিল – ম্যানকোজেব স্প্রে করলে কাজ হবে।
লঙ্কা : শ্রাবণ মাসে লঙ্কায় টুইগ-ব্লাইট বা ডগা-ধ্বসা লাগে। এতে সেই অংশ পচে বিবর্ণ হয়ে শুকিয়ে যায়। এই রোগ দেখা গেলে ডগা অংশ ঘেঁটে দিন এবং তারপর প্রতি লিটার জলে ৪ গ্রাম হিসাবে কপার অক্সিক্লোরাইড স্প্রে করুন। স্প্রে করতে পারেন ট্রাইফ্লক্সিবিন টেবুকোনাজোলের মিশ্রণ (প্রতি ১০ লিটারে ৬ গ্রাম)।
শিমঃ শ্রাবণ মাস থেকেই শিমের বীজ লাগানো শুরু হয়ে যাবে, চলবে অগ্রহায়ণ পর্যন্ত। শিমের উন্নত জাতগুলি হল পুসা অর্লি, পুসা প্রলিফিক, আলতাপাটি, মাখন শিম, পুসা সদাবাহার, পুসা মৌসুমি, নববাহার, স্বর্ণ উৎকৃষ্ট প্রভৃতি। প্রতি বিঘায় ২০ কুইন্টাল ফলন পাওয়া যাবে।
ড. কল্যাণ চক্রবর্তী